একজন কাফের যতই ভাল কাজ করুক আখেরাতে কি সে মুক্তি পাবে? বা তার কোন ভাল আমলের ফল পাবে?

আল্লাহ বলেনঃ সূরা ইবরাহীম-১৮) যারা তাদের রবের সাথে কুফরী করলো তাদের কার্যক্রমের উপমা হচ্ছে এমন ছাই-এর মতো, যাকে একটি ঝনঝাক্ষুব্ধ দিনের প্রবল বাতাস উড়িয়ে দিয়েছে৷ তারা নিজেদের কৃতকর্মের কোনই ফল লাভ করতে পারবে না৷ এটিই চরম বিভ্রান্তি৷

অর্থাৎ যারা নিজেদের রবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা, অবিশ্বস্ততা, অবাধ্যতা, স্বেচ্ছাচারমূলক আচরণ, নাফরমানী ও বিদ্রোহাত্মক কর্মপন্থা অবলম্বন করলো এবং নবীগণ যে আনুগত্য ও বন্দেগীর পথ অবলম্বন করার দাওয়াত নিয়ে আসেন তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করলো, তাদের সমগ্র জীবনের কর্মকাণ্ড এবং সারা জীবনের সমস্ত আমল শেষ পর্যন্ত এমনি অর্থহীন প্রমাণিত হবে যেমন এটি ছাই -এর স্তপ, দীর্ঘদিন ধরে এক জায়গায় জমা হতে হতে তা এক সময় একটি বিরাট পাহাড়ে পরিণত হয়ে গিয়েছিল৷ কিন্তু মাত্র একদিনের ঘুর্ণিঝড়ে তা এমনভাবে উড়ে গেলো যে তার প্রত্যেকটি কণা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো৷ তাদের চাকচিক্যময় সভ্যতা, বিপুল ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি, বিস্ময়কর শিল্প-কল-কারখানা, মহা প্রতাপশালী রাষ্ট্র, বিশালায়তন বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ এবং তাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য, চারুকলা-ভাস্কর্য-স্থাপত্যের বিশাল ভাণ্ডার, এমনি তাদের ইবাদাত-বন্দেগী, বাহ্যিক সৎকার্যাবলী এবং দান ও জনকল্যাণমূলক এমন সব কাজ-কর্ম যেগুলোর জন্য তারা দুনিয়ায় গর্ব করে বেড়ায়, সবকিছুই শেষ পর্যন্ত ছাই-এর স্তুপে পরিণত হবে৷ কিয়ামতের দিনের ঘুর্ণিঝড় এ ছাই-এর স্তুপকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দেবে এবং আখেরাতের জীবনে আল্লাহর মীযানে রেখে সামান্যতম ওজন পাওয়ার জন্য তার একটি কণাও তাদের কাছে থাকবে না৷

যার সামনে রয়েছে শুধু দনিয়ার এ জীবন এবং এর স্বার্থ ও সুখ-সম্ভোগ লাভ সে এ বৈষয়িক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য যেমন প্রচেষ্টা এখানে চলাবে তেমনি তার ফল সে এখানে পাবে৷ কিন্তু আখেরাত যখন তার লক্ষ নয় এবং সেজন্য সে কোন চেষ্টাও করেনি তখন তার দুনিয়ার বৈষয়িক স্বার্থ উদ্ধার প্রচেষ্টার ফল লাভ আখেরাত পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হবার কোন কারণ নেই৷ সেখানে ফল লাভের সম্ভাবনা একমাত্র তখনই হতে পারে যখন দুনিয়ায় মানুষ এমন সব কাজের জন্য প্রচেষ্টা চালায় যেগুলো আখেরাতেও ফলদায়ক হয়৷ দৃষ্টান্ত স্বরূপ, যদি কেউ তার নিজের বসবাস করার জন্য একটি সুরম্য প্রাসাদ চায় এবং এখানে এ ধরনের প্রাসাদ তৈরী করার জন্য যেসব ব্যবস্থা অবলম্বন করা দরকার তা সবই সে অবলম্বন করে তাহলে নিশ্চয়ই একটি সুরম্য প্রাসাদ তৈরী হয়ে যাবে এবং তার কোন একটি ইটও নিছক একজন কাফের তাকে দেয়ালের যায় বসাচ্ছে বলে প্রসাদের দেয়ালে বসতে অস্বীকার করবে না৷ কিন্তু মৃত্যুর আগমন এবং জীবনের শেষ নিশ্বাসের সাথে সাথেই তাকে নিজের এ প্রাসাদ এবং এর সমস্ত সাজসরঞ্জাম এ দুনিয়ায় ছেড়ে চলে যেতে হবে৷ এর কোন জিনিসও সে সংগে করে পরলোকে নিয়ে যেতে পারবে না৷ যদি সে আখেরাতে প্রাসাদ তৈরী করার জন্য কিছু না করে থাকে তাহলে তার এ প্রাসাদ তার সাথে সেখানে স্থানান্তরিত হবার কোন যুক্তিসংগত কারণ নেই৷ দুনিয়ায় সে যদি এমন সব কাজে প্রচেষ্টা নিয়োজিত করে যেগুলোর সাহায্য আল্লাহর আইন অনুযায়ী আখেরাতে প্রসাদ নির্মিত হয় তাহলে একমাত্র তখনই সে ওখানে কোন প্রাসাদ লাভ করতে পারে৷

এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে, এ যুক্তি দ্বারা তো শুধু এতটুকুই বুঝা যায় যে, সেখানে সে কোন প্রাসাদ পাবে না৷ কিন্তু প্রাসাদের পরিবর্তে সে আগুন লাভ করবে, এ কেমন কথা? এর জবাব হচ্ছে (কুরআনই বিভিন্ন সময় এ জবাবটি দিয়েছে) যে ব্যক্তি আখেরাতকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র দুনিয়ায়র জন্য কাজ করে সে অনিবার্য ও স্বাভাবিকভাবে এমন পদ্ধতিতে কাজ করে যার ফলে আখেরাতে প্রাসাদের পরিবর্তে আগুনের কুণ্ড তৈরী হয়৷ (আল্লাহ তাদের হেদায়েত দিন )

আল্লাহ বলেনঃ (আল কাহফ-১০৫) এরা এমন সব লোক যারা নিজেদের রবের নিদর্শনাবলী মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এবং তাঁর সামনে হাযির হবার ব্যাপারটি বিশ্বাস করেনি৷ তাই তাদের সমস্ত কর্ম নষ্ট হয়ে গেছে, কিয়ামতের দিন তাদেরকে কোনো গুরুত্ব দেবো না৷


অর্থাৎ এ ধরনের লোকেরা দুনিয়ায় যতই বড় বড় কৃতিত্ব দেখাক না কেন, দুনিয়া শেষ হবার সাথে সাথে সেগুলোও শেষ হয়ে যাবে ৷ নিজেদের সুরম্য অট্টালিকা ও প্রাসাদ, নিজেদের বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ও সুবিশাল লাইব্রেরী, নিজেদের সুবিস্তৃত রাজপথ ও রেলগাড়ী, নিজেদের আবিস্কার ও উদ্ভাবনসমূহ, নিজেদের শিল্প ও কলকারখানা নিজেদের জ্ঞান বিজ্ঞান ও আর্ট গ্যালারী এবং আরো অন্যান্য যেসব জিনিস নিয়ে তারা গর্ভ করে তার মধ্য থেকে কোন জিনিসও তারা আল্লাহর তুলাদণ্ডে ওজন করার জন্য নিজেদের সাথে নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাযির হতে পারবে না ৷ সেখানে থাকবে শুধুমাত্র কর্মের উদ্দেশ্য এবং তার তার ফলাফল ৷ যদি কারো সমস্ত কাজের উদ্দেশ্য দুনিয়ার জীবন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থেকে থাকে, ফলাফলও সে দুনিয়াতেই চেয়ে থাকে এবং দুনিয়ায় নিজের কাজের ফল দেখেও থাকে, তাহলে তার সমস্ত কার্যকলাপ এ ধ্বংসশীল দুনিয়ার সাথেই ধবংস হয়ে গেছে ৷ আখেরাতে যা পেশ করে সে কিছু ওজন পেতে পারে তা অবশ্যি এমন কোন কর্মকাণ্ড হতে হবে, যা সে আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য করেছে, তাঁর হুকুম মোতাবেক করেছে এবং যেসব ফলাফল আখেরাতে প্রকাশিত হয় সেগুলোকে উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করে করেছে ৷ এ ধরনের কোন কাজ যদি তার হিসেবের খাতায় না থাকে তাহলে দুনিয়ায় সে যা করেছিল সবই নিসন্দেহে বৃথা যাবে ৷

আল্লাহ তাআলা , মোনাফেক , কাফের, সৎ মু'মিন , গোনাহগার মু'মিন, জালেম ও ফাসেক মু'মিন , নিছক কাফের এবং জালেম ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কাফের ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের লোকদের পুরস্কার ও শান্তির জন্য একটি বিস্তারিত আইন বর্ণনা করা হয়েছে ৷ আর এই পুরস্কার ও শাস্তি মানুষের সমগ্র জীবনের ওপর পরিব্যাপ্ত ৷
এ প্রসংগে কুরআন মজীদ নীতিগতভাবে কয়েকটি কথা দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বর্ণনা করে :

কাফের , মুশরিক ও মোনাফেকের কর্মকাণ্ড ( অর্থাৎ এমনসব কর্মকাণ্ড যেগুলোকে নেকী মনে করা হয় তা ) নষ্ট করে দেয়া হয়েছে৷ আখোরাতে তারা এর কোন প্রতিদান পাবে না৷ এগুলোর যা প্রতিদান , তা তারা দুনিয়াতেই পেয়ে যাবে৷
হাদীসের বক্তব্য এ বিষয়টিকে একেবারে পরিস্কার করে দেয়৷

কাতাদাহ হযরত আনাসের ( রা) বরাত দিয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিম্নোক্ত বাণীটি উদ্ধৃত করেছেন : " আল্লাহ মু'মিনের প্রতি জুলুম করেন না৷ দুনিয়ায় তার নেকীর প্রতিদানে তাকে রিযিক দান করেন এবং আখেরাতে আবার এর পুরস্কার দেবেন৷ আর কাফেরের ব্যাপারে দুনিয়ায় তার সৎকাজের প্রতিদান দিয়ে দেন , তারপর যখন কিয়ামত হবে তখন তার খাতায় কোন নেকী লেখা থাকবে না৷

ইবনে জারীর মাসরূক হযরত আয়েশা (রা) থেকে রেওয়ায়াত করেছেন : তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন , " আবদুল্লাহ ইবনে জুদ'আন জাহেলী যুগে আত্মীয়দের সাথে সদ্ব্যবহার করতো , মিসকিনকে আহার করাতো , মেহমানদের আপ্যায়ন করতো , বন্দিদের মুক্তি দান করতো৷ আখেরাতে এগুলো কি তার জন্য উপকারী হবে ? " রসূলুল্লাহ (সা) জবাব দেন " না , সে মরার সময় পর্যন্ত একবারও বলেনি , ( হে আমার রব ৷ শেষ বিচারের দিন আমার ভুল ত্রুটিগুলো মাফ করে দিয়ো ৷)

ইবনে জারীর অন্যান্য আরো কিছু লোকের ব্যাপারেও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই একই জবাব দেন৷ তারা জাহেলী যুগে সৎকাজ করতো কিন্তু কাফের ও মুশরিক অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে৷ কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোন কোন বাণী থেকে জানা যায় , কাফেরের সৎকাজ তাকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করতে পারবে না ঠিকই তবে জালেম ফাসেক ব্যভিচারী কাফেরকে জাহান্নামে যে ধরনের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে তার শাস্তি তেমনি পর্যায়ের হবে না৷ যেমন হাদীসে বলা হয়েছে : হাতেম তাঈ এর দানশীলতার কারণে তাকে হালকা আযাব দেয়া হবে৷ ( রূহুল মা ' আনী )


( হে আমার রব ৷ শেষ বিচারের দিন আমার ভুল ত্রুটিগুলো মাফ করে দিয়ো ৷) أستغفر الله و أتوب إليه


আহলে কিতাব (ইহুদী -খৃষ্টানরা) কী মু,মিন ??

(ইহুদী -খৃষ্টান এবং অন্যান্য ধর্মের অনুসারী সকলেই কাফের . যদিও তারা এমন ধর্ম অনুসরণ করে , যার মূল হচ্ছে সঠিক ! নবী (সাঃ) এর আগমনের পর যে  লোক নিজের ধর্ম পরিত্যাগ না করবে এবং ইসলাম গ্রহণ না করবে فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ  তার সে পদ্ধতি কখনোই গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ব্যর্থ, আশাহত ও বঞ্চিত ( আল ইমরান -৮৫) ......কোনো মুসলিম যোদি তাদেরকে  কাফের না বলে বা তাদের ধর্ম বাতিল হবার ব্যাপারে সন্দেহ-শংসয় করে, তবে সেও কাফের হয়ে  যাবে ......কেননা  সে তাদের ধর্ম বাতিল হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ ও তার রাসুলের বিধানের বিরোধিতা করেছে ... আল্লাহ বলেন ... وَمَن يَكْفُرْ بِهِ مِنَ الْأَحْزَابِ فَالنَّارُ مَوْعِدُهُ  আর মানব গোষ্ঠীর মধ্য থেকে যে-ই একে অস্বীকার করে তার জন্য যে জায়গার ওয়াদা করা হয়েছে তা হচ্ছে দোযখ৷ (সূরা হুদ ১৭) নবী (সাঃ ) বলেন  والذي نفس محمد بيده لا يسمع بي أحد   من هذه الأمة، يهودي ولا نصراني، ثم لا  يؤمن به إلادخل النر শপথ সেই সত্বার যার হাতে আমার প্রাণ , এই উম্মতের মধ্যে থেকে ইহুদী হোক বা খৃষ্টান হোক কোনো ব্যক্তি যোদি আমার সম্পর্কে শোনে অতপর আমাকে  যে  শরীয়ত দিয়ে  প্রেরণ করা হয়েছে তার উপড় ঈমান না  এনেই মৃত্য বরণ করে , তবে সে জাহান্নামের অধিবাসী হবে (মুসলিম )