মাজহাব মানা কি ওয়াজিব বা ফরজ???


"বেশ কিছু মানুষ বলে" মাজহাব মানা ওয়াজিব বা ফরজ। । যাক আসুন মূল কথায় যাই।

=> আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর সাথে সব সময় সব সাহাবী থাকতেন না। কেউ নবীর (সাঃ) থেকে একটা হাদিসের বাণী শুনলে সেটা পৌছে দিতেন অন্যের নিকট। যেমন আবু হুরাইরা রাঃ নবীজি (সাঃ) এর অনেক বাণী পৌছে দিয়েছেন অন্যান্য সাহাবীদের নিকট। যেমন বিদায় হজ্বের সময় ১ লাখেরও বেশী সাহাবী ভাষন শ্রবণ করেছেন। পরবর্তীতে তারা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে গিয়েছেন।


=> ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) জন্ম গ্রহণ করেছেন ৮০ হিজরীতে। তিনি প্রাপ্ত বয়স্ক হবার পর যতগুলো হাদিস পেয়েছেন এবং সংরক্ষণ করেছেন সেগুলোর উপর ভিত্তি করেই ফতোয়া দিয়েছিলেন। একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, উনার সময় তিনিই ছিলেন ইমামে আজম। তবে যেহেতু তিনি সকল সাহাবাদের হাদিস সংগ্রহ করতে পারেন নাই, সকল সাহাবাদের সাক্ষাত পান নাই এবং যেহেতু হাদিস এর ধারক সাহাবারা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন তাই তিনি যতগুলো হাদিস পেয়েছেন তার উপরেই ফতোয়া দিয়েছেন।
তবে ইমাম আবু হানিফা রহঃ এর মূল কথা ছিলঃ-

"ইযা সহহাল হাদিসু ফা হুয়া মাজহাবা" অর্থ্যাত বিশুদ্ধ হাদিস পেলে সেটাই আমার মাজহাব বা মতামত। (১/৬৩ ইবনু আবিদীন এর হাশিয়া, পৃঃ ৬২ ছালিহ আল-ফাল্লানীর, ১/৪৬ শামী)

ইমাম আবু হানিফাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল হে শায়খ, যদি এমন সময় আসে যখন আপনার কথা কোন সহীহ হাদিসের বিপরীতে যাবে তখন আমরা কি করব?

তিনি উত্তরে বলেছিলেন, তখন তোমরা সেই সহীহ হাদিসের উপরই আমল করবে এবং আমার কথা প্রাচীরে/দেয়ালে নিক্ষেপ করবে।

=> ১৩৫ হিজরিতে জন্মগ্রহন কারী ইমাম শাফেঈ (রহঃ) এর বক্তব্য হলো,

তোমরা যখন আমার কিতাবে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সুন্নাহ বিরোধী কিছূ পাবে তখন আল্লাহর রাসুলের সুন্নাত অনুসারে কথা বলবে। আর আমি যা বলেছি তা ছেড়ে দিবে। (৩/৪৭/১ আল হারাবীর, ৮/২ খত্বীব, ১৫/৯/১ ইবনু আসাকির, ২/৩৬৮ ইবনু কাইয়িম, ১০০ পৃঃ ইহসান ইবনু হিব্বান)।

=> ৯৩ হিজরীতে জন্মগ্রহণ কারী ইমাম মালেক রহঃ এর বক্তব্যও একই।

ইমাম মালেক বিন আনাস (রহঃ) বলেছেন, আমি নিছক একজন মানুষ। ভূলও করি শুদ্ধও বলি। তাই তোমরা লক্ষ্য করো আমার অভিমত/মতামত/মাজহাব এর প্রতি। এগুলোর যতটুকু কোরআন ও সুন্নাহ এর সাথে মিলে যায় তা গ্রহণ করো আর যতটুকু এতদুভয়ের সাথে গরমিল হয় তা পরিত্যাগ করো। (ইবনু আবদিল বর গ্রন্থ (২/৩২)।

=> ১৬৪ হিজরীতে জন্মগ্রহনকারী ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ ছিলেন ১০ লক্ষ হাদিসের সংগ্রহ কারী। সবচেয়ে বেশী হাদিস উনার মুখস্থ ছিল এবং উনার সংগ্রহে ছিল। উনার লিখিত গ্রন্থ মুসনাদে আহমাদ এ মাত্র ২৩০০০ এর মতো হাদিস লিপিবদ্ধ আছে।

তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, সকল ইমামই কোরআন ও সহীহ হাদিস মেতে নিতে বলেছেন। কিন্তু কেউ যদি বলেন মাজহাব মানতে তাহলে এই মুসলিম জাতি কখনো এক হতে পারবে না। সকলে দলে দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। যেমন হানাফী, শাফেঈ, হাম্বলী, মালেকী, আহলে হাদিস, আহলে কোরআন, শিয়া, সুন্নী, কুর্দি, দেওবন্দী, বেরলভী ইত্যাদি।

উপরের যতগুলো গ্রুপে মুসলিমরা ভাগ হইছে তার একটাই কারণ মাজহাব বা মতামতকে তাকলীদ বা অন্ধ অনুকরণ করা। প্রত্যেক গ্রুপই তাদের ইমামদের, বুজুর্গদের মাজহাব বা মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়েছে এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ দল নিয়ে সন্তুষ্ট।

এখন দেখেন যারা ইমামদের তাকলীদ বা অন্ধ অনুসরণ করে নিজ নিজ দল নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে যেমন হানাফী, শাফেঈ, আহলে হাদিস ইত্যাদি এবং কোরআন ও সহীহ হাদিস ত্যাগ করে, তাদের ব্যাপার আল্লাহ কি বলেছেনঃ-

(হে নবী) আপনি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত হবেন না যারা দ্বীনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং দলে দলে বিভক্ত হয়ে যায়, যারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে সন্তুষ্ট। [সূরা রুম-৩১-৩২] 

এই আয়াতে আল্লাহ তাদের মুশরিক বলে আখ্যায়িত করেছেন যারা কোরআন ও সহীহ হাদিস ছেড়ে ইমামদের আলেমদের বুজুর্গদের তাকলীদ করে তাদের। যেমন শীয়ারা। তারা তাদের বুজুর্গদের মাজহাব বা মতামতকে কঠোরভাবে মানে। বুঝতে চায় না কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা।

যারা দ্বীনকে খন্ড বিখন্ড করে, দলে দলে বিভক্ত হয় তাদের সাথে (হে নবী) আপনার কোন সম্পর্ক নাই। [সূরা আনআম-১৫৯] 

এই আয়াতে যারা দলে দলে বিভক্ত হয় তাদের সাথে নবীর সম্পর্ক না থাকার কথা বলা হয়েছে। যাদের সাথে নবীজি সাঃ এর সম্পর্ক নাই তাদের সাথে আমাদের মুসলিমদেরও কোন সম্পর্ক নাই।

মুসলিম উম্মাহর মধ্যেও কেউ কেউ যদি দলে দলে বিভক্ত হন, ইমামদের তাকলীদ করেন, তাহলে তাদের সাথেও নবীজি (সাঃ) এর সম্পর্ক থাকবে না। আর যার সাথে নবীজি (সাঃ) এর সম্পর্ক নাই, তার সাথে আমাদের সম্পর্কের তো প্রশ্নই উঠে না। যারা কোরআন ও সহীহ হাদিস মেনে নিতে রাজি আছেন তারা আমাদের মুসলিমদের দ্বীনি ভাই। আর যদি কেউ না মেনে নেন তাহলে এই আয়াতটা তাদের জন্য -


যে কেউ রসূলের বিরুদ্ধাচারণ (কোরআন ও হাদিস অমান্যের মাধ্যমে) করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান। [সূরা নিসা-৪:১১৫] 

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ্‌ পাকের। আসুন আমরা মাজহাবের নামে বিভক্ত না হয়ে কুরআন ও সুন্নাহ অনুসরণ করি যাতে আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জন করতে পারি।  


সংগৃহীতঃ http://www.somewhereinblog.net/blog/abdullah_muslim2010/29514188


ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ) কি সত্যিই তাবেঈ ছিলেন ???

“অথবা”

চার ইমাম কি সাহাবায়ে কিরামকে দর্শন করেছেন ???


দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে আমাদের সমাজে অনেক আলেম-উলামা-সাধারন অসাধারন ব্যক্তিগন ইমামদের নামে অনেক মিথ্যা রচনা করে থাকেন।

ঠিক তেমনি একটি বহুল প্রচারিত মিথ্যা কথা “চার ইমামের অনেকে সাহাবায়ে কিরামকে দর্শন করে ধন্য হয়েছিলেন।“ কথাটা সম্পূর্ন মিথ্যা। চার ইমাম হলেন ইমাম আবূ হানিফা, ইমাম মালিক, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহ্‌মাদ বিন হাম্বল। ইমাম আবূ হানিফা ও ইমাম মালেক সমকালীন।

কিন্তু কেউ সাহাবাদের মধ্য হতে কাউকে দেখেন নাই, কারো সাথে সাহাবার সাক্ষাত হয় নাই।

ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল খতীব বলেন-

১। ইমাম আবু হানীফা জীবিত অবস্থায় চার জন সাহাবা বেঁচে ছিলেন।

(ক) আনাস বিন মালিক (রাঃ) (মৃত্যুঃ ৯১ হিজরী) বসরাতে।
(খ) আব্দুল্লাহ বিন আবী আওফা (রাঃ) (মৃত্যুঃ ৮৭ হিজরী) কুফাতে।
(গ) সাহাল বিন সায়াদ সায়েদী (রাঃ) (মৃত্যুঃ ৯১ হিজরী) মদীনাতে।
(ঘ) আবু তোফায়েল আমের বিন অসেলা (রাঃ) (মৃত্যুঃ ১১০ হিজরী) মক্কাতে।

ইমাম আবূ হানীফা কারো সাথে সাক্ষাত করেন নাই এবং কারো নিকট হতে হাদীসও শিক্ষা করেন নাই। (আল আক্মাল ফি আসমাউর রেজাল মায়া মেশকাত পৃঃ ৬২৪)

ইমাম আবু হানীফার জন্ম ৮০ হিজরী মৃত্যু ১৫০ হিজরীতে।

(ক) আনাস বিন মালিক (রাঃ) যখন মারা যান তখন ইমাম আবু হানিফার বয়স (৯১-৮০)=১১ বৎসর। এই ১১ বৎসর সাহাবা আনাস বিন মালিকের (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাতের প্রশ্নই উঠে না।

(খ) আব্দুল্লাহহ বিন আবী আওফা (রাঃ)যখন মারা যান তখন ইমাম আবু হানিফার বয়স (৯৮৭-৮০)= ৭ বৎসর। সাক্ষাতের প্রশ্নই উঠে না।

(গ) সাহাল বিন সায়াদ সায়েদী (রাঃ) যখন মারা যান তখন ইমাম আবু হানিফার বয়স (৯১-৮০)=১১ বৎসর।

(ঘ) আবু তোফায়েল আমের বিন অসেলা (রাঃ) যখন মারা যান তখন ইমাম আবু হানিফার বয়স (১১০-৮০)=৩০ বৎসর। আবু তোফায়েল (রাঃ) সাথে সাক্ষাত হতে পারত, কিন্তু তিনি ইমাম আবু হানিফা সাক্ষাত করেন নাই।

২। ইমাম মালেকের (রহঃ) কর্মময় সময় বেঁচেছিলেন মাত্র একজন সাহাবী, যার নাম আবু তোফায়েল (রাঃ)। তিনি মক্কায় বসবাস করতেন। তিনি যখন মারা যান তখন ইমাম মালেকের বয়স (১১০-৯৫)= ১৫ বৎসর। ইমাম মালেক মদীনা হতে হজ্জের কাফেলার সাথে রওনা করেন এ সাহাবার সাথে সাক্ষাত ও হজ্জের উদ্দেশ্যে। তারা পথিমধ্যে থাকা অবস্থায় আবু তোফায়েল (রাঃ) মারা যান। ইমামের সাথে আবু তোফায়েল (রাঃ) সাথে সাক্ষাত হয় নাই।

৩। ইয়ামা শাফেয়ীর জন্ম ১৫০ হিজরীতে। অতএব, সকল সাহাবাগণ তার জন্মের পূর্বে মারা যান।

৪।। ইমাম আহ্‌মাদ বিন হাম্বল জন্ম গ্রহণ করেন ১৬১ হিজরীতে। তার সকল সাহাবাগণ তার জন্মের পূর্বে মারা যান।


আশা করি বিষয়টি সবার কাছে তুলে ধরতে পেরেছি এবং সবাই বুঝতে পেরেছেন
। 

কোন ইমামের ব্যক্তিগত ফতোয়ার করনে ইসলামকে খাটো করে দেখবেন না।

লিখেছেন- শাহরিয়ার
আজ আমরা ইসলামের অপব্যাখ্যা করে পবিত্র ইসলামকে কলুষিত করছি। অমুসলিম ভাইরা ভাবছে, এই নাকি ইসলাম? তারা হাসছে, ধিক্কার দিচ্ছে আর রাসূল (সঃ) কে জঘন্য ভাষায় গালি গালাজ করছে, কুরআনকে অবমাননা করছে। আপনাদের সামনে একটি বিষয়ে তুলে ধরছি যাহা ইসলামে জঘন্য হারাম কাজ। অথচ আমরা না জেনে না বুঝে ইসলামকে কত ছোট করি!
এক মজলিসে প্রদত্ত তিন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে হালালার নামে গোপন যিনাঃ
“হালালা’ আল্লাহ তা’আলার নাফরমানিমূলক অপকর্ম- যাকে শরীয়ত সিদ্ধ বলে বিশ্বাস করা একটি শয়তানি উত্তেজনা এবং লাঞ্ছনামূলক আচরণ। স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (সঃ) হালালাকারী ব্যক্তিকে “ভাড়াটিয়া পাঁঠা” বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং হালালা বিবাহকে আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের হাদীসের সাথে উপহাস ও বিদ্রুপ বলে মন্তব্য করেছেন। ইবনু মাজাহ শরীফে একটি হাদীস বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ (সঃ) এরশাদ করেন- “আমি কি তোমাদের ভাড়াটিয়া পাঁঠা সম্বন্ধে অবহিত করব না? সাহাবগণ আরজ করলেন, জি হাঁ আল্লাহর রাসূল। রাসূল (সঃ) বললেন, যারা শুধু তিন তালাক দাতা স্বামীর জন্য তার তিন তালাক প্রদত্ত স্ত্রীকে হালালা করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ক্ষণিকের জন্য বিবাহ করে।”
আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ)-কে হালালাকারী ব্যক্তিগণ সম্বন্ধে জিজ্ঞেসা করা হলে তিনি বলেন, “উভয়ই জিনাকার”। ওমর ফারুক (রাঃ) বলতেন, “হালালাকারী এবং যার জন্য হালালা করা হয় এমন ব্যক্তিদ্বয়কে আমার সামনে উপস্থিত করা হলে আমি তাদের উভয়কে রজম তথা প্রস্তর খন্ড ছুড়ে মেরে খতম করে দিব। (বিস্তারিত দেখুন ইগাসাতুল লাহফান)
তাই গভীর দুঃখ বেদনা নিয়ে- মুহাদ্দিস গুরু প্রখ্যাত ইমাম জনাব ইবনে কুতায়বা (রহঃ) স্বীয় কিতাবুল মায়ারিফ গ্রন্থে যা সন্নিবেশিত করেছেন- তার শেষ ছত্রটি এই আবূ হানিফার ফতওয়ার ভিত্তিতে কতনা সতী সাধ্বীর হারাম গুপ্তাঙ্গ হালাল করা হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। (দেখুন আল মায়ারিফ মিসর মুদ্রিত ও হাকিকাতুল ফিকাহ ১৭০ পৃঃ, বিস্তারিত দেখুন তালাকের নিয়ম বিধান- শায়খ আবূ নুমান আঃ মান্নান)
সহীহ দলীল ছাড়া ফতওয়া গ্রহণ করা হারাম তার প্রমাণঃ
