"হুকমু তা'রেকুস সালাত" নামায পরিত্যাগকারীর বিধান "নামায ত্যাগকারী কাফের".............১

সকল প্রশংসা এক আল্লাহর জন্য,যিনি একক তাঁর কম শরিক বা অংশীদার নেই, যিনি নিখিল বিশ্বের মালিক, যিনি ইসলামকে মুসলিম উম্মাহ-র জন্য নির্বাচন করেছেন ।
দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁরই বিশেষ বান্দা ও রাসুল আমাদের নবী মুহাম্মদ (সাঃ)এর উপর ।
"হুকমু তা'রেকুস সালাত" নামায পরিত্যাগকারীর বিধান "নামায ত্যাগকারী কাফের" আমার এই লেখায় নামায ত্যাগকারী বিধান সম্পর্কে যে সকল মাসয়ালার সমাবেশ ঘটবে তা উল্লেখিত । নামায ত্যাগকারী ইসলামের দৃষ্টিতে , মালিকানা বা অভিভাবকত্ব ক্ষুন্ন , নামায ত্যাগকারীর আত্বীয়দের মীরাস লাভে অন্তরায় সৃষ্টি , নামায ত্যাগকারী মক্কা ও তার হারাম এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ , তার জবেহকৃত গৃহপালিত জ্ন্ত্ত হারাম , মৃত্যুর পর জানাযা ও মাগফেরাত কামনা হারাম , মুসলিম মেয়ের সাথে বিয়ে হারাম ,এধরনের বহু মাসয়ালা মাসায়েল সংক্ষিপ্ত আকারে আপনাদের কাছে তুলে ধরব ।
আজকাল সচরাচর অধিক সংখ্যক মুসলিম এমন রয়েছে যারা নামায উদাসীন থাকে ই তা বিনষ্ট করে এমনকি অনেকে অলসতা ও অবহেলা করে তা তা সম্পর্ণরূপে পরিত্যাগ করে । এটা এমন একটা জটিল সমস্যা যাতে আজকের মানুষেরা জর্জরিত । আর ইসলামী উম্মাহ-র আলেমগন ও ইমামগন শুরু থাকে আজ পর্যন্ত এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষন করে আসছেন ; আমরা এ সম্বন্ধে যা কিছু সম্ভব সঠিক প্রমান সহকারে পেশ করব । আমাদের আলোচনায় দুটি পরিচ্ছেদে ইনসাআল্লাহ সমাপ্ত হবে ।
<b>প্রথম পরিচ্ছেদঃ নামায ত্যাগকারী সম্পর্কে বিধান ।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদঃ নামায ত্যাগ করার কারণে বা অন্য কোন কারণে মুরতাদ (ইসলাম বিমূখ )হলে তার বিধানাবলী ।</b>
মহান আল্লাহর নিকট আমাদের এই প্রার্থনা করি যেন আমরা এ ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের সন্ধান পেতে সক্ষম হই ।

প্রথম পরিচ্ছেদ
নামায ত্যাগকারী সম্পর্কে বিধানঃ ----

একটি জ্ঞানপূর্ণ মাসয়ালা সমূহের অন্যতম একটি (বিরাট) মাসয়ালা, যে ব্যাপারে শূরু থেকে আজ পর্যন্ত বিদ্বানগণ মতভেদ করে আসছেন , তাই এই বিষয়ে ইমাম আহম্মদ বিন হাম্বল বলেনঃ " নামায ত্যাগকারী কাফের" হয়ে যায়, আর এমন কুফরীতে নিমজ্জিত হয় যা দ্বীন ইসলামের গন্ডি হতে বহিস্কার করে দেয়  ।  তাকে হত্যা করা হবে যদি না সে তওবা করে নামায না প্রতিষ্ঠা করে।

ইমাম আবু হানীফা, মালেক ও শাফেয়ী (রহঃ) বলেনঃ সে ফাসেক হয় কাফের হয় না  ।
অতঃপর উপরোল্লিখিত ইমামগণের নিকট এ ব্যাপারেও মতভেদ রয়েছে যে তাকে হত্যা করা হবে কি না ?  ইমান মালেক ও শাফেয়ী রহঃ বলেন-তাকে হদ (শাস্তি) স্বরূপ হত্যা করা হবে, আর ইমাম আবু হানীফা রহঃ বলেনঃ তাকে শাসন স্বরূপ শাস্তি দেয়া হবে হত্যা করা হবে না ।

কাজেই এই মাসয়ালা যখন দ্বিমত বিশিষ্ট মাসয়ালা সমূহের অর্ন্তগত তখন আল্লাহর বিধানের দিকে ও সুন্নাতে রাসুলের সাঃ দিকে আমাদের প্রত্যাবর্তন করা আবশ্যক । কারণ মহান আল্লাহ বলেনঃ  وَمَا اخْتَلَفْتُمْ فِيهِ مِنْ شَيْءٍ فَحُكْمُهُ إِلَى اللَّهِ তোমরা যে বিষয়েই মতভেদ কর, তার ফয়সালা করা আল্লাহরই কাজ । (আশ শুরা ১০)
আল্লাহ আরো বলেনঃ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।( আন নিসা ৫৯)
আর মতভেদ কারীগণ একে অপরের মত মেনে নিতে পারেন না, কারন প্রত্যেকই নিজের মতকে সঠিক ও নির্ভুল মনে করেন । আর একজনের মত অন্য জনের মতের উপর গ্রহণের দিক অগ্রাধিকার নয় । তাই উভয়ের মত বিরোধের নিষ্পতির জন্য একজন বিচারকের দরকার, আর সেই বিচারকের ফয়সালার দিকে প্রত্যাবর্তন করা আবশ্যক , আর সেই বিচারের মাধ্যম হচ্ছে আল্লাহর কিতাব (কুরআন) ও রাসুলে (সাঃ) এরসুন্নত ( হাদীস) ।  
যখন আমরা এই সমস্যাকে কিতাব ও সুন্নার দিকে সমর্পন করব ও উহার মাপকাঠিতে যাচাই করব তখন আমরা এই ফয়সালা উপনীত হতে পারব যে, কিতাব ও সুন্নাহ নামাজ ত্যাগকারীকে কাফের ঘোষনা করেছে, যা এমন মারাত্মক ধরণের কুফরী যা দ্বীন ইসলাম হতে বহিস্কার করে দেয় ।
দলীল সমুহঃ ---
প্রথম : পবিত্র কুরআন হতে :- মহান আল্লাহ সূরা তাওবায় এরশাদ করেনঃ فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ অবশ্য তারা যদি তওবা করে, নামায কায়েম করে আর যাকাত আদায় করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই। (আততাওবা ১১)  এবং সূরা মারিয়মে আল্লাহ বলেনঃ فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ ۖ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا  / إِلَّا مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَأُولَٰئِكَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُونَ شَيْئًا অতঃপর তাদের পরে এল অপদার্থ পরবর্তীরা। তারা নামায নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। সুতরাং তারা অচিরেই পথভ্রষ্টতা প্রত্যক্ষ করবে / কিন্তু তারা ব্যতীত, যারা তওবা করেছে, বিশ্বাস স্থাপন করেছে। সুতরাং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের উপর কোন জুলুম করা হবে না।(সূরা মারিযাম ৫৯-৬০)  দ্বিতীয় আয়াতে যা সূরা মারইয়ামে থেকে উল্লেখিত তা নামাজ ত্যাগকারীর কুফরী এই ভাবে প্রমান করে যে আল্লাহ পাক নামায বিনষ্টকারী ও মনের লালসা বাসনার অনুসরণ কারীদের সম্বন্ধে বলেনঃ إِلَّا مَنْ تَابَ وَآمَنَ অর্থাৎ "কিন্তু যারা তাওবা করবে এবং ঈমান আনবে"  একথা বুঝায় যে তারা মামাজ বিনষ্ট করার সময়কালে ও লালসা বাসনার অনুসরন কালে মু'মিন ছিলনা ।  প্রথম আয়াত যা সুরা তাওবা থেকে উদ্ধৃত যা নামায ত্যাগ কারীর কুফরী এইভাবে প্রকট করে যে মহান আল্লাহ বহুত্ববাওদীদের ও আমাদের মাঝে শর্তারোপ করেছেন ।
১ / যেন তার শির্ক হতে তাওবা করে ।
২ / যেন তারা নামায প্রতিষ্ঠিত করে ।
৩ / আর যেন যাকাত প্রদান করে ।
তত্পর তারা যদি শির্ক হতে তাওবা করে কিন্তু নামায কায়েম না করে ও যাকাত প্রদান না করে তবে তারা আমাদের ভাই নয় ।  আর যদি তারা নামায কায়েম করে কিন্তু যাকাত না দেয় তবুও তারা আমাদের ভাই হতে পারে না । আর দ্বীনি ভ্রাতৃত্ব তখনই পুরোপুরিভাবে লোপ পায় যখন মানুষ দ্বীন থেকে সম্পূর্নরূপে বহিস্কৃত হয় । অতএব ফাসেকীর বা ছোট কুফরীর (কৃতজ্ঞতার)কারনে দ্বীনি ভ্রাতৃত্ব খতম হতে পারেনা । "হত্যার পরিবর্তে হত্যা"-র (কেসাসের) আয়াতে মহান আল্লাহ কি বলেছেন তা কি লক্ষ্য করেছেন? আল্লাহ বলেনঃ  فَمَنْ عُفِيَ لَهُ مِنْ أَخِيهِ شَيْءٌ فَاتِّبَاعٌ بِالْمَعْرُوفِ وَأَدَاءٌ إِلَيْهِ بِإِحْسَانٍ  অবশ্য তার (হত্যাকারীর ) ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়, তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। (আল বাকারাহ ১৭৮) এখানে আল্লাহ ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যাকারীকে হত্যাকৃত ব্যক্তির ভাই বলে আখ্যায়িত করেছেন, অথচ ইচ্ছাকৃত ভাবে হত্যা করা কবিরা গোনাহ সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গোনাহ । কারন এহান আল্লাহ বলেনঃ وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيهَا وَغَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيمًا যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাক্রমে মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্যে ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।(আন নিসা৯৩ )
অতপরঃ মুমিনদের দুই দল যারা পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে তাদের সম্বন্ধে মহান আল্লাহ যা আলোচনা করেছেন তা কি একটু ভেবে দেখেছেন ? আল্লাহ বলেনঃ وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا যদি মুমিনদের দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে।إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে (হুজুরাত -৯-১০) মহান আল্লাহ এই আয়াতে সম্পর্ক গঠনকারী দলের ও যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত দু'দলের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের কথা প্রকট করলেন অথচ মুমিন ব্যক্তির সঙ্গে লড়াই করা কুফরী কাজ । যেমন সহীহ ও বিশুদ্ধ হাদীসে প্রমাণিত আছে যা ইমাম বুখারী রাহেমাহুল্লা ও অন্যান্য ইমামগন ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ননা করেন । নবী (সাঃ) বলেছেনঃ سبات المسلم,وقتاله كفر মুসলিম ব্যক্তিকে গালিগালাজ করা ফাসেকী কাজ, আর তার বিরূদ্ধে লড়াই করা কুফরী কাজ । কিন্তু এটা এমনই কুফরী যে যা দ্বীন হতে বহিস্কারকারী নয় । কারন যদি প্রকৃত পক্ষে দ্বীন হতে বহিস্কারকারী হত তবে সেই কুফরীর সাথে ঈমানী ভ্রাতৃত্ব থাকত না, অথচ উক্ত আয়াতে লড়াইয়ে লিপ্ত থাকা সত্বেও ঈমানী ভ্রাতৃত্ব বহাল থাকা প্রমান করে । এখানে উপলব্ধি করা গেল যে, নামাজ ত্যাগ করা এমনই কুফরী কাজ যা নামাজ ত্যাগকারীকে দ্বীন ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়,  কারণ তা যদি ফাসেকী কাজ অথবা ছোট কুফরী হত তা হলে ধর্মীয় ভ্রাতৃত্ব নামাজ ত্যাগের জন্য খতম হয়ে যেত না , যেমন মু'মিন ব্যক্তির হত্যার ও তার বিরুদ্ধে লড়াই করলেও দ্বীনি ভ্রাতৃত্ব বিলুপ্ত হয় না ।

তবে যদি কেউ প্রশ্ন করে যে , যাকাত অনাদায়ের জন্য কি কেউ কাফের হযে যাবে ? যেমন সূরা তাওবার আয়াত থেকে বুঝা যায় ।

তার প্রতি উত্তর আমরা বলতে পারি যে, যাকাত ত্যাগকারিও কাফের এটা কতিপয় দিদ্বানগণের অভিমত এবং ইমাম আহম্মদ বিন হাম্বল রাহেমাহুল্লাহ থেকে দুটি মত বর্ণিত হয়েছে তার একটি
কিন্তু আমাদের নিকট সঠিক মত এইযে ,সে কাফের হবেনা ,অবশ্য তার জন্য ভয়ানক শাস্তি রয়েছে যা মহান আল্লাহ তার কিতাব ও নবী (সাঃ)তাঁর হাদীসে উল্লেখ করেছেন। সেই সব হাদীস সমূহের একটি হাদীস যা সাহাবী আবু হোরাইরা হতে বর্ণিত নবী (সাঃ)যাকাত অনাদায়কারীর শাস্তির কথা আলোচনা করতে গিয়ে পরিশেষে বলেছেনঃ অতঃপর সে তার পথ দেখা পাবে হয় জান্নাতের দিকে আর না হয় জাহান্নামের দিকে । ইমাম মুসলিম রাহেমাহুল্লাহ "যাকাত অনাদায়্কারীর পাপ"-নামক পরিচ্ছেদে উক্ত হাদীসটি বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করেন এবং এই হাদীসটি প্রমান করে যে "যাকাত অনাদায়কারী কাফের নয় কারন সে যদি কাফের হয়ে যেত তাহলে তার জন্য জান্নাত যাবার কোন অবকাশ থাকত না ।
অতএব এই হাদীসটির (منطوق)(বাহ্যিক অর্থ)সূরা তাওবার আয়াতে (مفهون)ভাবার্থের উপর প্রাধান্য পাবে । কারন (منطوق)বাহ্যিক অর্থকে (مفهون)ভাবার্থে উপর প্রাধান্য দেয়া হবে , যেমন অসুলে ফেকাহ (ফেকাহর কায়দা কানুনে ) বলা হয়েছে ।

দ্বিতীয়তঃ হাদীস হতে ---

১/ নবী সাঃ এরশাদ করেনঃ ان بين الرجل وبين الشرك و الكفر ترك الصلاة "নিশ্চয় মানুষ ও শির্ক ও কুফরীর মাঝে পৃথককারী বিষয় হচ্ছে নামায ত্যাগ করা" উক্ত হাদীসটি ইমাম মুসলিম ঈমানের অধ্যায় আব্দুল্লাহর পুত্র জাবের হতে আর তিনি নবী সাঃ বর্ননা করেন ।

২/ العهد الذى بيننا وبينهم الصلاة فمن تركها فقد نفر "আমাদের ও তাদের (কাফেরদের)মাঝে চুক্তি হচ্ছে নামাযের,অতএব যে ব্যক্তি নামায ত্যাগ করল সে কুফরী করল ।" উক্ত হাদীসটি ইমাম আহম্মদ ,আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও মাজাহ রাহমাতুল্লাহ বর্ননা করেছেন ।
আর এখানে কুফরীর অর্থ হলো,এমন কুফরী যা মানুষকে মিল্লাতে ইসলামী থেকে বহিস্কার করে দেয় । কারন নবী (সাঃ)নামাযকে মু'মিন ও কাফেরদের মাঝে পৃথককারী বলে ঘোষনা করেছেন ।
আর এটা সকলের নিকট সুবিদিত যে,কুফরী মিল্লাত,ইসলামী মিল্লাতের পরিপন্থী । তাই যে ব্যক্তি এই অঙ্গীকার পূর্ণ না করবে সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে ।

৩/ সহীহ মুসলিমে উম্মে সালামা হতে বর্ণিত নবী (সাঃ)বলেনঃ তোমাদের ওপর এমন সব লোকও শাসন কর্তৃত্ব চালাবেন যাদের অনেক কথাকে তোমরা মারুফ (বৈধ) ও অনেক কথাকে মুনকার ( অবৈধ ) পাবে৷ এ ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি তাদের মুনকারের বিরুদ্ধে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে, সে দায়মুক্ত হয়ে গেছে৷ আর যে ব্যক্তি তা অপছন্দ করেছে, সেও বেঁচে গেছে৷ কিন্তু যে ব্যক্তি তাতে সন্তুষ্টি হয়েছে এবং তার অনুসরণ করেছে সে পাকড়াও হবে৷ সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেন, তাহলে এ ধরনে শাসকদের শাসনামলে কি আমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করবো না ? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাব দেনঃ না, যতদিন তারা নামায পড়তে থাকবে (ততদিন তাদের সাথে যুদ্ধ করতে পারবে না)৷ -(মুসলিম)

৪/ আরো সহীহ মুসলিমে আউফ বিন মালেক হতে বর্ণিত নবী (সাঃ)বলেনঃ তোমাদের নিকৃষ্টতম সরদার হচ্ছে তারা যারা তোমাদেরকে ঘৃণা করে এবং তোমরা তাদেরকে ঘৃণা করো, তোমরা তাদের প্রতি লানত বর্ষণ করতে থাকো এবং তারা তোমাদের প্রতি লানত বর্ষণ করতে থাকে৷ সাহাবীগণ আরজ করনে, হে আল্লাহর রসূল৷ যখন এ অবস্থার সৃষ্টি হয় তখন কি আমরা তাদের মোকাবিলা করার জন্য মাথা তুলে দাঁড়াবো না ? জবাব দেনঃ না, যতদিন তারা তোমাদের মধ্যে নামায কায়েম করতে থাকবে ! না, যতদিন তারা তোমাদের মধ্যে নামায কায়েম করতে থাকবে!
অর্থাৎ নামায পরিত্যাগ করা এমন একটি আলামত হিসেবে বিবেচিত হবে, যা থেকে সুস্পষ্টভাবে জানা যাবে যে, তারা আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য থেকে বের হয়ে গেছে৷ এ অবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা ন্যায়সংগত হবে৷ আর ততক্ষন পর্যন্ত তাদের বিরূদ্ধে বিদ্রোহ বা যুদ্ধ করা জায়েয নয় যতক্ষনে পর্যন্ত তারা প্রকাশ্য কুফরীতে লিপ্ত হয় । এই ব্যাপারে আমাদের নিকট মহান আল্লাহর তরফ হতে অকাট্য দলীল রয়েছে । কারন এ ব্যাপারে ওবাদ বিন আস সতেম (রাঃ)হতে বর্ণিত হাদীস রয়েছে তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ)আমাদিগকে (ইসলামের দাওয়াত দিলেন, অতঃপর আমরা তাঁর সঙ্গে বাইয়াত করলাম,আমাদের সাথে যেসব ব্যাপারে বাইয়াত নেয়া হল তা হল এই যে,আমরা আনুগত্য ও কথামত চলার বাইয়াত করেছি,তা সুখে হোক বা দুঃখে হোক কঠোরতা হোক বা সরলতাই হোক বা আমাদের উপর অন্যদের প্রাধান্য দেয়া হোক । আর আমরা যেন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির নিকট হতে নেতৃত্ব ছিনিয়ে না নিই । তিনি বল্লেন হ্যাঁ,তবে যদি তোমরা প্রকাশ্য কুফরী দেখ যে ব্যাপারে তোমাদের নিকট আল্লাহর তরফ হতে সুস্পষ্ট প্রমাণ থেকে ।তবে বিদ্রোহ ঘোষনা করতে পার (বুখারী ও মুসলিম)
অতঃএব নামায ত্যাগ করার ফলে তাদের নেতৃবর্গের উপর থেকে আনুগত্য উঠিয়ে নেয়া বা তাদের সাথে তরবারী নিয়ে লড়াই করাকে যে ভাবে আখ্যায়িত করেছেন এর উপর নির্ভর করে নামায । ত্যাগ করা প্রকাশ্য কুফরী ইহাই আল্লাহর নিকট হতে আমাদের জন্য জলন্ত প্রমাণ ।

মূল কথা ; কুরআন বা হাদীসে কোথাও উহা উল্লেখিত নেই যে, নামায বর্জনকারী কাফের নয় কিংবা সে ঈমানদার । এব্যাপারে (অতিরিক্ত ) যা কিছু পাওয়া যায় তা হচ্ছে কতিপয় দলীল সমূহ যা তাওহীদের (আল্লাহর একত্বতার)ফজীলত ও মহাত্ম বর্ণনা করে , সে তাওহীদ হচ্ছেঃ এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে ,"আল্লাহ ব্যতীত কোন মা'বুদ নেই আর মুহাম্মদ (সাঃ)আল্লাহর রাসূল" । আর সেই সব দলীল সমূহ হয়তো কতক শর্তাবলীর সঙ্গে সম্পৃক্ত যা সেই দলিলেই বিদ্যমান, যে শর্ত হিসাবে নামায ত্যাগ করা সম্ভব হতে পারেনা । অথবা এমন বিশেষ অবস্থার সাথে জড়িত যাতে মানুষ নামায ত্যাগ করলে মা'যুর (অপারগ )বলে মনে করা যেতে পারে । অথবা সেই দলীল সমূহের ব্যাপকতা রয়েছে, তাকে নামায ত্যাগকারীর কুফরীর প্রমাণপঞ্জীর সাথে মিলিয়ে নিতে হবে । কারণ নামায ত্যাগকারীর কুফরীর দলীল সমূহ হচ্ছে খাস(বিশেষ অবস্থায় বলা হয়েছে)আর খাস (বিশেষ দলীল)'আমের'(ব্যাপকতাপূর্ণ দলিলের) উপর অগ্রাধিকার পাবে ।

তবে যদি কোন ব্যক্তি একথা বলে যে, যে সব দলীলসমূহ নামায ত্যাগকারীকে কাফের হওয়ার প্রমাণ করে তা থেকে তাদেরকে বুঝায় যারা নামাযের অপরিহার্যতাকে অস্বীকার করে তা ত্যাগ করে একথা কি ঠিক নয়??

"হুকমু তা'রেকুস সালাত" নামায পরিত্যাগকারীর বিধান "নামায ত্যাগকারী কাফের".............২ http://saharalotus.blogspot.com/2011/03/2.html