✘✘ হযরত রাবেয়া বাছরীর ঘটনা ✘✘ ফাজায়েলে



“হজরত রাবেয়া বছরী (রহঃ) একজন বিখ্যাত অলী ছিলেন। তিনি সারা রাত্রি নামাজে কাটাইতেন। ছোবহে ছাদেকের সময় সামান্য একটু ঘুমাইতেন। ফর্শা হইয়া গেলে তাড়াতাড়ি উঠিয়া নিজেকে তিরস্কার করিয়া বলিতেন আর কতকাল শয়ন করিবে? শীঘ্রই করবে সিঙ্গার ফুঁক পর্যন্ত শয়ন করিবার সময় আসিতেছে।” (ফাজায়েলে জিকির ৩৬৪)

এ জাতীয় আরো অনেক ঘটনা তাবলীগী নিসাবে বর্ণিত আছে যা পাঠক মাত্রই ওয়াকিফহাল, যেমন- “এক সৈয়দ সাহেব সম্বন্ধে বর্ণিত আছে বারদিন পর্যন্ত একই অজুতে সমস্ত নামাজ আদায় করিয়াছেন এবং ক্রমাগত পনের বৎসর যাবত শুইবার সুযোগ হয় নাই।” (ফাজায়েলে নামায ১২৩ পৃঃ)

এসব ঘটনা পড়লে মনে হয় নাবী ((সাঃ))-এর ‘ইবাদাতও তাদের নিকট হার মেনেছে। তারা নাবী থেকে বড় ‘ইবাদাতগুজার।

অথচ শায়খ সাহেব নিজেই তার ফাজায়েলে তাবলীগ গ্রন্থের ৩৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন :
{قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ}
“আপনি বলিয়া দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস তবে আমার তাবেদারী কর। উহাতে আল্লাহ তোমাদিকে ভালবাসিবেন ও তোমাদের সমস্ত গোনাহ মাফ করিয়া দিবেন এবং আল্লাহ বড় ক্ষমাশীল ও অতীব দয়ালু।” (সূরা আল-ইমরান : ৩১)

ইহাতে প্রমাণিত হয় যে, যাহারা হুজুরের প্রকৃত অনুসরণকারী তারাহাই আল্লাহওয়ালা এবং যে ব্যক্তি সুন্নতের তাবেদারী হইতে যত দূরে হইবে সে আল্লাহর নিকট হইতেও তত দূরে হইবে। মোফাচ্ছেরীনগণ লিখিয়াছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর মহব্বতের দাবী করে অথচ ছুন্নতের বিরোধিতা করে, সে মিথ্যাবাদী। .........

হুজুর (ছঃ) এরশাদ করেন, আমার সমস্ত উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করিবে কিন্তু যে অস্বীকার করিয়াছে সে নয়। ছাহাবারা প্রশ্ন করেন, যে ব্যক্তি অস্বীকার করিয়াছে তাহার অর্থ কি? হুজুর (ছঃ) বলেন, যে আমার পায়বন্দী করিয়াছে সে বেহেশতে যাইবে আর যে নাফরমানী করিয়াছে সে-ই অস্বীকারকারী। অন্য স্থানে আসিয়াছে, তোমাদের মধ্যে কেহ মুছলমান হইতে পারিবে না যে পর্যন্ত তাহার খাহেশ আমার আনীত দ্বীনের পুরাপুরি তাবেদার না হয়।- (মেশকাত)

আশ্চার্যের বিষয় যাহারা ইসলাম ও মুছলমানের হিতাকাংখী বলিয়া দাবীদার হুজুরের ছুন্নত হইতে বঞ্চিত বিধায় যদি তাহাদের সামনে বলা হয় যে, ইহা ছুন্নতের খেলাফ তবে যেন তাহাদের প্রতি বর্শা নিক্ষেপ করা হইল।
خلاف ﭘيغمبر كسـﮯ ره ﮔـزيد كه هر ﮔـز بمنزل نخواهد رسيد
নবীর তরীকা ভিন্ন যে অন্য পথ অবলম্ব করে, সে কিছুতেই মনজিলে মাকছুদে পৌঁছিতে পারিবে না।” (ফাজায়েলে তাবলীগ ৩৮-৩৯ পৃঃ)

পাঠক লক্ষ্য করুন, উল্লিখিত শায়খের লিখিত ফাজায়েলে তাবলীগ গ্রন্থের ৩৮/৩৯ পৃষ্ঠার বর্ণনা খোদ তার উপর বর্তায় কিনা? এ ধরনের ‘ইবাদাত যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ রসূলের তরীকা পরিপন্থী।

মহান আল্লাহ তাঁর নাবীকে সম্বোধন করে বলেন :
وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَكَ عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَاماً مَحْمُوداً
“তুমি রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়িম করবে; এটা তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য; আশা করা যায় যে, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে।” (সূরা বানী ইসরাইল ৭৯)