মহান আল্লাহপাক তাঁর পবিত্র কোরআনে বলেন, “আপনার পূর্বেও আমি প্রত্যাদেশসহ মানবকেই তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম। অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেসা কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে; প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে নির্দেশাবলী ও অবতীর্ণ গ্রন্থসহ এবং আপনার কাছে আমি স্মরণিকা অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐসব বিষয় বিবৃত করেন, যেগুলো তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।” (সূরা নাহাল ৪৩-৪৪)
ইয়াহুদি ও নাসারগণ তাদের আলেম ও দরবেশগণকে আল্লাহ বানিয়ে নিয়েছে- (সূরা আত-তওবাহ ৩১ আঃ)।
অর্থাৎ তাদের আলেম ও দরবেশগণ যাই বলে তা-ই তারা অন্ধভাবে গ্রহণ করে। তারা জানতে চায়না যে উল্লেখিত বিষয়ে আল্লাহর কি হুকুম এবং তার রাসূলের কি হুকুম।
ইমাম ইবনে হযম (রহঃ) লিখেছেন, তাকলীদ অর্থাৎ অন্ধ অনুসরণ হারাম- (নজবুল কাফিয়াহ গ্রন্থে দেখুন)। ইমাম মালিক (রহঃ) বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সঃ) ব্যতীত অন্য সকলের কথা সম্বন্ধে জিজ্ঞেসাবাদ করা যাবে। বিনা বিচারে দলিলে কারো উক্তি গ্রহণীয় হবে না- (হুজ্জাতুল্লাহ)। ইমাম আবূ ইউসুফ, যোফার ও আকিয়াহ বিন যয়দ হতে বর্ণিত- তারা বলতেন যে, কোন লোকের জন্য আমাদে কথা দ্বারা ফতোয়া দেয়া হালাল নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা কোথা হতে বলেছি তা তারা অবগত না হবে। (ইকদুল ফরিদ গ্রন্থের ৫৬ পৃঃ)
এখানে একটু আলোচনা না করলে পাঠকগণ হয়তো ভাবতে পারেন আমি ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) এর ফতওয়াকে ছোট করে দেখছি। আসুন দেখি ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) সকল মাসায়ালা সঠিক ছিল কি-না।
০১) যে কোন ভাষায় নামাযের সূরা (কেরআত) পড়লে ইমাম আবু হানিফার মতে উত্তম যদিও সে ব্যক্তি আরবী ভাষা জানে। কিন্তু ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদের মতে তা নাজায়েয।
(হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপার ১ম খন্ডের ১০২ পৃঃ)
০২) আল্লাহ তা’আলা কুরআনে যে সকল মেয়েদেরকে বিবাহ করা হারাম করেছেন সে সকল মেয়েদেরকে কেউ বিবাহ করলে ও যৌন ুধা মিটালে ইমাম আবূ হানিফার মতে কোন হদ (শাস্তির) প্রয়োজন নাই। কিন্তু ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদের মতে হদ দিতে হবে।
(হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপার ১ম খন্ডের ৫১৬ পৃঃ)
০৩) রোগ মুক্তির জন্য হারাম জানোয়ারের প্রস্রাব পান করা ইমাম আবূ হানিফার মতে হারাম কিন্তু ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদের মতে হালাল।
(হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপার ১ম খন্ডের ৪২ পৃঃ)
০৪) কুয়ার ভিতর ইঁদুর পড়ে মরে গেলে ঐ কুয়ার পানি দ্বারা অযু করে নামায পড়লে ইমাম আবু হানিফার মতে নামা হবে কিন্তু শাগরেদদ্বয়ের মতে নামায হবে না।
(হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপার ১ম খন্ডের ৪৩ পৃঃ)
০৫) কোন ব্যক্তি যদি কো স্ত্রীর মল দ্বারে যৌন ুধা মিটায় তবে ইমাম আবূ হানিফার মতে কোন কাফফারার (শাস্তির) প্রয়োজন নেই। কিন্তু ইমাম মুহাম্মাদের মতে কাফফারা দিতে হবে।
(হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপার ১ম খন্ডের ৫১৬ পৃঃ)
০৬) ইমাম আবূ হানিফার মতে ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পর হতে আসরের নামাযের সময় আরম্ভ হয় কিন্তু ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদের মতে ছায়া একগুণ হওয়ার পর হতেই আসরের সময় আরম্ভ হয়।
(হিদায়ার ১২৯৯ হিঃ৯মোস্তফায়ী ছাপার ১ম খন্ডের ৬৪ পৃঃ)
০৭) ফারসি ভাষায় তাকবীর বলে নামায পড়া ইমাম আবূ হানিফা ও আবূ ইউসূফের মতে জায়েয, কিন্ত ইমাম মুহাম্মাদের মতে নাজায়েয।
(হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপার ১ম খন্ডের ১০১ পৃঃ)
০৮) খেজুর ভিজানো পানি যাতে ফেনা ধরে গেছে এরূপ পানিতে অযু করা ইমাম আবূ হানিফার মতে জায়েজ কিন্তু ইউসুফের মতে হালাল নয়।
(হিদায়ার ১২৯৯ হিঃ মোস্তফায়ী ছাপার ১ম খন্ডের ৩০ পৃঃ)
০৯) ইমাম আবূ হানিফার মতে নামাযে সিজদার সময় নাক অথবা কপাল যে কোন একটি মাটিতে ঠেকালেই নামায হবে। কিন্তু মুহাম্মাদের মতে জায়েয হবে না। নাক কপাল দুটোকেই ঠেকাতে হবে।
(হিদায়ার ১২৯৯ হিঃ মোস্তফায়ী ছাপার ১ম খন্ডের ৯০ পৃঃ)
পাঠকগণ এমন ৬১ টি মতবিরোধ হিদায়া কেতাবে রয়েছে যাহা সব সময়ের অভাবে টাইপ করতে পারলাম না। এই মতবিরোধ থেকে বোঝা যায় ইমাম আবু হানিফা ভুলের উর্দ্ধে ছিলেন না। ওনাদের সময় সহীহ হাদীস সংকলন করা ছিল না তাই বেশীর ভাগ সমস্যাই ইজমা-কেয়াস আর যুক্তি দ্বারা সমাধান করতেন। অবশেষে এ সংকটময় অবস্থায় চার ইমাম সাহেবই নিজ নিজ অনুসারীদেরকে বলে যান, “আমি যে ফয়সালা দিয়েছি ভবিষ্যতে যদি সহীহ হাদীস সংকলিত হয় এবং আমার ফয়সালা সহীহ হাদীসের পরিপন্থী হয়, তা হলে আমার ফয়সালা পরিত্যাগ করে সহীহ হাদীসের অনুসরণ করবে।”
এর পরেও যদি কেউ অন্ধ গোঁড়া স্বভাবের হয় তাহলে আবু হানিফার নিম্ন ফতোয়াগুলিও অবশ্যই মানবেন। কারণ এগুলো বিখ্যাত হিদায়া ও অন্যান্য ফতোয়ার বই হতে সংকলিত। এখানে ভুল হবার কোন আশংকা নাই। যদি এই ফতোয়াগুলো অস্বীকার করেন তাহলে হিদায়াকেই অস্বীকার করতে হবে অথচ হিদায়া সম্পর্কে এমন কথা বলা আছেঃ “নিশ্চয় হিদায়া কিতাবখানা নির্ভুল পবিত্র কুরআনের মত। নিশ্চয় এটা তার পূর্ববর্তী রচিত শরিয়তের সকল গ্রন্থরাজিকে রহিত (বাতিল) করে ফেলেছে।” (হিদায়া মোকাদ্দমা-আখেরাইন ৩য় পৃঃ, হিদায়া ৩য় খন্ড ২য় ভলিউম ৪পৃঃ আরবী, মাদ্রাসার ফাজেল কাসের পাঠ্য হিদায়া ভুমিকা পৃঃ ৬, আরাফাত পাবলিবেশন্স)
আসুন তাহলে এর পবিত্রতা যাচাই করিঃ
রাসূল (সাঃ)-এর হাদীস অনুযায়ী স্বামী ও স্ত্রী সঙ্গম করার উদ্দেশ্যে উভয়ের লিঙ্গ একত্র করে সামান্য অং প্রবেশ করলেও উভয়ের উপর গোসল ফরজ হয়, তাতে বীর্যপাত হোক বা না হোক। (সহীহ তিরমিযী) সহী হাদীসের বিপরীতমুখি যে সকল জঘন্যতম ফতওয়া এখনও মাযহাবীগণ চালু রেখেছেন তার কিছুটা নিচে তুলে ধরলামঃ
**** নিশ্চিত হিদায়া কিতাবখানা পবিত্র কুরআনের মত। নিশ্চয় এটা তার পূর্ববর্তী রচিত শরীয়তের সকল গ্রন্থরাজিকে রহিত (বাতিল) করে ফেলেছে। (হিদায়া মোকাদ্দমা-আখেরাইন ৩য় পৃঃ, হিদায়া ৩য় খন্ড ২য় ভলিউম পৃঃ ৪ আরবী, মাদ্রাসার ফাজেল কাসের পাঠ্য হিদায়া ভ’মিকা পৃঃ ৬, আরাফাত পাবলিকেশনন্স)
০১) ইমাম আবূ হানিফার তরীকা অনুযায়ী চতুষ্পদ জন্তু, মৃতদেহ অথবা নাবালিকা মেয়ের সঙ্গে সঙ্গম করার উদ্দেশ্যে উভয়ের লিঙ্গ একত্র হয়ে কিছু অংশ প্রবেশ করলেও অযু নষ্ট হবে না। শুধু পুং লিঙ্গ ধৌত করতে হবে। (দুররে মুখতার অযুর অধ্যায়)
০২) যদি কোন লোক মৃত স্ত্রী লোকের অথবা চতুষ্পদ জন্তুর স্ত্রী অংগে বা অন্য কোন দ্বারে রোযার অবস্থায় বালৎকার করে তাহলে তার রোযা নষ্ট হবে না। (শারহে বিকায়া, লক্ষৌভি-এরইউসুফী ছাপার ১ম জেলদের ২৩৮পৃঃ)
০৩) আল্লাহ তা’আলা কুরআনে যে সকল মেয়েদেরকে বিবাহ করা হারাম করেছেন। যথা- মাতা, ভগ্নি, নিজের কন্যা, খালা, ফুফু ইত্যাদি স্ত্রী লোককে যদি কোন ব্যক্তি বিবাহ করে ও তার সংগে যৌন সঙ্গম করে তাহলে ইমাম আবু হানিফার মতে তার উপর কোন হদ (শাস্তি) নেই। (হিদায়া ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপা ৫১৬ পৃঃ, আলমগিরী মিসরী ছাপা ২য় খন্ড ১৬৫ পৃঃ, বাবুল ওয়াতী ৪৯৫ পৃঃ)
০৪) বাদশাহ যদি কারো সাথে জোর পূর্বক জিনা করে তাহলে আবূ হানিফার মতে সেই ব্যক্তির উপর কোন শাস্তির প্রয়োজন নাই। কিন্তু বাদশাহ ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি যদি জোর পূর্বক কারো সাথে জিনা করে তবে আবূ হানিফার মতে সেই ব্যক্তির উপর হদ জারী করতে হবে। (হিদায়া ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ চাপা ১ম খন্ড ৫১৯ পৃঃ)
০৫) কোন ব্যক্তি যদি কারো সাথে জিনা (যৌন সঙ্গম) করতে থাকে এবঙ জিনার অবস্থায় যদি অন্য কেহ দেখে ফেলে আর জিনাকারী ব্যক্তি যদি মিথ্যা করে বলে এই মেয়েটি আমার স্ত্রী তাহলে উভয় জিনাকারীর উপরই হদের (শাস্তির) প্রয়োজন নেই। (হিদায়া ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ চাপা ১ম খন্ড ৫১৯ পৃঃ)
০৬) রমযান মাসে রোযার অবস্থায় যদি কেউ মল দ্বারে সঙ্গম করে তবে ইমাম আবূ হানিফার মতে কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না। (হিদায়া ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ চাপা ১ম খন্ড ২১৯ পৃঃ)
০৭) কেউ যদি ‘বিসমিল্লাহ’ বলে কুকুর যবেহ করে তার মাংস বাজারে বিক্রয় করে তবে অবশ্যই তা জায়েয হবে। (শারহে বেকায়া ১ম খন্ড)
০৮) গম, যব, মধু, জোয়ার হতে যে মদ প্রস্তুত করা হয় তা ইমাম আবূ হানিফা’র মতে পান করা হালাল এবং এই সকল মদ পানকারী লোকের নেশা হলেও হদ (শাস্তি) দেয়া হবে না। (হিদায়ার মোস্তফায়ী ছাপা ২য় খন্ড ৪৮১ পৃঃ)
