আর ইবনুল কাইয়েম নিজ কিতাবে (আস সালাত ) একথা উল্লেখ করেছেন যে, এটা হচ্ছে ইমাম শাফেয়ীর দুটি মতের অন্যতম . এবং ইমাম তাহাভী (রহঃ) স্বয়ং ইমাম শাফেয়ী হতে নকল করেছেন . আর এই উক্তির ভিত্তিতেই অধিকাংশ সাহাবাগন একমত হয়েছে এবং অনেকে এ ব্যাপারে সাহাবাগণের ইজমা এর কথা উল্লেখ করেছেন, তাঁদের সকলের মতে নামাজ ত্যাগকারী কাফের ।
আব্দুল্লাহ বিন সাকিক বলেনঃ নবী (সাঃ)মের সাহাবাগণ নামায ব্যতীত অন্য কোন আমল ত্যাগ করাকে কুফরী মনে করতেন না । (শুধু নামায পরিত্যাগ করাকে কুফরী মনে করতেন)(তিরমিযী ও আল হাকেম),বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী আল হাকেম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন ।
প্রখ্যাত ইমাম ইসহাক বিন রাহবিয়া বলেনঃ নবী (সাঃ)হতে বিশুদ্ধ সুত্রে বর্ণিত হয়েছে যে নামায ত্যাগকারী কাফের । আর এটাই হচ্ছে নবী (সাঃ) মের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত আলেমগণের মত যে ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ত্যাগকারী কোন কারণ ব্যতীত নামায ওয়াক্ত অতিক্রম করে দিলে সে কাফের ।
ইমাম ইবনে হাযম উল্লেখ করেন যে,(নামায ত্যাগকারী কাফের )একথা উমর ফারুক,আব্দুর রহমান ইবনে আউফ, মো'আয বিন জবাল,আবু হুরায়রা প্রমূখ সাহাবাগণ হতে বর্ণিত হয়েছে । অতঃপর বলেন আমরা উপরোক্ত সাহাবা কেরামগণের মধ্যে কোন মতবিরোধ পাইনি ।(একথা আল্লামা মুনযেরী স্বীয় কিতাব তারগীব ও তারহীবে নকল করেছেন)। তিনি আরও কতিপয় সাহাবাগনের নাম উল্লেখ করেন । যেমন আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ,আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস,জাবির বিন আব্দুল্লাহ এবং আবু দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহুম ) উপরোক্ত সাহাবাগন ব্যতীত অন্যেদের মধ্যে হলেনঃ ইমাম আহম্মদ বিন হাম্বল,ইসহাক বিনরাহওবিয়াহ,আব্দুল্লাহ বিন মুবারক, নাখয়ী,হাকাম বিন ওতায়রা,আইউব সুখশায়রা,যোহাইরা বিন হারব প্রমূখ ।
যদি কোন ব্যক্তি প্রশ্ন করে যে, সে সব দলীল সমূহের কি জবাব দেয়া যাবে? যা সেই দলের লোকেরা পেশ করে থাকে যাদের মত এই যে,নামায ত্যাগকারী কাফের নয় ।
তার উত্তরে আমরা বলব যে (তারা যেসব দলীল পেশ করে থাকে)তাতে কোথাও একথা নেই যে নামায ত্যাগকারী কাফের হয় না,অথবা সে মু'মিন হয়ে থাকবে অথবা সে জাহান্নামে যাবে না কিংবা সে জান্নাত লাভ করবে ,অথবা অনুরূপ কিছু ।
আর যে ব্যক্তি এসব দলিলসমূহ গভীর ভাবে চিন্তা ও গবেষণা করবে সে সমস্ত দলীল সমূহ কে পাঁচ ধরনের পাবে, তন্মধ্যে কোন একটিও সে সব দলীল ও প্রমাণের পরপন্থী নয় যা প্রমাণ করে যে নামায ত্যাগকারী হচ্ছে কাফের ।
প্রথম প্রকারঃ কতিপয় দুর্বল ও অসম্পূর্ণ হাদীস দ্বারা তারা নিজ মতকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন,কিন্তু তা কোন ফলদায়ক নয় ।