এ হুকুমের সাথে সাথে পরিমাণও বর্ণনা করে দিলেন যে, অর্ধেক রাত্রি বা কিছু কম বেশি। (তাফসীর ইবনু কাসীর ১৭শ, ৭৩ পৃঃ)
রাতের সলাত সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে :
عن عائشة رضى الله عنها انها سئلب كيف كانت صلاة النبي صلى الله عليه وسلم في رمضان فقالت ما كان يزيد في رمضان ولا غير على إحدى عشرة ركعة (متفق عليه)
মা ‘আয়িশাহ থেকে বর্ণিত যে, তাকে বিশ্বনাবী ((সাঃ))-এর রমাযানে (রাতের) সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তদুত্তরে তিনি বলেন যে, তিনি ((সাঃ)) রমাযান এবং অন্য সময়ে এগার রাক‘আতের অধিক সলাত আদায় করতেন না।(বুখারী, মুসলিম)

অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন একটু বেশি ‘ইবাদাত করলে ক্ষতিটা কি? তার উত্তরতো খোদ শায়খ সাহেব তার ফাজায়েলে তাবলীগের ৩৮/৩৯ নং পৃষ্ঠায় দিয়েছেন যে, নাবীর তরীকা বহির্ভূত কোন ‘আমাল আল্লাহ্র দরবারে গৃহীত হয় না। তদুপরি বুঝার জন্য আর একটি সহীহ হাদীস উল্লেখ করে শেষ করছি।
عن انس رضى الله عنه قال جاء ثلاثة رجل إلى ازواج النبى صلى الله عليه وسلم يسالون............الخ
আনাস < হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রসূলের ‘ইবাদাত সম্পর্কে অনুসন্ধান করার জন্য তিন ব্যক্তি রসূলের বিবিদের কাছে উপস্থিত হল। অতঃপর রসূলের ‘ইবাদাত সম্পর্কে যখন তাদেরকে জানানো হল, তখন যেন তারা তাকে অপ্রতুল মনে করল এবং আমাদের রসূল ((সাঃ))-এর সাথে কি তুলনা হতে পারে। আল্লাহ স্বয়ং তাঁর অগ্র-পশ্চাতের অপরাধ মাফ করার ঘোষণা দিয়েছেন। অতঃপর তাদের একজন বললেন, আমি সারারাত সলাতে কাটাবো। দ্বিতীয়জন বলল, আমি সারা বৎসরই (সিয়াম) রোযা রাখব এবং কোন দিনই রোযা ত্যাগ করব না। তৃতীয়জন বলল, আমি নারীদের সম্পর্ক হতে দূরে থাকব এবং কখনও বিয়ে-শাদি করব না। হঠাৎ রসূল ((সাঃ)) সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, ওহে! তোমরা কি এসব কথা বলছ? সাবধান! আমি আল্লাহ্র নামে শপথ করে বলছি, আমি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আল্লাহ্কে ভয় করি। এতদসত্ত্বেও আমি কোন কোন দিন রোযা রাখি, আবার কোন কোন দিন (নফল রোযা) ছেড়ে দেই। কখনও সলাত পড়ি, আবার কখনও ঘুমাই। আর আমি বিয়ে-শাদিও করেছি। সুতরাং যে আমার এ সুন্নাত অনুসরণ করবে না সে আমার উম্মাত নয়। (বুখারী, মুসলিম)
এবার আপনারাই বলুন! উপরোল্লিখিত ঘটনাদ্বয় কি শাইখুল হাদীসের লেখা কুরআন হাদীসের প্রতিকূলে নয়? আর রসূলের তরীকা ছেড়ে দিলে সে কি আর মু’মিন মুসলিম থাকতে পারে?

উল্লিখিত আয়াত এবং সহীহ হাদীসের আলোকে কি এ কথা প্রমাণিত হয় না যে, প্রচলিত তাবলীগ অধিকাংশই কুরআন-হাদীস পরিপন্থী? যার অনুমোদন আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল দেননি।

পরিশেষে শায়খের লেখা নাসীহাত উল্লেখপূর্বক ইতি টানছি :
ترسم نه رسى بكعبه اﮮ اعربى * كيى ره كه تو ميرى بتركستان است
অর্থাৎ “হে বেদুঈন পথিক! আমার ভয় হচ্ছে যে, তুমি কা’বা শরীফে পৌঁছাতে পারবে না। কারণ তুমি যে পথে অগ্রসর হচ্ছো তা তুর্কিস্তানের পথ।

مراد ما نصحت بود وكرديم * حوالت باخدا كرديم ورفتيم
আমার উদ্দেশ্য ছিল নাসীহাত করা তা করে গেলাম। তোমাকে আল্লাহ্‌র হাতে সোপর্দ করলাম ও আমি বিদায় নিলাম।”
—