০৯) আঙ্গুলি ও স্ত্রীলোকের স্তন মল-মূত্র দ্বারা নাপাক হয়ে গেলে, তিনবার জিবদিয়ে চেটে দিলেই পাক হয়ে যাবে। (দুররে মোখতারের ৩৬ পৃষ্ঠায় বাবুল আনজাসে দেখুন)
১০) যদি কেউ তার পিতার কৃতদাসীর সাথে সহবাস (যৌন মিলন) করে তবে কোন শাস্তি নাই। (হিদায়া ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ চাপা ১ম খন্ড ৫১৫ পৃঃ)
১১) কোন স্ত্রীর স্বামী মারা গেলে এবং মারা যাওয়ার দুই বৎসর পর সেই স্ত্রীর সন্তান হলে, তবে সেই সন্তান তার মৃত স্বামীরই হবে। (হিদায়া ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ চাপা ১ম খন্ড ৩৩১ পৃঃ)
১২) স্বামী প্রবাসে রয়েছে, সুদীর্ঘকাল অতীত হয়েছে বহু বছর ধরে স্বামী ফিরেনি এই দিকে স্ত্রীর পুত্র সন্তান জন্ম হয়েছে তাহলেও এই ছেলে হারামী বা জারজ হবে না সেই স্বামীরই ঔরসজাত হবে। (বেহেস্তি জেওর ৪র্থ খন্ড ৪৪পৃঃ)
১৩) আবূ বকর বিন ইসকান বলেন, যদি কোন ব্যক্তি কারো মাল চুরি ডাকাতি করে নিয়ে এসে চিবিয়ে চিবিয়ে খায় তাহলে ইমাম আবূ হানিফার মতে হালাল হবে। (কাজি খাঁ ৪র্থ খন্ড ৩৪৩ পৃঃ)
১৪) পিতার পে পুত্রের দাসীর সঙ্গে যৌন মিলন করা সর্বাবস্থায় হালাল। আরো যুক্তি দর্শান হয়েছে দাসী হচ্ছে পূত্রের সম্পদ আর পুত্রের সম্পদে পিতা পূত্র উভয় ব্যক্তিরই হক আছে। ফলে একই নারী দ্বারা উভয় নরের যৌন ুধা মিটানো হালাল। (নুরুল আনওয়ার ৩০৪পৃঃ)
১৫) কুরআন ও সহীহ হাদীসের স্পষ্ট বিরোধী মাসআলাহ- চার মাযহাব চার ফরয। হানাফী, শাফেঈ, মালেকী ও হাম্বলী এই চার মাযহাব। (বেহেস্তি জেওর স্ত্রী শিা ১০৪ পৃঃ দ্রঃ, আলহাজ্জ মৌলভী আব্দুর রহীম। কুরআন মঞ্জিল লইব্রেরী-বরিশাল)
১৬) যদি কোন ব্যক্তি পয়সরা বিনিময়ে কোন নারীর সাথে জিনা করে তবে আবূ হানিফার বিধান মতে কোনই হদ (শাস্তি) নেই। (অর্থাঃ সারা পৃথিবীতে যত বেশ্যাখানা রয়েছে সবই বৈধ।) (জাখীরাতুল উকবাও শারহে বিকায়ার হাশিয়া চাল্পিতে আছে। (বিস্তারিত দেখুন ‘আসায়ে মুহাম্মাদী’)
১৭) কুরআন ও সহীহ হাদীসকে পদাঘাত করে হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফতওয়ার কিতাবে চুরি, ডাকাতি, মাস্তানি, লুট, খুন বা হত্যা করাকে বৈধ করা হয়েছে। (দেখুন হিদায়া ২য় খন্ড ৫২৭ পৃঃ, ৫৩৭ পৃঃ, ৫৪০-৫৪২ পৃঃ, ৫৪৬ পৃঃ, ৫৫৭ পৃঃ, ৫৫৮ পৃঃ, হিদায়া ৩য় খন্ড ৩৫৬ পৃঃ, ৩৬৪-৩৬৫পৃঃ। হিদায়া ৪র্থ খন্ড ৫৪৭ পৃঃ, ৫৫০ পৃঃ)
১৮) পবিত্রতম সূরায়ে হৃদের ৮৪-৮৫ অর বিশিষ্ট ৪৪ নম্বর আয়াত পবিত্রতম সূরা মূলকের প্রায় ৪০ অর বিশিষ্ট পবিত্র শেষ আয়াতে কারীমাটি তাবীজরূরে ধারণ করলে শীঘ্র বীর্যপাত হবে না। (বেহেস্তি জেওর ৯ম খন্ডের ১৫৪পৃঃ)
এই হচ্ছে আমাদের ফেকাহর কিতাব!?!
আল্লাহ আমাদের সঠিক পথ অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন। আমীন….