“মৃত্যুর পরেও দান”

“মৃত্যুর পরেও দান”

“আরবের একটি জমাত কোন এক বিখ্যাত দাতার কবর জেয়ারত করিতে যায়। দূরের পথ ছিল তাই সেখানেই তাহারা রাত্রি যাপন করিল। তন্মধ্যে এক ব্যক্তি সেই কবরওয়ালাকে স্বপ্নে দেখিল যে তিনি বলিতেছেন তুমি আমার বখতি উটের পরিবর্তে তোমার উট বিক্রি করিতে পার? (বখতি উট শ্রেষ্ঠ উটকে বলা হয় যাহা মৃত ব্যক্তি ত্যাজ্য সম্পত্তি হিসাবে রাখিয়া গিয়াছিল) লোকটি ঘুমের মধ্যে রাজী হইল ও বেচা বিক্রি ঠিক হইয়া গেল। নিদ্রা হইতে জাগিয়াই দেখে যে তাহার উটের রক্ত প্রবাহিত হইতেছে। উটটি বাঁচার আশা না দেখিয়া সে নিজেই উট জবেহ করিয়া দিল ও সাথীদের সবাইকে গোশ্ত বন্টন করিয়া দিল। খাওয়া দাওয়ার পর তাহারা রওয়ানা হইয়া যখন সামনের মঞ্জিলে পৌঁছিল তখন বখ্তি উটে ছওয়ার হইয়া এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করিল তোমাদের মধ্যে অমুক ব্যক্তি আছে কি? খাবওয়ালা বলিল ইহাত আমার নাম। সে বলিল আপনি কি বকরওয়ালার নিকট কিছু বিক্রি করিয়োছেন? তিনি স্বপ্নের ঘটনা তাহাকে শুনাইলেন। লোকটি বলিল সেটা আমার পিতার কবর ছিল। তিনি স্বপ্নযোগে আমাকে জানাইয়াছেন তুমি যদি আমার আওলাদ হও তবে আমার বখতি উট অমুক নামের ব্যক্তিকে দিয়া দিও। এই বলিয়া সে উট দিয়া চলিয়া গেল। ছাখাওয়াতের ইহাই হইল চরম সীমা, কবরে থাকিয়াও শ্রেষ্ঠ উট বিক্রি করিয়া মেহমানদারী। তবে এই প্রশ্ন অবান্তর যে ইহা কি করিয়া হতে পারে? কেননা আলমে রুহে এইরূপ ঘটনা সংঘটিত হওয়া সম্ভব।” (ফাজায়েলে সাদাকাত ২য় খণ্ড-৩৮৯ পৃঃ)

পাঠক মহোদয়! ঘটনাটি পুনরায় পড়ূন এবং কুরআন হাদীসের সমাধানের দিকে একটু লক্ষ্য করুন। উক্ত ঘটনা কুরআন হাদীস অস্বীকার করার জন্য যথেষ্ট নয় কি ? যখন কুরআন এবং হাদীসের সমন্বিত বা সম্মিলিত মীমাংসা ফায়সালা এই যে, মৃত্যুর পর কেউ এ ধরাতে আর ফিরে আসতে পারে না। শহীদ, যে সাধারণ মুর্দার উপর শ্রেষ্ঠত্ব রাখে, তাকেও দুনিয়াতে পুনরায় প্রত্যাবর্তন করার অনুমতি প্রদান করা হয় না। যদিও সে শাহাদাতের তামান্নায় (আকাঙ্ক্ষায়) দুনিয়াতে বার বার ফিরে আসতে চায়।


সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, মহান আল্লাহ তিনবার শহীদকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার আর কোন কামনা বা বাসনা আছে কি? তোমরা কি কোন কিছুর আকাঙ্ক্ষা কর? উত্তরে শহীদগণ বলবে:
يا رب نريد ارواحنا في اجسادنا حتى نقتل في سبيلك مرة أخرى فلما رآى ان ليس لهم حاجة تركوا (صحيح مسلم)
“হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের আকাক্সক্ষা এই যে, আপনি আমাদের রূহ্কে পুনরায় আমাদের শরীরে ফিরিয়ে দিন, যেন আমরা পুনরায় কতল হই। যখন আল্লাহ দেখবেন এদের কোন অভিলাষ নেই তখন জিজ্ঞেস করা ছেড়ে দিবেন।”(সহীহ মুসলিম- কিতাবুল ঈমান)

জাবির (রাযি.)-এর পিতা আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা করেছিলেনঃ
يارب يحيينى فاقتل فيك ثانية

“হে প্রতিপালক! আমাকে জীবিত করে দিন যেন আমি দ্বিতীয়বার শহীদ হতে পারি।” আল্লাহ বলেনঃ
إنه قد سبق منى انهم لايرجعون (ترمذى ابواب تفسير القران سنده حسن)
“আমার পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত প্রথমেই হয়ে গেছে যে, দুনিয়াতে পুনঃপ্রত্যাবর্তন করতে পারবে না।” (তিরমিযী, তাফসীর অধ্যায়)

সুপ্রিয় পাঠক! ভেবে দেখুন, দুনিয়াতে আসার অনুমতিই যদি না থাকে তাহলে উক্ত বুযুর্গ কি করে দুনিয়াতে এসে উট যবাহ করেন এবং কিভাবে মেহমানকে দা‘ওয়াত করেন। রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ

إذا مات الإنسان انقطع عنه عمله الا من ثلاثة من صدقة جارية أو علم ينتفع به أو ولد صالح يدعوله

অর্থাৎ “যখন কোন মানুষ মারা যায়, তখন তার ