"হুকমু তা'রেকুস সালাত" নামায পরিত্যাগকারীর বিধান "নামায ত্যাগকারী কাফের" ..............2

"হুকমু তা'রেকুস সালাত" নামায পরিত্যাগকারীর বিধান "নামায ত্যাগকারী কাফের".............১
তবে যদি কোন ব্যক্তি একথা বলে যে, যে সব দলীলসমূহ নামায ত্যাগকারীকে কাফের হওয়ার প্রমাণ করে তা থেকে তাদেরকে বুঝায় যারা নামাযের অপরিহার্যতাকে অস্বীকার করে তা ত্যাগ করে একথা কি ঠিক নয়?? আমরা প্রতি উত্তরে বলতে পারি যে, এটা ঠিক নয় , কারণ তাতে দু'দিক হতে ত্রুটি দেখা দিবে .

প্রথমতঃ সেই গুনকে উপেক্ষা করা যার উপর বিধান রচনাকারী গুরুত্ব দিয়েছেন, এবং তার সাথে বিধান সংশ্লিষ্ট করেছেন . কারণ বিধান রচনাকারী নামায ত্যাগ করাকেই কুফরী বলে বিবেচিত করেছেন, নামায অস্বীকার শর্ত নয় . আর নামায প্রতিষ্ঠার উপর ধর্মীয় ভ্রাতৃত্বের স্থাপন হয় , নামাজের ফরজ হওয়া অঙ্গীকারের উপর নয় . তাই আল্লাহ একথা বলেন নাই, তারা যদি তাওবা করেও নামায ফরয (অপরিহার্য) হওয়ার অঙ্গীকার করে . আর নবী (সাঃ) একথা বলেননি যে মানুষ ও শির্ক ও কুফরীর মধ্যে পৃথক কারী হচ্ছে নামাযের ফরয হওয়াকে অস্বীকার করা . অথবা একথাও বলেননি যে আমাদের ও তাদের (কাফেরদের ) মধ্যে চুক্তি হচ্ছে নামাযের অপরিহার্য্যতাকে স্বীকার করা . অতপর যে ব্যক্তি নামাযের অপরিহার্য্যতাকে অস্বীকার করবে সে কাফের হয়ে যাবে . আর যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্য তাই হত তাথেকে প্রত্যাবর্তন সেই কথার পরিপন্থী হত যে ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে অবতীর্ণ হয়েছে .
আল্লাহ বলেনঃ وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِكُلِّ شَيْءٍ আমি আপনার প্রতি এই কিতাব নাযিল করেছি যা প্রত্যেকটি বিষয়ে সুস্পষ্ট বর্ণনা দানকারী ( আন নাহাল ৮৯) আরও তিনি স্বীয় নবীকে সম্বোধন করে বলেনঃ وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ এবং আপনার কাছে আমি যিকির(স্মরণিকা) অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐসব বিষয় ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষন কতরে থাক, যে গুলো তাদের জন্য নাযিল করা হয়েছে, ( আন নাহাল ৪৪)

দ্বিতীয়ত : এমন এক গুণের লক্ষ্য রাখা যার উপর বিধান রচনাকারী কোন বিধানের ভিত্তি রাখেন নাই . পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের অপরিহার্য্যতাকে অস্বীকার করা সেই ব্যক্তির কুফরীর কারণ যে তার ফরয হওয়া থেকে অজ্ঞাত নয়, সেই ব্যক্তি নামায পড়ুক আর নাই পড়ুক . অতএব,যদি কোন ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামায পরে, এবং নামাযের সমস্ত শর্তাবলী, আরকান সমূহ, ওয়াজিব ও মুসতাহাব বস্ত্ত সহ তা প্রতিষ্ঠিত করে, কিন্তু তার ফরয হওয়াকে বিনা কারণে অস্বীকার করে তবে সে কাফের বলে বিবেচির হবে অথচ সে নামায ত্যাগ করেনি (এখানে ) এটা থেকে একথা পরিস্কার হয়ে গেল যে, এই সমস্ত দলীলকে কেবল সেই ব্যক্তির উপর প্রযোজ্য করা, যে ব্যক্তি নামাযের অপরিহার্য্যতাকে অস্বীকার করে তা বর্জন করে, একথা ঠিক নয় . বরং সঠিক কথা এই যে, নামায ত্যাগকারী কাফের, যে কুফরী ইসলাম হতে বহিস্কার করে দেয় . যেমন কি ইবনে আবী হাতিম স্বীয় সুনানে ওবাদ বিন সামেত হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেনঃ রাসুল (সাঃ) আমাদিগকে অসীয়ত করেন : আল্লাহর সাথে কোন বস্ত্তকে অংশীদার স্থাপন কর না এবং ইচ্ছাকৃত ভাবে নামায ত্যাগ কর না , কারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে নামায পরিত্যাগ করল সে মিল্লাত ইসলাম থেকে বহিস্কার হয়ে গেল .

