পুত্রহীন পিতার সম্পদে কন্যাদের অধিকার

পুত্রহীন পিতার সম্পদে কন্যাদের অধিকার 


শুনা যাচ্ছে বর্তমান সরকার নারীদের প্রতি ইনসাফের অজুহাত দেখিয়ে কুরআন ও হাদীছে নির্ধারিত মিরাছী আইন পরিবর্তন করে মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদে ছেলের অবর্তমানে মেয়েদেরকে পূর্ণ সম্পদের অধিকারী করতে যাচ্ছে। ইসলাম সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণা সম্পন্ন কতিপয় চিন্তাবিদও দেশীয় আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের অজুহাত দেখিয়ে এবং তা গ্রহণযোগ্য করে তোলার পক্ষে নানা যুক্তি উপস্থাপন করে কুরআনের অ পরিবর্তনযোগ্য আইনকে পরিবর্তনের পক্ষেই সমর্থন দিচ্ছেন। 
তাই সকল মুসলিম ভাই বোনদের জন্য সতর্কতা স্বরূপ এই প্রবন্ধটি লিখলাম। কারণ এই বিষয়টি ইলমে ফারায়েজের সাথে সম্পৃক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং অন্যান্য মাসআলার ন্যায় এখানে আলেমদের মাঝে তেমন একটা মতভেদ নেই। কারণ ফারায়েজের মাসআলাগুলো সরাসরি কুরআন ও হাদীছ দ্বারা নির্ধারিত। তবে কতিপয় ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায়। তাও আবার বিজ্ঞ সাহাবীদের ইজতেহাদ দ্বারা বিষয়টি খোলাসা করে দেয়া হয়েছে। আমাদের উচিত হবে কুরআনের সেই অলঙ্ঘনীয় বিধানকে মনে প্রাণে মেনে নেওয়া। কারণ আল্লাহর বিধান মেনে নেওয়ার মধ্যেই আমাদের জন্য উভয় জগতের কল্যাণ রয়েছে। সেই সাথে আলেমদের উচিত ইলমে ফারায়েজের এই মাসআলাটি সম্পর্কে সকলকে সতর্ক করা। কারণ এ সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তিরা যদি কথা বলে তাহলে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়বে এবং সমাজ থেকে ইলমে ফারায়েজের জ্ঞান বিলুপ্ত হবে। ইলমে ফারায়েজ শেখার প্রতি উৎসাহের অংশ হিসেবে আমি সম্মানিত পাঠকদের সামনে এই সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধটি পেশ করছি। এতে আমি মুসলিম উম্মাহর নিকট গ্রহণযোগ্য আলেমদের কয়েকটি ফতোয়াও উল্লেখ করেছি। মূল কথা হচ্ছে কন্যাগণ কখনই মৃতের সমুদয় সম্পদের অধিকারী হতে পারে না। যদিও তাদের সংখ্যা একাধিক হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, কতিপয় গবেষক ও নামধারী ইসলামী চিন্তাবিদ সরকারের সর্বশেষ এই ইসলাম বিরোধী আইনটির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করতে গিয়ে নারীদের প্রতি এত বেশী মায়া ও দয়া দেখানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছেন যে, তাদের অবস্থা দেখে মনে হয় আল্লাহর এই দুর্বল সৃষ্টির প্রতি তারাই আল্লাহর চেয়ে অধিক দয়াবান হিসেবে প্রকাশিত হতে চাচ্ছেন। আল্লাহ নারী ও পুরুষ উভয়ের সৃষ্টিকারী, রিজিক দাতা। কাকে কত সম্পদ দিলে সে লাভবান হবে বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা তিনিই অধিক অবগত আছেন। সুতরাং এ ব্যাপারে স্বল্প জ্ঞানের অধিকারী হয়ে আমাদের জন্য আল্লাহর সেই কল্যাণকর আইন ও বণ্টন ব্যবস্থায় হাত দেয়ার চেষ্টা করা বা আল্লাহর নির্ধারিত হক ও অংশ থেকে কাউকে বঞ্চিত করা মারাত্মক অন্যায়। 
