মহিলাদের নামাজ নিয়ে কিছু কথা


সালাত আদায় করার জন্য নারী পুরুষ কারোর জন্য স্বতন্ত্র নিয়ম করা হয়নি। জিবরাঈল (আঃ) আল্লাহর নির্দেশক্রমে দুই দফায় রাসূল (সঃ) কে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের নিয়ম পদ্ধতি ইমামতি করে বাস্তবভাবে শিখিয়ে গেছেন। এসময় জিবরাঈল (আঃ) নারীদের সালাতের জন্য আলাদা কোন নিয়ম পদ্ধতির বর্ণনা দেন নাই। রাসূল (সঃ) বহু সাহাবীদের উপস্থিতিতে বাস্তবভাবে রুকু, সাজদাহ ইত্যাদি করে দেখিয়ে সালাত শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেনঃ “তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখ ঠিক সেভাবেই সালাত আদায় কর”।
যেহেতু আল্লাহ বা রাসূল (সঃ) যে কাজকে নারী পুরুষের জন্য নির্দিষ্ট করে পার্থক্য করার বর্ণনা বা নির্দেশ দেননি সেহেতু সে কাজ নারী পুরুষ সকলের জন্যই সমান ভাবে অনুসরণ ও অনু করণযোগ্য। সালাতের ব্যপারে এ সত্য পালনীয়। তবে মহিলাদের সালাত আদায়ে যে পার্থক্যগুলি দেখা যায় সেগুলি বাহ্যিক এবং সালাতের বাইরে বিবেচিত। এগুলি নিন্মরূপঃ
১) সালাতের জন্য পুরুষ আযান দিবে কিন্তু মহিলা আযান দিবে না।
২) সালাতে মহিলা মাথা ঢেকে রাখবে; কিন্তু পুরুষের না ঢাকলেও সালাত হয়ে যাবে।
৩) মহিলাদের পায়ের গোড়ালী ঢেকে রাখতে হবে তা নাহলে সালাত সিদ্ধ হবে না। অপরদিকে পুরুষদের পায়ের গোড়ালী খোলা রাখতে হবে।
৪) কোন মহিলা পুরুষদের ইমামতি করতে পারবে না; কিন্তু পুরুষরা নারী পুরুষ উভয়েরই ইমামতি করতে পারবে।
৫) জামাআতে সর্বাবস্থায় মহিলাদের কাতার পুরুষদের কাতারের পিছনে হবে।
৬) পুরুষ ইমামতি করলে কাতারের আগে একাকী দাঁড়াতে হবে (যদি ওজর না থাকে)। কিন্তু মহিলা ইমাম হলে তাকে মহিলাদের কাতারের মাঝখানে দাঁড়াতে হবে। বর্ণিত আছে যে, আয়েশা (রাঃ) এবং উম্মে সালমা (রাঃ) যখন মেয়েদের ফরয সালাত অথবা তারাবীহ এর সালাতে জামা’আতে ইমামতি করতেন তখন তাদের মাঝখানে দাঁড়াতেন।
৭) স্বরব কির’আত বিশিষ্ট সালাতে স্বরবে কির’আত পড়া সুন্নত।
মহিলা ইমাম ঘরে সালাত পড়ালে পুরুষদের মত স্বরবে কিরাআত পড়বে যাতে মহিলা মুক্তাদীরা শনতে পারে। তবে যদি কোন অমহরম (যে পুরুষকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ নয়) পুরুষেরা মহিলা কন্ঠ শোনার আশঙ্কা থাকে, তখন মহিলা ইমাম নীরবে কিরআত পড়বে। একদা আয়েশা (রাঃ) মাগরিবের সালাতে মেয়েদের ইমামতি করেন। তখন তিনি তাদের মাঝখানে দাঁড়ান এবং স্বরবে কিরআত পড়েন। (আইনী তুহফা সালাতে মোস্তফা, ৩১ পৃঃ)