আর আমরা যদি অস্বীকার কৃত নামাজ ত্যাগের অর্থ বুঝি, তাহলে বিশেষ ভাবে নামাযকেই উল্লেখ করার কোনই অর্থ থাকেনা, কারন এই হুকুম (বিধান) যাকাত রোজা ও হজ্জ সবলে শামিল করে, তাই যে ব্যক্তি উপরোক্ত জিনিসের কোন একটিকে তার ফরয হওয়াকে অস্বীকার করে ত্যাগ করে সে ব্যক্তি কাফের হয়ে যাবে, যদি সে তার বিধান হতে অজ্ঞ না থাকে . আর যেমন নামায ত্যাগকারীর কুফরী কুরআন ও হাদীসের দলীল সম্মত, তেমনি জ্ঞান ও যুক্তি সম্মত . নামায ত্যাগ করে কি করে কোন ব্যক্তির ঈমান থাকতে পারে ? যে নামায হচ্ছে দ্বীনের খুটিঁ . আর যার ফজিলত ও মাহাত্ম বর্ণনা এমন ভাবে হয়েছে যাতে প্রত্যেক জ্ঞানী মু'মিন ব্যক্তি তা প্রতিষ্ঠার জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে অগ্রসর হবে . আর সেই নামায ত্যাগের উপর এমন শাস্তি বর্ণিত হয়েছে যাতে প্রত্যেক জ্ঞানী মু'মিন তা বিনষ্ট ও ত্যাগ করা হতে বিরত থাকবে . এতদসত্ত্বেও নামায ত্যাগকারীর ঈমান থাকতে পারেনা . তবে কেউ যদি একথা বলে যে, নামাজ ত্যাগকারীর ক্ষেত্রে কুফরীর অর্থ অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা কি হতে পারেনা ? ( কুফরে মিল্লাত নয় ) যা ইসলাম হতে বহিস্কার করে দেয় . অথবা তার অর্থ বৃহত্তর কুফরী নয় বরং ক্ষুদ্রতর কুফরী ? অতএব এটা ঠিক তেমনি যেমন অন্য হাদীসে নবী (সাঃ) বলেনঃ মানুষের দুটি কর্ম যা হচ্ছেঃ কারও বংশে কটুক্তি করা এবং মৃতব্যক্তির জন্য (উচ্চঃস্বর করে কাঁদা). আর যেমন নবী (সাঃ) বলেনঃ কোন মুসলিমকে গালিগালাজ ফাসেকী কাজ এবং মুসলিম ব্যক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করা কুফরী কাজ, আরও এধরনের হাদীস রয়েছে .   (তার) উত্তরে আমরা বলব যে এই নামাজ ত্যাগের কুফরীকে উপরোক্ত কাজের ধারনা করা কয়েকটি কারণে সঠিক নয়ঃ

প্রথমতঃ নবী (সাঃ) নামাযকে কুফর ও ঈমানের মাঝে ও মু'মিনদের ও কাফেরের মাঝে পৃথককারী সীমা নির্দ্ধারিত করেছেন . আর সীমা তার অন্তর্ভুক্ত এলাকাকে অন্যান্য ক্ষেত্র হতে পৃথক করে, কারণ দুটি ক্ষেত্র একে অপরের পরিপন্থী . তাই একে অপরের মধ্যে অন্তর্নিহিত হতে পারে না.

দ্বিতীয়ঃ নামাজ হচ্ছে ইসলামের রূকন (স্তম্ভ) সমূহের একটি রূকন কাজেই উহা পরিত্যাগকারীকে যখন কাফের বলা হয়েছে, তখন সেই কুফরী এমনই বিষয় হবে যা ইসলাম হতে বহিস্কার করে দেয় . কারণ সে ব্যক্তি ইসলামের রূকন সমূহের একটি রূকনকে ধবংস করল . কিন্তু তাদের ব্যাপারটা ভিন্ন যারা কুফরীর কোন কাজ করে ফেলল .

 তৃতীয়ঃ এ ব্যাপারে অনেক দলীল রয়েছে যা হতে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, নামায বর্জনকারী এমন কাফের যা ইসলাম হতে বহিস্কার করে দেয় . তাই কুফরীর সেই অর্থই নেয়া আবশ্যক যা দলীল সমূহ প্রমাণ করে যেন এই সমস্ত দলীল একে অপরের অনুকূলে হয়ে যায় .

