বিশ্বাসীগণের জন্য আল্লাহর চেয়ে উত্তম হুকুমদাতা আর কে হতে পারে???

আল্লাহ তা-আলা বলেনঃ (إِنِ الْحُكْمُ إِلاَّ لِلّهِ) আইন একমাত্র আল্লাহরই! আল্লাহ আরো বলেনঃ


(أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللّهِ حُكْماً لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ)
"তারা কি জাহেলিয়াতের আইন চায়? বিশ্বাসীগণের জন্য আল্লাহর চেয়ে উত্তম হুকুম দাতা আর কে হতে পারে?"
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ "আল্লাহই হলেন আইনদাতা, আর তাঁর নিকট থেকেই আইন নিতে হবে ।কুরআন ও হাদীসের এত সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকার পরও অধিকাংশ মুসলমান ব্যাপারটির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেন না,শয়তান তাদেরকে বিভিন্নভাবে তা উপলব্ধি করতে দেয় না। তাদের ইমানের দুর্বলতার কারনে ।
কিন্তু অনেকেই নিজেদেরকে মুসলমান দাবী করে থাকি, অথচ যখনই ইসলামী আইন-কানুন বাস্তবায়নের কথা আসে তখনই আমাদের মত ও পথ বিভিন্ন হয়ে যায়। ইসলামী আইন বাস্তবায়ন না করা কুফরী ।


আল্লাহ বলেন -(وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ)
"আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ আইন অনুসারে বিচারকার্য সম্পাদন করেনা, তারা কাফের"


আল্লাহ আরো বলেন -(وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ)
"আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ আইন অনুসারে বিচারকার্য সম্পাদন করেনা, তারা যালেম"


ও বলেন (وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْفَاسِقُون)
আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ আইন অনুসারে বিচারকার্য সম্পাদন করেনা , তারা ফাসেক" ।
আল্লাহ নিজেই বলেদিয়েছেন উপরে তাদের পরিচয় ।


إِنِ الْحُكْمُ إِلاَّ لِلّهِ"আইন দানের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর"
কেননা, তিনিইতো রব, সুতরাং আইনও দিবেন সেই রবই, অন্য কাউকে যদি আইন প্রদানের মালিক মনে করা হয় তবে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেই রব মানা হয়; যা প্রকাশ্য বড় শির্ক। আর এ জন্যই আল্লাহ তা'আলা যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো আইন মানবে তাদের সম্পর্কে বলেছেনঃ


أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللّهِ حُكْماً لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ
"তারা কি জাহেলিয়াতের আইন চায়? বিশ্বাসীগণের জন্য আল্লাহর চেয়ে উত্তম হুকুম দাতা আর কে হতে পারে?"
এখানে জাহেলিয়্যাতের আইন বলতে আল্লাহ্ কর্তৃক প্রণিত আইন ছাড়া যাবতীয় আইনকেই বুঝানো হয়েছে। সুতরাং আল্লাহ তা'আলা কর্তৃক প্রণিত আইনের বাইরে যত প্রকার মানব রচিত আইন রয়েছে, তার সবই জাহেলী আইন, যেমন ইংরেজদের রেখে যাওয়া আইন, রোমান আইন ইত্যাদি।


আমাদের দেশের এক শ্রেণীর লোক মনে করে ইসলামী আইন বর্তমান যুগের সাথে অসামঞ্জস্যশীল এবং অচল। তাদের অন্তরে রয়েছে ইসলামী আইনের কার্যকারিতা সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের সন্দেহ।


ইসলামী আইনের বিরোধিতাকারীদের মধ্যে যারা ইসলামী আইনের সঠিক জ্ঞান রাখার পরও এর বিরোধিতা করে থাকে, তাদের মনে ইসলামী আইনের বাস্তবতার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু তারা নিজেদের স্বার্থেই এর বাস্তবায়ন চায়না।
ধরুন,তাদের মধ্যে কেউ সরকারী চাকুরীজীবি, সে ঘুষ খায়, সরকারী সম্পত্তি আত্মসাৎ করে; সে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন হোক এটা চাইতেই পারেনা। কারণ ইসলাম ঘুষ গ্রহিতাকে অপসারণ করতে বলেছে, সরকারী সম্পত্তির আত্মসাৎকারীকে চোর হিসাবে সাব্যস্ত করেছে, সে চোরের শাস্তি পাবে। তাই বড় বড় আমলারা যারা ঘুষের মাধ্যমে, অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে বড় লোক হতে চায়; তারা কিভাবে ইসলামী আইনের বাস্তবায়ন চাইতে পারে?
আবার ধরুন, কেউ ডাকাতির মাধ্যমে বড়লোক হতে চায়, ইসলামী আইনে তার শাস্তি হলো এক হাত, এক পা কেটে দেয়া। এ শাস্তি কোন ডাকাতের জন্য সুখকর নয়, তাই ডাকাতদল কোন দিন চাইবেনা ইসলামী আইন বাস্তবায়িত হোক।
ইসলামী আইনে অঙ্গহানির শাস্তি হলো তেমনিভাবে অঙ্গহানি করা, তাই যারা সমাজে অঙ্গহানি করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে চায়, তারা কোন দিন চাইবেনা ইসলামী আইন এ দেশে বাস্তবায়িত হোক।
ইসলামী আইনে হত্যার শাস্তি হত্যা, তাই যে হত্যার মাধ্যমে শত্রুমুক্ত হতে চায়, (চাই তার স্ত্রী, প্রতিবেশী বা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ; যে-ই হোক না কেন) সে চাইবেনা ইসলামী আইন বাস্তবায়িত হোক, কারণ তার শাস্তিও অনুরূপ হবে, কোন প্রকার ব্যতিক্রম হবেনা। সুতরাং কেউই নিজের জীবনের বিনিময়ে এমন কিছু অর্জন করতে চায়না।
অনুরূপভাবে সমাজে এক শ্রেনীর লোক রয়েছে, যারা অন্যায়, অনাচার ইডেন কলেজের মাইয়া ভোগ করে বেড়ায়। ইসলামী আইন থাকলে তাদের বিচার হবে সুষ্ঠুভাবে, তারা অন্যায় করতে পারবেনা, সুতরাং তারা চায়না ইসলামী আইন বাস্তবায়িত হোক।
সুতরাং আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, সার্বিক শান্তির গ্যারান্টি যদি কেউ পেতে চায় তার পক্ষে ইসলামী আইনের বিকল্প আর কিছুই নেই।

কেউ যদি আল্লাহকে একমাত্র রব হিসাবে মানে তাহলে অবশ্যই একথা তাকে বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহ তা'আলা বান্দার জন্য কোনটি উপযোগী আর কোনটি অনুপযোগী সেটা ভাল করেই জানেন। আর জানেন বলেই তিনি এমনভাবে এ সমস্ত আইন প্রণয়ন করেছেন যাতে বান্দার জন্য এগুলো কোন রকমের সমস্যা সৃষ্টি না করে। সুতরাং এ সমস্ত সমস্যাবলীর উত্থাপন করার অর্থই হলো, আল্লাহর প্রভুত্বের উপর সংশয়/সন্দেহ পোষণ করা।
অনুরূপভাবে কেউ যদি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ রাসূল ও শরীয়ত প্রবর্তক, আইনের সঠিক ব্যাখ্যাদাতা, পূর্ববর্তী সমস্ত শরীয়তের রহিতকারী এবং তিনি যা নিয়ে এসেছেন তাকে পরিপূর্ণ মনে করে থাকেন, তবে তার মধ্যে এ ধরণের প্রশ্নের সৃষ্টিই হতে পারেনা। তাই এ ধরণের প্রশ্ন সৃষ্টির মানেই হলো, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ রাসূল, তাঁর প্রবর্তিত আইনকে সর্বশেষ জীবন বিধান এবং তাঁর শরীয়ত সম্পূর্ণ; ইত্যাদি মৌলিক বিষয়কে অস্বীকার করার শামিল।
আর যে ব্যক্তি এ ধারণা পোষণ করবে, সে সত্যিকার অর্থেই ঈমানের গন্ডি থেকে বের হয়ে যাবে।


তাই আসুন ! আমরা আবার আমাদের এ প্রিয় যমীনের বুকে ইসলামের আইন বাস্তবায়ন করে দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি লাভে সমর্থ হই।
আল্লাহ আমাদের এ প্রচেষ্টা কবুল করুন। আমীন।।

লেখক : DR.ZAKARIA