৮) যদি ইমাম ভুল করে তাহলে মহিলাদেরকে হাত তালি দিয়ি বা উরুর উপর হাত মেরে সংকেত দিতে হবে। আর পুরুষেরা উচ্চঃস্বরে সুবহানল্লাহ বলবে।
৯) তাকবীরে তাহরীমার সময় পুরুষদের চাদর বা কম্বল ইত্যাদি হতে হাত বের করে কাঁধ বা কান পর্যন্ত উঠাতে হবে (অবশ্য ওজর না থাকলে)। কিন্তু মহিলাদের চাদরের বা ওড়নার ভিতরে হাত রেখেই কাঁধ বা কান পর্যন্ত হাত উঠাতে হবে; তাকবীরের সময়ও এভাবে করতে হবে।
১০) মসজিদ হতে মহিলারা সালাত শেষ হলেই বের হয়ে যাবে। আর পুরুষরা পরে বের হবে।
উপরোক্ত বাহ্যিক করনীয় বিষয়গুলো ব্যতীত অন্য কোন পার্থক্য পুরুষ মহিলাদের সালাতে নেই। পুরুষ মহিলাদের সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে অর্থাৎ তাকবীরে তাহরীমা, হাত বাঁধা, রুকু, সিজদাহ, উঠা-বসা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য নেই। মহিলাদের সালাত আদায়ে আমাদের দেশে যে পার্থক্য প্রচলিত আছে তা সহীহ হাদীস ভিত্তিক তো নয়ই, দলীল ভিত্তিকও নয় বরং কতকগুলো যঈফ নিতান্ত দুর্বল বাতিল হাদীস এবং অসমর্থিত ও মনগড়া লেখা বই হতে প্রচলিত হয়েছে।
রসূলুল্লাহ (সঃ) এর নামাজ (মোঃ নাসেরউদ্দীন আলবাণী)
ইবরাহীম নাখঈ এইমত পোষন করেন, তিনি বলেছেনঃ পুরুষরা নামাযে যা করে মহিলারাও তাই করবে। (ইবনে শায়বাহ- সনদ সহীহ)
বোখারী আত্ তারীখ আস্ সাগীর গ্রন্থের ৯৫ পৃষ্ঠায় সহীহ সনদ সহকারে প্রখ্যাত মহিলা সাহাবী উম্মুদ্ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘তিনি নামাযে পুরুষের মত বসতেন এবং তিনি ছিলেন ফকীহ্ ।’ অর্থাৎ ফিক্হ সম্পর্কিত জ্ঞনের অধিকারীণী।
আবু দাউদ ‘আল-মারাসীল’ গ্রন্থে ইয়াযীদ বিন আবী হাবীব থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘সাজদায় পাঁজরের সাথে হাত মিলিয়ে রাখবে এবং এ ক্ষেত্রে তারা পুরুষদের মত নয়’ এটি মোরসাল হাদীস এবং এটি সহীহ নয়।
*** মুরসাল হাদীসঃ যে হাদীসের সানাদের শেষ ভাগে বর্ণনাকরী বাদ পড়েছে অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সঃ) ও তাবিঈর মাঝে ঘাটতি পড়ে গেছে তাকে মুরসাল বলা হয়।
মুরসাল হাদীসকে প্রত্যাখ্যাত শ্রেণীর মধ্যে উল্লেখ করার কারণ হলো উহা বর্ণনাকারীর অবস্থা সম্পর্কে না জানা। কেননা, উক্ত উহ্য ব্যক্তি সাহাবীও হতে পারেন, তাবিঈও হতে পারেন। দ্বিতীয় অবস্থায় তিনি দুর্বলও হতে পারেন, আবার নির্ভরযোগ্যও হতে পারেন ইত্যাদি।
ইমাম আবূ হানীফা (রঃ) ও ইমাম মারিক (রঃ) মুরসাল হাদীস সন্দেহাতীতভাবে গ্রহণের মত দিয়েছেন। পক্ষান্তরে ইমাম শাফিঈ ও ইমাম আহমাদ (রঃ) তা অগ্রহণযোগ্য বলেছেন। ***(সুনান আবূ দাউদ, ১ম খন্ড, পৃঃ ৩)
হাত কোথায় বাঁধতে হবেঃ (মহিলাদের নামাজ, মুহাম্মদ জহুল হক্ব (জায়েদ)
সহীহ হাদীস অনুযায়ী হাত বুকে বাঁধতে হবে। নারী হোক বা পুরুষ। ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রাঃ) বলেন, আমি নবী (সঃ) এর সাথে নামায পড়েছি। তিনি তাঁর ডান হাতটি বাম হাতের উপর রেখে বুকের উপর হাত বাঁধেন। (ইবনে খুযাইমাহ ১ম খন্ড, ২৪৩পৃঃ, বুলুগুল মারাম ২০ পৃঃ)
এ ছাড়া বুকের উপর হাত বাঁধার চারটি হাদীস পাওয়া যায়। হানাফী মাযহাবের মাহাবিদ্বান আল্লামা আইনী বলেন, নাভীর নীচে হাত বাঁধার হাদীসটির সনদ রাসূলুল্লাহ (সঃ) পর্যন্ত বিশুদ্ধ নয়। এটা আলী (রাঃ) এর উক্তি এবং আলী থেকে ঐ বর্ণনার সুত্রের মধ্যেও গোলমাল রয়েছে। কারন ঐ সনদে আব্দুর রহমান ইবনে ইসহাক্ক কুফী রয়েছে, যাকে ইমাম আহমদ বলেন, লোকটি একেবারে বাজে, এবং অস্বীকৃত। (ওমদাতুল ক্বরী, ২৭৯পৃঃ)
হেদায়ার ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইবনুল হুমাম হানাফী রহিমাহুল্লাহ বলেন, ইমাম নবভী বলেছেন, আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হাদীসটি যঈফ হবার ব্যাপারে সবাই একমত। (ফতহুল ক্বদীল ১ম খন্ড ১১৭পৃৎ)
ঐ হেদায়ারই আরেক ব্যাখ্যাকারী আল্লামা আব্দুল হাঈ লখনভী হানাফী বলেন, ‘ঐ হাদীসটি দোষে পরিপূর্ণ যা যঈফ হবার কারণে ওয়ায়েল ইবনে হুজর বর্ণিত (বুকে হাত বাঁধা) হাদীসের মোকাবেলায় প্রত্যাখ্যানযোগ্য। (হেদায়া ১/৮৬পৃঃ)
যে সমস্ত ভাইয়েরা নাভীর নীচে হাত বাঁধেন এবং বাঁধতে নির্দেশ দেন তাদের কাছে হেদায়ার মূল্য কতটুকু বা তারা হেদায়াকে কতটুকু সম্মান করেন। হেদায়ার প্রথমেই লেখা আছে, ‘নিশ্চয়ই হেদায়া কুরআনের মত।’
নামাযে দাঁড়িয়ে নাভীর উপরে হাত বাঁধার আরো কিছু দলিলঃ মিশকাতঃ মাওলানা নূর মোহাম্মদ আযমী- ২য় খন্ড, হাঃ নং- ৭৪১, ৭৪২, মিশকাত (মাদরাসার পাঠ্য) ঃ ২য় খন্ড, হাঃ নং- ৭৪১, ৭৪২, বাংলা অনুবাদঃ বুখারী শরীফ (মাওলানা আজীজুল হক)ঃ ১ম খন্ড, হাঃ নং- ৪৩৫, সহীহ আল বুখারী (ইঃ ফাঃ)ঃ ২য় খন্ড, হাঃ নং- ৭০২, মুসলিম শরীফ (ইঃ ফাঃ)ঃ ২য় খন্ড, হাঃ নং- ৮৫১, আবূ দাউদ শরীফ (ইঃ ফাঃ)ঃ ১ম খন্ড, হাঃ নং- ৭৫৯, তিরমিযী শরীফ (ইঃ ফাঃ)ঃ ১ম খন্ড, হাঃ নং- ২৫২, জামে তিরমিযী (মাওলানা আব্দু নূর সালাফী)ঃ ১ম খন্ড, হাঃ নং- ২৪৪)
রুকুঃ