চতুর্থঃ  ( এখানে) কুফরের ব্যবহারের(দলীলসমূহ) বিভিন্নতা দেখা যায় . তাই নামায ত্যাগের ব্যাপারে নবী (সাঃ) ফর্মায়েছেন :  بين الرجل و بين الشرك و الكفر ترك الصلاة  এখানে 'الكفر' আলকুফর শব্দটি 'ال '  (আলিফ লাম)এর সঙ্গে ব্যবহার করা যাছে যা প্রমান করে যে কুফরের অর্থ হচ্ছে প্রকৃত "কুফরী" . কিন্তু ' كفر ' (আলিফ লাম )ব্যতীত"  দ্বারা অথবা  ' كفر ' কাফারা কর্মসূচক বাক্যের দ্বারা যা বুঝা যায় সেই কর্ম হচ্ছে কুফরী অন্তর্গত, অথবা কাফারা কর্মসূচক বাক্যের দ্বারা যা বুঝা যায় সেই কর্ম হচ্ছে কুফরীর অন্তর্গত, অথবা সে ব্যক্তি এই কাজের কুফরী করল মাত্র কিন্তু সেই কুফরী তাকে ইসলাম হতে বহিস্কার করে না .

শায়খুল ইসলাম ইব্লে তাইমিয়াহ রহমাতুল্লাহ আলায়হি স্বীয় কিতাব (ইকতিয়াও সিরাতিল মুসতাকিমে , ৭০ পৃঃ ছাপা সুন্নতে মুহাম্মাদীয়া) এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেনঃ إثنتان فى الناس هما بهم كفر  " মানুষের মাঝে দুটি বস্ত্ত হচ্ছে কুফরের অন্তর্ভুক্ত "  তিনি বলেনঃ এখানে কুফরীর অর্থ (উভয় কাজ দুটিই হচ্ছে কুফরী)  যা মানুষের মধ্যে বিদ্যমান, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, যে কোন ব্যক্তির মধ্যে কুফরীর কোন শাখা পাওয়া যাবে সে সম্পর্ণ রূপে কাফের হয়ে যাবে  . যেমন কি একথা যে, যে কোন ব্যক্তির মধ্যে ঈমানের কোন একটি শাখা পাওয়া গেলে সে উহাতেই মু'মিন হতে পারেনা, যতক্ষন পর্যন্ত তার মধ্যে মূল ঈমান না আসবে . তাই 'ال ' দ্বারা যে কুফর ব্যবহার করা হয়েছে - যেমন , রাসূল (সাঃ) এর উক্তি --   بين الرجل وبين الشرك و الكفر ترك الصلاة  "নিশ্চয় বান্দা ও শির্ক ও কুফরীর মাঝে পৃথককারী বিষয় হচ্ছে নামায ত্যাগ করা"  আর যে হাঁ সূচক বাক্য ال (আলিফ লাম ) ব্যতীত ব্যবহৃত হয়েছে দুটোর মাঝে অনেক তফাৎ রয়েছে . সুতরাং উপরোক্ত দলীল সমূহ দ্বারা একথা পরিস্কার হয়ে গেল যে শরিয়তী কোন কারণ ব্যতীত নামাজ ত্যাগকারী কাফের, সেই কুফরীতে নিমজ্জিত যা ইসলাম থেকে বহিস্কার করে দেয় . তাহলে সেই মতই সঠিক যা ইমাম আহম্মদ বিন হাম্বল আবলম্বন করেছেন .  আর এটাই হচ্ছে ইমাম শাফেয়ীর দুটি উক্তির অন্যতম . যা আল্লামা ইবনে কাসীর (রাহমাতুল্লাহ) এই আয়াতের তাফসীরে উল্লেখ করেছেনঃ   فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ ۖ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا  তারপর এদের পর এমন নালায়েক লোকেরা এদের স্থলাভিষিক্ত হলো যারা নামায নষ্ট করলো এবং প্রবৃত্তির কামনার দাসত্ব করলো৷ তাই শীঘ্রই তারা গোমরাহীর পরিণামের মুখোমুখি হবে৷ ( মারইয়াম ৫৯)

আর ইবনুল কাইয়েম নিজ কিতাবে (আস সালাত ) একথা উল্লেখ করেছেন যে, এটা হচ্ছে ইমাম শাফেয়ীর দুটি মতের অন্যতম . এবং ইমাম তাহাভী (রহঃ) স্বয়ং ইমাম শাফেয়ী হতে নকল করেছেন . আর এই উক্তির ভিত্তিতেই অধিকাংশ সাহাবাগন একমত হয়েছে এবং অনেকে এ ব্যাপারে সাহাবাগণের ইজমা এর কথা উল্লেখ করেছেন, তাঁদের সকলের মতে নামাজ ত্যাগকারী কাফের .

আব্দুল্লাহ বিন সাকিক বলেনঃ  --- চলবে................................