দ্বিতীয় প্রকারঃ এমন দলীল যার সঙ্গে প্রকৃত মাসয়ালা কোন সম্পর্ক নেই ।যেমন কেউ এই আয়াত পেশ করে থাকেনঃ إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ,(আন নিসা ৪৮)مَا دُونَ ذَٰلِكَ এর অর্থ হল, শির্ক থেকে ছোট গুনাহ । তার অর্থ এই নয় যে,"শির্ক ব্যতীত" । এই অর্থের সপক্ষে দলীল এই যে যে ব্যক্তি আল্লাহর ও তার রাসূল (সাঃ)যা সংবাদ দিয়েছেন তাকে মিথ্যা মনে করবে সে ব্যক্তি কাফের এবং এমনই কুফরী করল যে, যার কোন ক্ষমা নেই,অথচ তার এই গুনাহ শির্কের অন্তর্গত নয় ।আর একথা যদি মেনে নেয়া যায় যে "مَا دُونَ ذَٰلِكَ " এর অর্থ শির্ক ব্যতীত অন্যান্য গুনাহ হলে এটা হবে ব্যাপক অর্থপূর্ণ যা সে সব দলীল দ্বারা নির্দিষ্ট করা হয়েছে যা কুফরী প্রমান করে সেই শির্ক ও কুফুরী ব্যতীত যা ইসলাম হতে বহিস্কার করে দেয়, সেই কুফরী এমন গুনাহের অন্তর্ভূক্ত যা ক্ষমাহীন,যদিও তা শির্ক নয় ।
তৃতীয় প্রকারঃ যে সমস্ত দলীল সমূহ সাধারণ অর্থ বহণ করে তাহাকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে ঐ সমস্ত হাদীস দ্বারা যাহা প্রমান করে যে নামায ত্যাগ কারী কাফের (ইহাকে আরবী ভাষায় আ'ম খাস বলাহয়) যেমন নবী (সাঃ)এর হাদীস মু'আয বিন জাবাল হতে বর্ণিত - যে কোন বান্দা সাক্ষ্য দিবে যে , আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোন সত্ত্বা নেই ,এর মুহাম্মদ সাঃ আল্লাহরবান্দা ও রাসূল ,তবে আল্লাহ তাকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দেবেন এই হাদীসের বিভিন্ন শব্দ যা এসেছে তার মধ্যে এটা অন্যতম, এর এই ধরনের হাদীস বর্ণিত হুইছে আবু হোরায়রা,ওবাদা বিন সামেত এবং এতবান বিন মালিক হতে (রাযিয়াল্লাহু আনহুম )
চতুর্থ প্রকারঃ এমন আম (ব্যাপক অর্থবাহী )যা এমন বিষয়ের সঙ্গে সংস্লিষ্ট যার সাথে নামায ত্যাগ করা সম্ভব নয় ।যে সমস্ত দলীল সমূহ সাধারণ অর্থ বহন করে উহাকে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে এমন দলীল দিয়ে যেমন ইতবান বিন মালিক হতে বর্ণিত হাদীসে নবী (সাঃ)বলেনঃ আল্লাহ জাহান্নামের প্রতি সেই ব্যক্তিকে হারাম করেছেন যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় "لا إله إلا الله "(লাইলাহা ইল্লাল্লাহ)আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মা'বুদ নেই ।এবং এই কালেমা দ্বারা আল্লাহর সন্তষ্টি চায় (আল বুখারী)এমন আরো অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে ।যেমন রাসূল (সাঃ)বলেনঃ 'যে ব্যক্তি একথার সাক্ষ্য দিবে যে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ (মা'বুদ)নেই এর মুহাম্মদ (সাঃ)আল্লাহর রাসূল, অন্তর থেকে নিষ্ঠার সঙ্গে সাক্ষ্য দেবে ।আল্লাহ তাকে জাহান্নামের প্রতি হারাম করে দিবেন.(বুখারী)
এই দুটি সাক্ষ্যতে ইখলাস (আন্তরিকতা ও একনিষ্ঠতা)ও অন্তরের সততার শর্তারোপ করা হয়েছে, যা তাকে নামায ত্যাগ হতে বিরত রাখতে পারে। কারণ যে ব্যক্তি সততা ও একনিষ্ঠতার সঙ্গে এই সাক্ষ্য দেবে তার সততা ও একনিষ্ঠতা অবশ্যই তাকে নামায পড়তে বাধ্য করবে । আর এটাই আবশ্যক,কারণ নামায হচ্ছে ইসলামের স্তম্ভ ,আর তা হচ্ছে বান্দা ও তার প্রভুর মাঝে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যম । তাই যদি সে আল্লাহর সন্ত্তষ্টি লাভে সৎ হয় তবে অবশ্যই সেই কাজ করবে যা তার সন্ত্তষ্টি পর্যন্ত পৌছায় । আর এমন কাজ থেকে বিরত থাকবে যে কাজ তার এবং তার প্রভুর মাঝে সম্পর্কে অন্তরায় সৃষ্টি করে । অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি সাক্ষ্য প্রদান করল যে আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ(মা'বুদ) নেই আর মুহাম্মদ রাসূল (সাঃ) হলেন আল্লাহর প্রেরিত রাসূল ।তার এই সততা ও একনিষ্ঠতা অবশ্যই তাকে নামায প্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য করবে (আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ হয়ে ) এবং আল্লাহর রাসুলের (সাঃ)অনুসারী হয়ে যাবে । কারণ এসব হচ্ছে সেই সত্য সাক্ষীর আবশ্যকতার অন্তর্গত ।
পঞ্চম প্রকারঃ সেই সব দলীল সমূহ যা এমন অবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট যে অবস্থায় নামাজ ত্যাগ করা ওযর -আপত্তি গ্রহন যোগ্য। যেমন সেই হাদীস যা ইমাম ইবনে মাজাহ(রহঃ)হোযায়ফা বিন ইয়ামান হতে বর্ণনা করেছেন , তিনি বলেন নবী (সাঃ)বলেছেনঃ ইসলাম মুছে যাবে যেমন কাপড়ের-নকসা আস্তে আস্তে মুছে উঠে যায় -আল-হাদীস । তাতে রয়েছে যে মানুষের মধ্যে বৃদ্ধাদের একটা দল থেকে যাবে তারা বলবেঃ "আমাদের পূর্ব পুরুষদের এই কালেমা 'لا إله إلاالله লাইলাহা ইল্লাল্লাহ' আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই বলতে শুনেছি যার সত্যতা আমরাও স্বীকার করছি । সেলা নামক সাহাবী হোযায়ফাকে বলেনঃ শুধু লাইলাহা ইল্লাল্লাহ-তে কি হবে? অতচ তারা জানেনা যে নামায,রোযা,হজ্জ,যাকাত ও সদকা কি? হোযায়ফা তাদের দিকথেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন । অতঃপর তিনবার সেই কথা পুনুরুক্তি করলেন, হোযায়ফা কোন উত্তর দিলেন না । তৃতীয়বার তার দিকে ফিরে বললেন তিনবারঃ হে সেলা! এই কালেমা তাদেরকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দিবে । অতএব,সে সব মানুষ যাদেরকে এই কলেমা জাহান্নাম হতে মুক্তি দিল,তারা এ বিষয়ে অজ্ঞাত ছিল. কাজেই তারা যতটা পালন করেছে ততটাই তাদের শেষ সমর্থ ছিল । তাদের অবস্থা ঠিক সেই লোকদের মত যারা ইসলামের বিধি-নিষেধ নির্দ্ধারিত হওয়ার পূর্বেই মারা গিয়েছে । অথবা তাদের মত যারা বিধান বাস্তবায়নের শক্তি অর্জনের পূর্বেই মারা গিয়েছে, যেমন কি সেই ব্যক্তি যে তাওহীদ(একত্ববাদের)কালেমার সাক্ষ্য দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিধি-বিধান বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা অর্জনের পূর্বেই মারা গিয়েছে. অথবা দারুল কুফর (কাফেরের দেশে )ইসলাম গ্রহন করল ,অতঃপর ইসলামী (শরীয়তী) বিধি-বিধানের জ্ঞান লাভের সুযোগ পাওয়ার পূর্বেই মারা গেল ।
মোদ্দা কথা এই যে, নামায ত্যাগকারীকে কাফের মনে করে না তারা সে সব দলীল পেশ করে থাকে তা সেসব দলীলের তুলনায় দুর্বল যা নামায ত্যাগকারীকে কাফের বলে প্রমান করে । কারন(যারা কাফের না মনে করে )তারা যে দলীল পেশ করে থাকে সেগুলি যয়ীফ-দুর্বল ও অস্পষ্ট , অথবা যাতে মোটেই তার প্রমান নেই ।বিস্তারিত দেখতে পারেন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর অর্থ ও উহার শর্তসমূহ -------১--৬
অতএব 'নামায ত্যাগকারী কুফরী' এমন বলিষ্ট দলীল দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে গেল যে, যে দলীলের বিরুদ্ধে তার সমতুল্য কোন দলীল নেই । তাহলে তার উপর কুফরী ও মুরতাদ হওয়ার বিধান অবশ্যই প্রযোজ্য হবে ।
চলবে........"দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ"
আব্দুল্লাহ বিন সাকিক বলেনঃ নবী (সাঃ)মের সাহাবাগণ নামায ব্যতীত অন্য কোন আমল ত্যাগ করাকে কুফরী মনে করতেন না । (শুধু নামায পরিত্যাগ করাকে কুফরী মনে করতেন)(তিরমিযী ও আল হাকেম),বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী আল হাকেম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন ।
প্রখ্যাত ইমাম ইসহাক বিন রাহবিয়া বলেনঃ নবী (সাঃ)হতে বিশুদ্ধ সুত্রে বর্ণিত হয়েছে যে নামায ত্যাগকারী কাফের । আর এটাই হচ্ছে নবী (সাঃ) মের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত আলেমগণের মত যে ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ত্যাগকারী কোন কারণ ব্যতীত নামায ওয়াক্ত অতিক্রম করে দিলে সে কাফের ।
ইমাম ইবনে হাযম উল্লেখ করেন যে,(নামায ত্যাগকারী কাফের )একথা উমর ফারুক,আব্দুর রহমান ইবনে আউফ, মো'আয বিন জবাল,আবু হুরায়রা প্রমূখ সাহাবাগণ হতে বর্ণিত হয়েছে । অতঃপর বলেন আমরা উপরোক্ত সাহাবা কেরামগণের মধ্যে কোন মতবিরোধ পাইনি ।(একথা আল্লামা মুনযেরী স্বীয় কিতাব তারগীব ও তারহীবে নকল করেছেন)। তিনি আরও কতিপয় সাহাবাগনের নাম উল্লেখ করেন । যেমন আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ,আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস,জাবির বিন আব্দুল্লাহ এবং আবু দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহুম ) উপরোক্ত সাহাবাগন ব্যতীত অন্যেদের মধ্যে হলেনঃ ইমাম আহম্মদ বিন হাম্বল,ইসহাক বিনরাহওবিয়াহ,আব্দুল্লাহ বিন মুবারক, নাখয়ী,হাকাম বিন ওতায়রা,আইউব সুখশায়রা,যোহাইরা বিন হারব প্রমূখ ।
যদি কোন ব্যক্তি প্রশ্ন করে যে, সে সব দলীল সমূহের কি জবাব দেয়া যাবে? যা সেই দলের লোকেরা পেশ করে থাকে যাদের মত এই যে,নামায ত্যাগকারী কাফের নয় ।
তার উত্তরে আমরা বলব যে (তারা যেসব দলীল পেশ করে থাকে)তাতে কোথাও একথা নেই যে নামায ত্যাগকারী কাফের হয় না,অথবা সে মু'মিন হয়ে থাকবে অথবা সে জাহান্নামে যাবে না কিংবা সে জান্নাত লাভ করবে ,অথবা অনুরূপ কিছু ।
আর যে ব্যক্তি এসব দলিলসমূহ গভীর ভাবে চিন্তা ও গবেষণা করবে সে সমস্ত দলীল সমূহ কে পাঁচ ধরনের পাবে, তন্মধ্যে কোন একটিও সে সব দলীল ও প্রমাণের পরপন্থী নয় যা প্রমাণ করে যে নামায ত্যাগকারী হচ্ছে কাফের ।
প্রথম প্রকারঃ কতিপয় দুর্বল ও অসম্পূর্ণ হাদীস দ্বারা তারা নিজ মতকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন,কিন্তু তা কোন ফলদায়ক নয় ।
দ্বিতীয় প্রকারঃ এমন দলীল যার সঙ্গে প্রকৃত মাসয়ালা কোন সম্পর্ক নেই ।যেমন কেউ এই আয়াত পেশ করে থাকেনঃ إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ,(আন নিসা ৪৮)مَا دُونَ ذَٰلِكَ এর অর্থ হল, শির্ক থেকে ছোট গুনাহ । তার অর্থ এই নয় যে,"শির্ক ব্যতীত" । এই অর্থের সপক্ষে দলীল এই যে যে ব্যক্তি আল্লাহর ও তার রাসূল (সাঃ)যা সংবাদ দিয়েছেন তাকে মিথ্যা মনে করবে সে ব্যক্তি কাফের এবং এমনই কুফরী করল যে, যার কোন ক্ষমা নেই,অথচ তার এই গুনাহ শির্কের অন্তর্গত নয় ।আর একথা যদি মেনে নেয়া যায় যে "مَا دُونَ ذَٰلِكَ " এর অর্থ শির্ক ব্যতীত অন্যান্য গুনাহ হলে এটা হবে ব্যাপক অর্থপূর্ণ যা সে সব দলীল দ্বারা নির্দিষ্ট করা হয়েছে যা কুফরী প্রমান করে সেই শির্ক ও কুফুরী ব্যতীত যা ইসলাম হতে বহিস্কার করে দেয়, সেই কুফরী এমন গুনাহের অন্তর্ভূক্ত যা ক্ষমাহীন,যদিও তা শির্ক নয় ।