রুকুতে ঘাড়, পিঠ ও কোমর সমান্তরাল রাখতে হবে, মাথা উচুঁতে রাখবেন না নীচুও রাখবেন না বরং মাঝামাঝি রাখবেন, রুকু সিজদায় পিঠকে সোজা সমান্তরাল রাখা জরুরী। আবু মাসউদ (রাঃ) বর্ণিত রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি নামাযের রুকু ও সিজদার সময় পিঠকে সোজা (সমান্তরাল) রাখবে না তার নামায হবে না। (সুনানে ইবনে মাযাহ ১/২৬৩ পৃঃ হাঃ নং- ৭১৭)
যখন রুকু করবেন তখন দু’হাতের দ্বারা সোজা পায়ের হাঁটুদ্বয়কে হাতের মুঠোয় খোলা আঙ্গুল দিয়ে ধারণ করতে হবে, সম্পূর্ণ হাতকে তীরের মত সোজা রাখতে হবে এবং হাতকে অন্য অংশে লাগতে দেয়া যাবে না। এ হলো রুকূর পূর্ণতা।
*** বেহেশতী জেওর ৯ম মুদ্রণ ২য় খন্ড পুরুষ ও স্ত্রীলোকের নামাযের পার্থক্য অনুচ্ছেদে ১৫৪ পৃষ্ঠায় লেখা….স্ত্রীলোক (রুকু অবস্থায়) কুনুই পাঁজরের সঙ্গে মিলাইয়া রাখিবে- মারাকী। এক সম্পর্কে পরে আরও বর্ণনা আছে।
**** বেহেশতী জেওর যে মারকী গ্রন্থের উদ্বৃতি দিয়েছে, এ মারাকী কিতাবখানা নিতান্তই নিম্নমানের বই। পথভ্রষ্ট লেখকের- বা ব্যক্তি বিশেষের স্বেচ্ছা উক্তি বিশিষ্ট লেখা এ বই। এ বই কোন দলীল গ্রন্থ হিসাবে গণ্য করাও ঠিক নয়। স্ত্রী লোক (রুকু অবস্থায় কনুই পাঁজরের সাথে মিলায়ে রাখা) এ নিয়ম সুন্নাত পরিপন্থী। নামাযের সময় রুকু অবস্থায় কুনুই পাঁজরের সাথে মিলায়ে রাখা মাকরূহ, রসূলুল্লাহ (সৎ) এর নির্দেশ বহির্ভূত কাজ বিধায় বিদায়াতের পর্যায়ভূক্ত।
সিজদাহঃ
আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, ‘ রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ সিজদা করবে তখন এমনভাবে বসবে না যেভাবে উট বেস, বরং দু’হাতকে হাঁটুর পূর্বে রাখবে। (আবু দাউদ ১ম খন্ড, হাদীস নং- ৮৪০)
উম্মুল মু’মিনিন মায়মুনা (রাঃ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সঃ) যখন সিজদাহ করতেন তখন কোন মেষ শাবক ইচ্ছা করলে তার দু’হাতের মধ্যে দিয়ে চলে যেতে পারত। (বোখারী, মুসলিম ২য় খন্ড, হাঃ নং- ৯৮৮, ইঃ ফাঃ)
সিজদায় পা দ্বয় খাড়া রাখা, পায়ের গোড়ালী মিলিয়ে রাখা এবং আঙ্গুলগুলি কিবলামুখী করে মুড়িয়ে রাখা সুন্নত।
উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সঃ) একদা আমার সাথে বিছানায় ছিলেন। রাত্রে তাঁকে বিছানায় না পেয়ে হাত দিয়ে তালাশ করছিলাম। তখন আমার হাত রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর পায়ের সাথে লাগলো। তিনি সিজদারত ছিলেন এং পা দু’খানা খাড়া ছিল। (মুসলিম, হাঃ নং- ৯৮৮)
একদা এক বেদুঈন মহিলা উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ) সাক্ষাত করতে এসে তাঁকে না পেয়ে ফেরার পথে উম্মুল মু’মিনীন হাফসা (রাঃ) এর কাছে গিয়ে মহিলাদের নামায় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেনঃ নামায আদায়ের নিয়ম পদ্ধতি ব্যাপারে মহিলাদের পৃথক কোন নিয়মের কথা আমাদিগকে বলা হতো না তবে রুকুতে, রুকু বাদ দাঁড়িয়ু দু’সিজদার মাঝে বসে একটু সময় অবস্থান করতে বলা হতো। নামাযে তাড়াহুড়া না করে ধীর স্থীর শান্তভাবে আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ), হাফসা বিনতে উমার (রাঃ), মায়মুনা (রাঃ) ও দ্বীন সম্পর্কে বিশেষ উম্মু দারদা (রাঃ) (বুখারী ভাষ্যানুযায়ী) এরা পুরুষদের মত নামায আদায় করতেন সুন্নাতী নির্দেশ মোতাবেক। অতএব এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে, মহিলাদের নামাযও পুরুষদের মতই আদায় করতে হবে।
মক্কা মদীনায় মসজিদুল হারাম ও মসজিদুন্নবীতেও বহুবার বিশেষ খেয়াল করে দেখেছি। আরাফাতের ময়দানেও লক্ষ্য করেছি আরবী মহিলারা পুরুষের মতই স্বাভাবিকভাবে নামায আদায় করে থকেন, আমাদের দেশের মহিলাদের মত অদ্ভুত ভঙ্গিতে নামায পড়েন না। মহিলাদেরকে অবমূল্যায়ন করা আমার উদ্দেশ্য নয়, যদিও আমাদের অনেক দাদী, নানী, মা, খালাগণ অদ্ভূত ভঙ্গিতে নামায পড়েন বা কখনও তা সহীস সুন্নাত না জেনে শিক্ষা দিয়েছেন। ২/৪ খানা নিতান্ত নিম্ন মানের বই পড়ে ও ডজন খানেক ফার্সী বয়ান কন্ঠস্থ করে সমাজের কোন কোন লোক জবরদস্ত আলেম সেজেছেন, মৌলভী সাহেব বলে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন তাদের সুন্নাত পরিপন্থী নামায শিক্ষা দেয়ার ধারণাটাই ত্রুটিযুক্ত।
এমন নিম্নমানের একখানা কিতাব হলো মারাকী। বহু লোক এ অসমর্থিত বই ‘মারাকীর’ উদ্বৃতি দিয়ে বেশ কিছু অনাচার বা সুন্নাত পরিপন্থী ইবাদত, আমল সংক্রান্ত বিদা’য়াত সমাজে প্রচলন ঘটিয়েছে। বেহেশতী জেওর নবম শুদ্রণ ২য় খন্ড ১৫৪ পৃষ্ঠায় উক্ত মারাকী বইয়ের উদ্বৃতি দিয়ে অনুবাদক লিখেছেন- (নামাযের সময় মহিলারা) [রুকুর অবস্থায় স্ত্রীলোক কনুই পাঁজরের সঙ্গে মিলাইয়া রাখিবে- সিজদায় স্ত্রীলোক পেট রানের সঙ্গে এবং বাজু বগলের সঙ্গে মিলাইয়া রাখিবে, কনুই মাটির সঙ্গে মিলাইয়া রাখিবে, উভয় পায়ের পাতা ডান দিকে বাহির করিয়া মাটিতে বিছাইয়া রাখিবে। বসার সময় স্ত্রীলোক-উভয় পায়ের পাতা ডান দিকে বাহির করিয়া দিবে এবং ডান রান বাম রানের উপর এবং ডান নলা বাম নলার উপর রাখিবে।']
বেহেশতী জেওরে বর্ণিত নিয়মে মহিলাদের নামায পড়া বিষয়ে বেহেশতী জেওর এর লেখকের এবং তা সমর্থনকারী মোল্লাদের চ্যালেঞ্জ করে বলছি- যদি তারা (তুতীয় বন্ধনীর মধ্যে মধ্যস্ত কমা অনুযায়ী) মহিলাদের এ অদ্ভূত নামায পড়ার সহীহ হাদীস দেখাতে পারেন তা হলে যে কোন শাস্তি নির্বিবাদে মেনে নিব।
এমন কোন সহীহ হাদীস কোন সাহাবী বর্ণনা করেন নাই য নিজে হাদীস অনুযায়ী আমল বা কাজ করেন নাই। যেরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন তদ্রূপই আমল করেছেন। উম্মুল মু’মিনীন মায়মুনা (রঃ) ও আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত সহীহ হাদীস কয়টি একটু নিগুঢ়ভাবে চিন্তা করলে এ সত্য প্রতিভাত হবে যে– মহিলাদের নামাযের সিজদার সময় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অবস্থান পুরুষের সিজদাহর মতই- মহিলা-পুরুষদের সিজদায় কোন পার্থক্য করা হয় নাই। উক্ত হাদীস পুরুষ মহিলা উভয়ের জন্য সমভাবে অনুসরণীয়।
মহিলাদের নিতম্বের উপর বসার কথা কোন সহীহ হাদীসে নাই, বরং এ সম্পর্কিত একটি হাদীস আছে যাহা নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
হযরত আবু হুমাইদ সায়েদী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর একদল সাহাবীর মধ্যে বলিলেন, আমি আপনাদের অপেক্ষা রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর নামায অধিক স্মরণ রাখিয়াছি। আমি তাঁহাকে দেখিয়াছি- তিনি যখন তাকবীরে তাহ্ রীমা বলিতেন, দুই হাত দুই কাঁধের বরাবর উঠাইতেন এবং যখন রুকু করিতেন দুই হাত দ্বারা দুই হাঁটুতে শক্ত করিয়া ধরিতেন এবং পিঠকে নত করিয়া (নিতম্ব ও ঘাড় বরাবর সোজা) রাখিতেন, আর যখন মাথা উঠাইতেন ঠিক সোজা হইয়া দাঁড়াতেন- যাহাতে (পিঠের) প্রত্যেক গিঁট আপন স্থানে পৌঁছাইয়া যাইত। অতঃপর যখন সাজদা করিতেন, রাখিতেন দুই হাত জমিনে না বিছাইয়া ও পেটের সাথে না মিশাইয়া এবং দুই পায়ের আঙ্গুলীসমূহের মাথাকে রাখিতেন কেবলামূখী করিয়া। অতঃপর যখন দুই রাকআতের পরে বসিতেন–বসিতেন নিজের বাম পায়ের উপর এবং খাড়া রাখিতেন ডান পা। তৎপর যখন শেষ রাকআতে বসিতেন বাড়াইয়া দিতেন বাম পা (ডান দিকে) এবং খাড়া রাখিতেন অপর পা, আর বসিতেন নিতম্বের উপরে। (বুখারী)
সুতরাং এই হাদীস বলছে, শেষ বৈঠকে নিতম্বের উপর বসার কথা। এখানে পুরুষ মহিলা উল্লেখ করা নাই সতরাং ইহা সকলেরই আমল যোগ্য।