মূলত: আমাদের সমাজের অধিকাংশ নাগরিকই জালেম। তাই শাস্তি স্বরূপ তাদের উপর জালেম শাসক চাপিয়ে দেয়া হয়। যে সমস্ত পিতা ছেলে ও মেয়ে উভয় প্রকার সন্তান রেখে যায় সে ক্ষেত্রে ভাইয়েরা তাদের বোনদের উপর জুলুম করে থাকে এবং বোনদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে দেয়। এটি একটি বিরাট জুলুম ও অবিচার। অপর পক্ষে যে সমস্ত পিতাগণ শুধু কন্যা সন্তানের পিতা তারা জীবিত থাকতেই কন্যাদের প্রতি অতি আবেগী ও দয়াবান হয়ে এই আশঙ্কায় সমস্ত সম্পদ কন্যাদেরকেই লিখে দিয়ে যায় যে, মরার পরে ভাইয়েরা বা ভাতিজারা কন্যাদের সম্পদে ভাগ বসাবে। এটিও একটি বিরাট অপরাধ ও আল্লাহর আইনে হস্তক্ষেপের শামিল। আসলে আল্লাহর নির্ধারিত বিধান ও ফয়সালায় কারও প্রতি জুলুম করা হয় নি। এখানে প্রত্যেক হকদারকে তার হক পুরোপুরি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। আল্লাহর বিধান মেনে নেয়ার মধ্যেই রয়েছে মুসলিমদের ইহপরকালীন কল্যাণ। আসুন এ ব্যাপারে ইসলামে বর্ণিত ফয়সালা ও আলেমদের কয়েকটি সমাধানের প্রতি দৃষ্টি দেই। এই সমাধানগুলোর প্রতি দৃষ্টি দিলে মৃতের সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ইসলামী নীতিমালা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা অর্জিত হবে। ইনশা-আল্লাহ। 
প্রথম সমস্যা ও কুআনের সমাধান: 
প্রশ্ন: এক ব্যক্তি স্ত্রী, মাতা, দুই কন্যা এবং এক ভাই ও এক বোন রেখে মারা গেছে। এই মাসআলার সমাধান কি? 
উত্তর: আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূল, তাঁর পরিবার ও সাহাবীর উপর। 
উক্ত মাসআলায় সম্পদ বণ্টনের পদ্ধতি নিম্নরূপ: 
للزوجة الثمن فرضا، لقوله تعالى: (فَإِنْ كَانَ لَكُمْ وَلَدٌ فَلَهُنَّ الثُّمُنُ مِمَّا تَرَكْتُمْ 
স্ত্রীর অংশ যেহেতু নির্ধারিত তাই সে পাবে, ১/৮। আল্লাহ তায়ালা বলেন: তোমাদের যদি সন্তান থাকে তাহলে স্ত্রী পাবে তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পদের এক অষ্টমাংশ ১/৮। (সূরা নিসাঃ ১২) 
وللأم السدس فرضا أيضا، لقوله تعالى: (وَلِأَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِنْ كَانَ لَهُوَلَدٌ 
নির্ধারতি অংশ হিসেবে মাতা পাবে ১/৬। আল্লাহ তায়ালা বলেন: মৃতের যদি সন্তান থাকে তাহলে পিতা-মাতার প্রত্যেকেই পাবে ১/৬। 
وللبنتين الثلثان فرضا لقوله تعالى: (فَإِنْ كُنَّ نِسَاءً فَوْقَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ 
দুই কন্যার অংশও যেহেতু কুরআনে নির্ধারিত, তাই তারা উভয়ে মিলে পাবে ২/৩। আল্লাহ তায়ালা বলেন: কন্যাগণ যদি দুইয়ের অধিক হয়, তাহলে তারা সকলে মিলে মৃতরে সাম্পদের ২/৩ পাবে। (সূরা নিসাঃ ১১)। 
والباقي للأخ والأخت الشقيقين تعصيبا لقوله تعالى: (وَإِنْ كَانُوا إِخْوَةً رِجَالاً وَنِسَاءً فَلِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ 
আর যা বাকী থাকবে তা পাবে আসাবা হিসেবে সহোদর ভাই ও বোন। আল্লাহ তায়ালা বলেন: আর তারা যদি ভাই ও বোন হয় তাহলে একজন পুরুষ দুইজন মহিলার সমান হিসেবে সম্পদ ভাগ হবে। (সূরা নিসাঃ ১৭৬) 
মাসআলাটি বুঝতে নীচের ব্যাখ্যাটির প্রতি খেয়াল করুন: 
মনে করি মৃত ব্যক্তি উপরোক্ত আত্মীয় ও ২৪ টাকা রেখে মারা গেছেন। এই ক্ষেত্রে এই চব্বিশ টাকা যদি আমরা কুরআনের আলোকে ভাগ করি তাহলে দেখা যাচ্ছে, স্ত্রী পায় ৩ টাকা + মাতা পায় ৪ টাকা + দুই কন্যা মিলে পায় ১৬ টাকা + ভাই ও বোন মিলে পায় ১ টাকা = ২৪ টাকা। আল্লাহই ভাল জানেন। 
দ্বিতীয় সমস্যা ও সমাধান: 
আমি এখানে পাঠকদের জন্য এ ব্যাপারে আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি সমাধান শেয়ার করছি। 
প্রশ্ন: এক ব্যক্তি তার স্ত্রী, দুই কন্যা, এক সহোদর বোন এবং এক বৈমাত্রেয় বোন রেখে মারা গেছেন। এই ক্ষেত্রে মৃতের সম্পদ ভাগ করার পদ্ধতি কি? বা প্রত্যেকের অংশ কত? 
উত্তর: যেহেতু মৃতের সন্তান আছে, তাই স্ত্রী পাবে মূল স¤পদের ১/৮। দুই কন্যা মিলে পাবে ২/৩। যা বাকী থাকবে, তা আসাবা হিসেবে সহোদর বোন পাবে। কারণ তারা কন্যাদের সাথে আসাবায় পরিণত হয়েছে। বৈমাত্রেয় বোন বঞ্চিত হবে। এই বণ্টন তখনই প্রযোজ্য হবে যখন মৃতের আর কোন ওয়ারিশ না থাকবে। 
বণ্টনের ধরণ: 
মনে করি উপরোক্ত মাসআলায় মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া স¤পদের পরমিাণ ২৪ টাকা। স্ত্রী পাবে ৩ টাকা + দুই কন্যার প্রত্যেকেই পাবে ৮ টাকা + ৮ টাকা + সহোদর বোন পাবে ৫ টাকা = ২৪ টাকা। বৈমাত্রেয় বোন বঞ্চিত হবে। 
তৃতীয় সমস্যা ও সমাধান: 
প্রশ্ন: একজন লোক তার মাতা, এক কন্যা ও তিন সহোদর ভাই রেখে মারা গিয়েছে। তার স¤পদ কিভাবে ভাগ হবে? 
উত্তর: যে ব্যক্তি মা, এক কন্যা ও তিন ভাই রেখে মারা যাবে, তার যদি আর কোন ওয়ারিশ না থাকে তাহলে মা তার নির্ধারিত ১/৬ পাবে। কারণ তার রয়েছে সন্তান ও একদল ভাই। আল্লাহ তায়ালা বলেন: 
وَلِأَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا السُّدُسُ مِzمَّا تَرَكَ إِنْ كَانَ لَهُ وَلَد 
মৃতের যদি সন্তান থাকে তাহলে পিতা-মাতার প্রত্যেকেই পাবে ১/৬। (সূরা নিসাঃ ১১) 
কন্যা যেহেতু মাত্র একজন, সেই হিসেবে তার জন্য নির্ধারিত অংশ অর্ধেক ১/২। আল্লাহ তায়ালা বলেন: 
وَإِن كَانَتْ وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ 
আর কন্যা যদি মাত্র একজন হয় তাহলে সে পাবে ১/২। সূরা নিসাঃ ১১) 
বাকী সম্পদ ভাইদের মাঝে আসাবা হিসাবে সমান হারে ভাগ হবে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: 
ألحقوا الفرائض بأهلها فما بقي فهو لأولى رجل ذكر- متفق عليه তোমরা হকদারদের নিকট তাদের নির্ধারিত হক পৌঁছিয়ে দাও। আর যা বাকী থাকবে, তা মৃত ব্যক্তির অধিক নিকটবর্তী পুরুষের জন্য। (বুখারী ও মুসলিম) 
এই মাসআলায় মূল সম্পদ ১৮ ভাগে ভাগ হবে। মাতার জন্য ১/৬ বা ৩/১৮, কন্যার জন্য ১/২ বা ৯/১৮ এবং তিন ভাইয়ের প্রত্যেকের জন্য আসাবা হিসেব ২/১৮ + ২/১৮ + ২/১৮ = মোট ১৮/১৮। 
অতঃপর আমরা মুসলিম ভাইকে সাবধান করতে চাই যে, মৃত ব্যক্তির রেখে সম্পদ বণ্টনের বিষয়টি খুবই মারাত্মক এবং অত্যন্ত কঠিন। সুতরাং এতেই শেষ নয়। কোন মুফতীর নিকট পেশ কৃত প্রশ্নের উত্তরের উপরই নির্ভর করেই শেষ সমাধান করা ঠিক হবে না; বরং শরঈ কোর্টের কাছে তা পেশ করতে হবে। কোর্ট দেখবে ও তদন্ত করবে। সেখানে এমন ওয়ারিশ থাকতে পারে, যা অনুসন্ধান করা ব্যতীত খুঁজে পওয়া যাবে না। আর সেখানে মৃত ব্যক্তির ওসীয়ত থাকতে পারে, তার উপর মানুষের পাওনা থাকতে পারে এবং অন্যান্য হকও থাকতে পারে, যা ওয়ারিছদের জানে নেই। আর এটি জানা কথা যে, সম্পদে ওয়ারিছদের হকের আগে অন্যান্য হক পরিশোধ করাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সুতরাং শরঈ কোর্ট বর্তমান থাকতে তাতে না গিয়েই সম্পদ ভাগ করা ঠিক নয়। 
রচনায়: আব্দুল্লাহ শাহেদ আল মাদানী 

সম্পদ বন্টনে সবচেয়ে প্রচলিত যে কথা আছে সমাজে তা হল 

"নারীরা পুরুষের অর্ধেক পায়।" 

কিন্তু কয়টি ক্ষেত্রে? 

মিসরের জাতীয় ফতোয়া বোর্ড কর্তৃক প্রচারিত এক ফতোয়ায় মিরাছের সম্পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে নারী পুরুষের একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়েছে। তাতে যে বিস্ময়কর তথ্য এসেছে তার মাধ্যমে অনেকের চোখ খুলে যেতে পারে, বিবেক পেতে পারে নতুন খোরাক। ঐ পরিসংখ্যানে নারী কখন পুরুষের অর্ধেক পায়, আর কখন সমান পায়, আর কখন বেশি পায় তার বর্ণনা এসেছে অত্যন্ত পরিস্কারভাবে। লক্ষ্য করুন: 

• নারী কেবলমাত্র চার অবস্থায় পুরুষের অর্ধেক পায় : 
১. মেয়ে ও নাতনী(ছেলের মেয়ে) ছেলে ও নাতী (ছেলের ছেলে) থাকা অবস্থায়। 
২. ছেলে সন্তান ও স্বামী বা স্ত্রী না থাকলে "মা" পিতার অর্ধেক পায় । 
৩. "সহোদরা বোন" সহোদর ভাইয়ের সাথে ওয়ারিস হলে। 
৪. "বৈমাত্রেয় বোন" বৈমাত্রেয় ভাইয়ের সাথে ওয়ারিস হলে। 


• ১০ অবস্থায় নারী পুরুষের সমান পায় : 
১.পিতা-মাতা সমান অংশ পাবে ছেলের ছেলে থাকলে। 
২. বৈপিত্রেয় ভাই-বোন সব সময় সমান অংশ পায়। 
৩.বৈমাত্রেয় ভাই-বোন থাকলে সব ধরণের বোনেরা (সহোদরা, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয়) বৈপিত্রেয় ভাইয়ের সমান পাবে। 
৪.শুধুমাত্র ঔরসজাত মেয়ে ও মৃতের ভাই একসাথে থাকলে উভয়ে সমান অংশ পাবে। (মেয়ে পাবে অর্ধেক আর বাকী অংশ পাবে চাচা) 
৫. "নানী" বাবা ও ছেলের ছেলের সাথে সমান অংশ পায়। 
৬. মা ও বৈপিত্রেয় দুই বোন স্বামী ও সহোদর ভাই এর সাথে সমান অংশ পায়। 
৭. "সহোদর বোন" স্বামীর সাথে ওয়ারিস হলে সহোদর ভাইয়ের সমান অংশ পাবে। অর্থাৎ সহোদর বোনের পরিবর্তে সহোদর ভাই হলে যে অংশ পেত ঠিক সহোদরাও একই অংশ পাবে। অর্থাৎ মূল সম্পদের অর্ধেক পাবে।
৮. বৈমাত্রেয় বোন সহোদর ভাইয়ের সমান অংশ পায় যদি মৃত ব্যক্তির স্বামী, মা, বৈপিত্রেয় এক বোন এবং একজন সহোদর ভাই থাকে। এ অবস্থায় স্বামী মূল সম্পদের অর্ধেক, মা এক ষষ্ঠাংশ, বৈপিত্রেয় ভাই এক ষষ্ঠাংশ এবং বাকী এক ষষ্ঠাংশ পাবে সহোদর ভাই। 
৯. নির্দিষ্ট অংশধারী ওয়ারিস এবং আসাবা সূত্রে পাওয়ার মত কেউ না থাকলে নিকটতম রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়রা সমান অংশ পাবে। যেমন মেয়ের ছেলে, মেয়ের মেয়ে, মামা ও খালা ছাড়া অন্য কোন ওয়ারিস না থাকলে এদের সবাই সমান অংশ পাবে। 
১০. তিন প্রকারের মহিলা এবং তিন প্রকারের পুরুষ কখনো সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হয় না। এক্ষেত্রেও নারী পুরুষ সমান অধিকার ভোগ করছে। 


• অনেক অবস্থায় নারী পুরুষের চেয়ে বেশী পায়। যেমন, 
১. স্বামী থাকা অবস্থায় একমাত্র কন্যা পাবে অর্ধেক আর স্বামী পাবে এক চতুর্থাংশ । 
২. দুই কন্যা স্বামীর সাথে হলে। দুই মেয়ে পাবে দুই তৃতীয়াংশ আর স্বামী এক চতুর্থাংশ। 
৩. কন্যা মৃতের একাধিক ভাইয়ের সাথে হলে বেশী পাবে। 
৪. যদি মৃত ব্যক্তি স্বামী, বাবা, মা ও দুই কন্যা রেখে যায় তবে দুই মেয়ে দুই তৃতীয়াংশ সম্পদ পাবে। কিন্তু ঠিক একই অবস্থায় যদি মেয়ের পরিবর্তে দুই ছেলে থাকত তবে তারা নিশ্চিত ভাবে দুই মেয়ের তুলনায় কম পেত। কেননা ছেলের অংশ হলো এখানে অন্যান্য ওয়ারিসদেরকে তাদের নির্ধারিত অংশ দেওয়ার পর যা বাকী থাকে। সুতরাং স্বামী পাবে এক চতুর্থাংশ, বাবা ও মা উভয়ে পাবে এক ষষ্ঠাংশ করে এবং বাকী অংশ পাবে দুই ছেলে যা দুই তৃতীয়াংশ তো নয়ই বরং অর্ধেকের চেয়েও কম। 
৫. ঠিক একই ধরণের আরেকটি অবস্থা দুই সহোদর বোনের ক্ষেত্রে। যদি ওয়ারিসদের মধ্যে স্বামী, দুই সহোদর বোন এবং মা থাকে তখন দুই বোন দুই তৃতীয়াংশ সম্পদ পায়। কিন্তু ঠিক একই অবস্থায় যদি দুই বোনের জায়গায় দুই ভাই থাকত তখন ঐ দুই ভাই মিলে এক তৃতীয়াংশের বেশি পেত না। 
৬. তেমনি ভাবে একই অবস্থায় বৈমাত্রেয় দুই বোন বৈমাত্রেয় দুই ভাইয়ের চেয়ে বেশী পায়। 
৭. অনুরূপভাবে যদি ওয়ারিসদের মধ্যে স্বামী, বাবা, মা ও মেয়ে থাকে তবে মেয়ে মূল সম্পদের অর্ধেক পাবে। কিন্তু ঠিক একই অবস্থায় ছেলে থাকলে পেত তার চেয়ে কম। যেহেতু তার প্রাপ্যাংশ হলো অংশীদারদেরকে দেওয়ার পর অবশিষ্টাংশ। 
৮. ওয়ারিস যদি হয় স্বামী, মা ও এক সহোদর বোন তখন ঐ সহোদর বোন অর্ধেক সম্পদ পাবে যা তার স্থানে সহোদর ভাই হলে পেত না। 
৯. ওয়ারিস যদি হয় স্ত্রী, মা, বৈপিত্রেয় দুই বোন এবং দুই সহোদর ভাই তখন দূরের আত্মীয় হওয়া সত্ত্বেও বৈপিত্রেয় দুই বোন দুই সহোদরের চেয়ে বেশী পাবে। যেহেতু বৈপিত্রেয় বোনদ্বয় পাবে এক তৃতীয়াংশ, আর দুই সহোদর পাবে অবশিষ্টাংশ যা এক তৃতীয়াংশের চেয়েও কম। 
১০. যদি স্বামী, বৈপিত্রেয় বোন ও দুই সহোদর ভাই থাকে সে ক্ষেত্রে বৈপিত্রেয় বোন এক তৃতীয়াংশ পাবে। অথচ এই দুই সহোদর অবশিষ্টাংশ থেকে যা পাবে তা ঐ বোনের এক চতুর্থাংশেরও কম। 
১১. ওয়ারিস যদি হয় বাবা, মা ও স্বামী এ ক্ষেত্রে ইবনে আব্বাস (রা) এর মত অনুসারে মা পাবে এক তৃতীয়াংশ, আর বাবা পাবে এক ষষ্ঠাংশ অর্থাৎ মায়ের অর্ধেক। 
১২. স্বামী, মা, বৈপিত্রেয় বোন ও দুই সহোদর ভাই ওয়ারিস হলে এক্ষেত্রে ঐ বোন দূর সম্পর্কীয় আত্মীয় হওয়া সত্ত্বেও সহোদর ভাইদ্বয়ের দ্বিগুণ পাবে। 




• অনেক সময় নারী মিরাছ পায় কিন্তু তার সমমানের পুরুষ বঞ্চিত হয় ।
 যেমন, 
১. ওয়ারিস যদি হয় স্বামী, বাবা, মা, মেয়ে ও নাতনী (ছেলের মেয়ে) এক্ষেত্রে নাতনী এক ষষ্ঠাংশ পাবে। অথচ একই অবস্থায় যদি নাতনীর পরিবর্তে নাতী (ছেলের ছেলে) থাকত তখন এই নাতী কিছুই পেত না। যেহেতু নির্ধারিত অংশীদারদেরকে দিয়ে অবশিষ্টাংশই তার প্রাপ্য ছিলো। অথচ এ অবস্থায় কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। তাই তার প্রাপ্তির খাতাও থাকে শূন্য । 
২. স্বামী, সহোদর বোন ও বৈমাত্রেয় বোন থাকা অবস্থায় বৈমাত্রেয় বোন এক ষষ্ঠাংশ পাবে। অথচ তার স্থানে যদি বৈমাত্রেয় ভাই থাকতো তবে সে কিছুই পেত না, যেহেতু তার জন্য নির্ধারিত অংশ নেই। 
৩. অনেক সময় দাদী মিরাছ পায়, কিন্তু দাদা বঞ্চিত হয়। 
৪. মৃত ব্যক্তির যদি শুধুমাত্র নানা ও নানীই ওয়ারিস হিসেবে থাকে তখন সব সম্পত্তি পাবে নানী। নানা কোন কিছুই পাবে না। 
এরপরও কি বলা হবে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে ইসলাম নারীকে ঠকিয়েছে? 


দেখলাম সব ক্ষেত্রেই নারীরা কিছু না কিছু পায়, আর চারটি ক্ষেত্রে দেখলাম পুরুষরা সম্পূর্ন বঞ্ছিত হয়। 
এই আলোচনা মিশরের এক শিক্ষক দেওয়ার সময় এক ছাত্র বলেই ফেলল , ইসলাম পুরুষদের ঠকিয়েছে!!! 

আর একটি ক্ষেত্রে দেখলাম নারীরা অর্ধেক পায়, আর এটিই নিয়েই বহু কথা। 

ইসলাম যে পরিবারের কথা বলে ঐখানে পুরুষদের ফরয করে দেওয়া হয়েছে পরিবারের অর্থনৈতিক দ্বায়িত্ব নেয়া। স্ত্রীকে এই দ্বায়িত্ব মোটেই দেয়া হয়নি। স্ত্রী যেখান থেকেই টাকা পাক সেটি একান্ত তারই। ইচ্ছা মত খরচ করার স্বাধীনতা তার আছে । 

খৃষ্টান ধর্মের একটি সেক্ট যারা ওসমানি খেলাফতের সময় বর্তমান তুর্কির উপরের দিকে ছিল তারাও স্ত্রীদের ক্ষেত্রে একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষন করত। কিন্তু সম্পদ বন্টনের বেলায় তারা কিছু দিত না নারীদের। তাদের যুক্তি ছিল, আমাদের সিস্টেমে পুরুষদের সব অর্থনৈতিক দ্বায়িত্ব পালন করতে হয়, নারীদের কোন যুক্তিতে অর্থ দরকার। তাদের যেটা দরকার সেটা তো স্বামীর কাছেই পাবে। তাই তারা কোন ভাগই দিত না সম্পদে। পরে ওসমানি শাসকরা যেটি করে সেটি ইসলাম মোটেই সমর্থন করেনা। তারা ইসলামি আইন তাদের উপর চাপিয়ে দেয় এই ক্ষেত্রে। অর্থাৎ সম্পদের নারীরা পুরুষের অর্ধেক পাবে। মানতে পারেনি তৎকালীন খৃষ্টান নেতারা। তারা চালাকি করল। মারা যাওয়ার আগে সম্পদের সিংহ ভাগ নানা ভাবে তাদের ছেলেদের দিয়ে দিত। আর কিছু রেখে যেত। আর তা থেকে নারীরা পুরুষের অর্ধেক পেত। 


এখন একটু অংক কষি। ধরা যাক এক লোকের মোট ৩ লাখ টাকা সম্পদ। তার এক ছেলে আহমেদ আর এক মেয়ে সালমা। তিনি মারা যাওয়ার পর সম্পদের বন্টন হল (ধরে নিলাম লোকটি আর কোন আত্নীয় নেই)। আহমেদ পেল ২ লাখ আর সালমা পেল ১ লাখ ইসলামি রীতি অনুযায়ী। 
সালামার বিয়ে ঠিক হল। মোহরানা হিসেবে সে পেল ধরেন ৫০,০০০ টাকা। এখন সালমার সম্পত্তি দেড় লাখ। আর তার এই সম্পত্তিতে সালমার স্বামীর কোন অধিকার নাই। সালমা একান্ত স্বাধীন এই সম্পদের ব্যাপারে। আর বিবাহের পর সালমার পুরা দ্বায়িত্ব তার স্বামীর উপর। এমনকি সালামার বাপের বাড়ি থেকে কোন মেহমান আসলে তাকেও খাওয়াতে হবে সালমার স্বামীর।