তৃতীয় প্রকারঃ যে সমস্ত দলীল সমূহ সাধারণ অর্থ বহণ করে তাহাকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে ঐ সমস্ত হাদীস দ্বারা যাহা প্রমান করে যে নামায ত্যাগ কারী কাফের (ইহাকে আরবী ভাষায় আ'ম খাস বলাহয়) যেমন নবী (সাঃ)এর হাদীস মু'আয বিন জাবাল হতে বর্ণিত - যে কোন বান্দা সাক্ষ্য দিবে যে , আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোন সত্ত্বা নেই ,এর মুহাম্মদ সাঃ আল্লাহরবান্দা ও রাসূল ,তবে আল্লাহ তাকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দেবেন এই হাদীসের বিভিন্ন শব্দ যা এসেছে তার মধ্যে এটা অন্যতম, এর এই ধরনের হাদীস বর্ণিত হুইছে আবু হোরায়রা,ওবাদা বিন সামেত এবং এতবান বিন মালিক হতে (রাযিয়াল্লাহু আনহুম )
চতুর্থ প্রকারঃ এমন আম (ব্যাপক অর্থবাহী )যা এমন বিষয়ের সঙ্গে সংস্লিষ্ট যার সাথে নামায ত্যাগ করা সম্ভব নয় ।যে সমস্ত দলীল সমূহ সাধারণ অর্থ বহন করে উহাকে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে এমন দলীল দিয়ে যেমন ইতবান বিন মালিক হতে বর্ণিত হাদীসে নবী (সাঃ)বলেনঃ আল্লাহ জাহান্নামের প্রতি সেই ব্যক্তিকে হারাম করেছেন যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় "لا إله إلا الله "(লাইলাহা ইল্লাল্লাহ)আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মা'বুদ নেই ।এবং এই কালেমা দ্বারা আল্লাহর সন্তষ্টি চায় (আল বুখারী)এমন আরো অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে ।যেমন রাসূল (সাঃ)বলেনঃ 'যে ব্যক্তি একথার সাক্ষ্য দিবে যে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ (মা'বুদ)নেই এর মুহাম্মদ (সাঃ)আল্লাহর রাসূল, অন্তর থেকে নিষ্ঠার সঙ্গে সাক্ষ্য দেবে ।আল্লাহ তাকে জাহান্নামের প্রতি হারাম করে দিবেন.(বুখারী)
এই দুটি সাক্ষ্যতে ইখলাস (আন্তরিকতা ও একনিষ্ঠতা)ও অন্তরের সততার শর্তারোপ করা হয়েছে, যা তাকে নামায ত্যাগ হতে বিরত রাখতে পারে। কারণ যে ব্যক্তি সততা ও একনিষ্ঠতার সঙ্গে এই সাক্ষ্য দেবে তার সততা ও একনিষ্ঠতা অবশ্যই তাকে নামায পড়তে বাধ্য করবে । আর এটাই আবশ্যক,কারণ নামায হচ্ছে ইসলামের স্তম্ভ ,আর তা হচ্ছে বান্দা ও তার প্রভুর মাঝে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যম । তাই যদি সে আল্লাহর সন্ত্তষ্টি লাভে সৎ হয় তবে অবশ্যই সেই কাজ করবে যা তার সন্ত্তষ্টি পর্যন্ত পৌছায় । আর এমন কাজ থেকে বিরত থাকবে যে কাজ তার এবং তার প্রভুর মাঝে সম্পর্কে অন্তরায় সৃষ্টি করে । অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি সাক্ষ্য প্রদান করল যে আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ(মা'বুদ) নেই আর মুহাম্মদ রাসূল (সাঃ) হলেন আল্লাহর প্রেরিত রাসূল ।তার এই সততা ও একনিষ্ঠতা অবশ্যই তাকে নামায প্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য করবে (আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ হয়ে ) এবং আল্লাহর রাসুলের (সাঃ)অনুসারী হয়ে যাবে । কারণ এসব হচ্ছে সেই সত্য সাক্ষীর আবশ্যকতার অন্তর্গত ।
পঞ্চম প্রকারঃ সেই সব দলীল সমূহ যা এমন অবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট যে অবস্থায় নামাজ ত্যাগ করা ওযর -আপত্তি গ্রহন যোগ্য। যেমন সেই হাদীস যা ইমাম ইবনে মাজাহ(রহঃ)হোযায়ফা বিন ইয়ামান হতে বর্ণনা করেছেন , তিনি বলেন নবী (সাঃ)বলেছেনঃ ইসলাম মুছে যাবে যেমন কাপড়ের-নকসা আস্তে আস্তে মুছে উঠে যায় -আল-হাদীস । তাতে রয়েছে যে মানুষের মধ্যে বৃদ্ধাদের একটা দল থেকে যাবে তারা বলবেঃ "আমাদের পূর্ব পুরুষদের এই কালেমা 'لا إله إلاالله লাইলাহা ইল্লাল্লাহ' আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই বলতে শুনেছি যার সত্যতা আমরাও স্বীকার করছি । সেলা নামক সাহাবী হোযায়ফাকে বলেনঃ শুধু লাইলাহা ইল্লাল্লাহ-তে কি হবে? অতচ তারা জানেনা যে নামায,রোযা,হজ্জ,যাকাত ও সদকা কি? হোযায়ফা তাদের দিকথেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন । অতঃপর তিনবার সেই কথা পুনুরুক্তি করলেন, হোযায়ফা কোন উত্তর দিলেন না । তৃতীয়বার তার দিকে ফিরে বললেন তিনবারঃ হে সেলা! এই কালেমা তাদেরকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দিবে । অতএব,সে সব মানুষ যাদেরকে এই কলেমা জাহান্নাম হতে মুক্তি দিল,তারা এ বিষয়ে অজ্ঞাত ছিল. কাজেই তারা যতটা পালন করেছে ততটাই তাদের শেষ সমর্থ ছিল । তাদের অবস্থা ঠিক সেই লোকদের মত যারা ইসলামের বিধি-নিষেধ নির্দ্ধারিত হওয়ার পূর্বেই মারা গিয়েছে । অথবা তাদের মত যারা বিধান বাস্তবায়নের শক্তি অর্জনের পূর্বেই মারা গিয়েছে, যেমন কি সেই ব্যক্তি যে তাওহীদ(একত্ববাদের)কালেমার সাক্ষ্য দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিধি-বিধান বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা অর্জনের পূর্বেই মারা গিয়েছে. অথবা দারুল কুফর (কাফেরের দেশে )ইসলাম গ্রহন করল ,অতঃপর ইসলামী (শরীয়তী) বিধি-বিধানের জ্ঞান লাভের সুযোগ পাওয়ার পূর্বেই মারা গেল ।
মোদ্দা কথা এই যে, নামায ত্যাগকারীকে কাফের মনে করে না তারা সে সব দলীল পেশ করে থাকে তা সেসব দলীলের তুলনায় দুর্বল যা নামায ত্যাগকারীকে কাফের বলে প্রমান করে । কারন(যারা কাফের না মনে করে )তারা যে দলীল পেশ করে থাকে সেগুলি যয়ীফ-দুর্বল ও অস্পষ্ট , অথবা যাতে মোটেই তার প্রমান নেই ।বিস্তারিত দেখতে পারেন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর অর্থ ও উহার শর্তসমূহ -------১--৬
অতএব 'নামায ত্যাগকারী কুফরী' এমন বলিষ্ট দলীল দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে গেল যে, যে দলীলের বিরুদ্ধে তার সমতুল্য কোন দলীল নেই । তাহলে তার উপর কুফরী ও মুরতাদ হওয়ার বিধান অবশ্যই প্রযোজ্য হবে ।
চলবে........"দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ"