শী‘আদের শাজরাহ নামার (সিলসিলা) সঙ্গে তথাকথিত সুন্নিদের চার তরীকার শাজরাহ্‌ নামার (সিলসিলার) অপূর্ব মিল।

শী‘আদের শাজরাহ নামার (সিলসিলা) সঙ্গে তথাকথিত সুন্নিদের চার তরীকার শাজরাহ্‌ নামার (সিলসিলার) অপূর্ব মিল।
শীয়াদের মাযহাব বা তরীকার সঙ্গে তথাকথিত সুন্নিদের তরীকত পন্থি মারিফাতি পীরদের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে মিল দেখা যায়। শী‘আরা যেমন- বিশ্বাস (‘আক্বীদাহ্) রাখে, আল্লাহর রসূল (ﷺ)এর মাধ্যমে তাদের দ্বাদশ ইমাম অর্থাৎ- শেষ ইমাম মাহাদী পর্যন্ত পৌঁছেছে। অনুরূপ তরীকতপন্থী পীরেরাও বিশ্বাস পোষণ করে, রসূল (ﷺ) কিছু বাতেনী ইলম (জ্ঞান) আলী (রাযিঃ)-এর মাধ্যম হয়ে পীরদের নিকট পৌঁছেছে। যে ইলম শরীআতের (কুরআন ও সহীহ হাদীসের জ্ঞানে জ্ঞানী আলীমগণ জানে না, সূফীদের ভাষায় তারা হল খোশক আলেমÑ (তা’লিমুদ্দীন ২য় খণ্ড ৮৮)।

যেমন উক্ত কিতাবে থানবী সাহেব লিখিয়াছেন : (সূফীরা) লোকেরা আর একটি মিথ্যা কথা (হাদীস বলে) তৈয়ার করে রেখেছে যে, নাবীয়ে কারীম (ﷺ) শবে মি’রাজে যে কয়েক সহস্র কালাম এনে ছিলেন, তা গুপ্তভাবে আলীকে শিক্ষা দিয়েছেন, অন্য কাহারো নিকট প্রকাশ করেননি। তাই তাসাওফ আকারে সিনা-ব-সিনা চলিয়া আসছে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, সমস্ত কুরআন হাদীসের খেলাফÑ (তা’লিমুদ্দীন ২য় খণ্ড ১৮৫ পৃঃ)।

এজন্যই দেখা যায় শীয়াদের সিলসিলার শাজরাহ নামার মতই তরীকত পন্থী সূফীদের চার তরীকার সিলসিলার সাজরাহনামা ‘আলী (রাযিঃ) হয়ে রসূল (ﷺ) পর্যন্ত পৌঁছেছে। তরীকতপন্থী মারিফতিদের কোন একটি সাজরা আবূ বকর ‘উসমান (রাযিঃ) পর্যন্ত পৌঁছায়নি, কারণ শীয়ারা পাঁচতন বা পাক পঞ্চাতন অর্থাৎ- (১) মুহাম্মাদ (ﷺ) (২) আলী (রাযিঃ), (৩) ফাতিমাহ (রাযিঃ) (৪) হাসান (রাযিঃ) (৫) হুসাইন (রাযিঃ) ছাড়া আর কাউকে মানে না। তাদের ‘আক্বীদাহ্ (বিশ্বাস) হলো রসূল (ﷺ)এর ইন্তিকালের পরে (পাঁচজন ছাড়া) সকল সাহাবী মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল। তাদের উল্লেখিত ‘আক্বীদাহ্ তারা কবিতার মাধ্যমে তারা এভাবে উল্লেখ করে থাকে।

আমার সহায় আছেন পাঁচজন, তাদের দয়ায় আমি নিভাই মহামারীর দাব-দাহ। (তাঁরা হচ্ছেন), মুযতা’ফা, মুরতাদা, তাঁদের পুত্রদ্বয় আর ফাতিমাহ্। (প্রকৃত ওলী আওলিয়া কে? ৪৪ পৃঃ)

অনুরূপ ‘আক্বীদাহ্ আহলে বায়তের সম্পর্কে একটি আরবী কবিতায় বলা হয়েছে : لِنى خسه اطفى نهاحد ..... অর্থাৎ- (নাসারাদের তিন প্রভু থাকলেও) আমার আছে পাঁচজন। কঠিন বিপদ ও মুসীবতের সময় তাদের নাম নিয়ে বিপদ দূর করা হয়, রোগ আরোগ্য হয়। এ পাঁচজন হচ্ছে আল মুস্তাফা মুহাম্মাদ (ﷺ) আলী মুস্তাফা (রাযিঃ) তার দু পুত্র হাসান ও হুসাইন এবং ফাতিমাহ্। (ধর্মে বাড়াবাড়ি ২৮ পৃঃ)

এবার লক্ষ্য করুন, তাদের সিলসিলায় সাজরা নামার মিল কিরূপ? শী‘আ ইমামদের সিলসিলার ধারা।

১। আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাযিঃ)
২। হাসান ইবনু ‘আলী (রাযিঃ)
৩। হুসাইন ইবনু ‘আলী (রাযিঃ)
৪। জয়নুল আবেদন (রাযিঃ)
৫। মুহাম্মাদ আল বাকের (রহঃ)
৬। জা‘ফার আস সাদিক (রহঃ)
৭। মূসা আল কাজিম (রহঃ)
৮। ‘আলী আর রিজা (রহঃ)
৯। মুহাম্মাদ আত্ তকী (রহঃ)
১০। ‘আলী আন্ নকী (রহঃ)
১১। হাসান আল আসকারী (রহঃ)
১২। মুহাম্মাদ আল মুনতাজার (রহঃ)। (প্রাগুক্ত- ২৬ পৃঃ)

চিশতিয়া সাবেরিয়া তরীকার সিলসিলার সাজরানামার ধারা।

১। চরমুনার পীর মোহাম্মাদ ইসহাক
২। ক্বারী ইব্রাহীম সাহেব
৩। কুতুবে আলম রশীদ আহ্মাদ গাঙ্গুহী
৪। হাজী এমদাদুল্লাহ মোহাজেরে মক্বী.....
অন্যান্য হয়ে হাসান বসরী হয়ে ‘আলী (রাযিঃ) পর্যন্ত। (ভেদে মারিফাত বা ইয়াদে খুদা- ৬২-৬৩ পৃঃ দ্রষ্টব্য। থানবী তা’লিমুদ্দীন- ২য় খণ্ড : ১৯৬-১৯৭ পৃঃ)

উল্লেখ্য যে, আমাদের দেশের সূফী বা পীরেরা বলে থাকে ও তাদের সিলসিলার সাজরানামায় যেমন উল্লেখ করেছে যে, হাসান বসরী চতুর্থ খলীফা ‘আলী (রাযিঃ)-এর সঙ্গ পেয়েছিলেন। কিন্তু সকল উলামাগণই এ বিষয়ে একমত যে, তিনি আলীর সাক্ষাৎই পাননি এবং তাঁর থেকে কিছুই অর্জনই করেননি। তিনি তার ছাত্র আহনাফ ইবনু কাইস ও কাইস ইবনু মু‘আয থেকে (বিদ্যান) শিক্ষা অর্জন করেছেন। (সাজসুউ ফাতাওয়া ইবনু তাইমিয়াহ- ১১ খণ্ড, ৫৭৮-৫৮২ পৃঃ গৃহীত দ্বীনে ইসলামের তাবলীগ- ৬৪ পৃঃ)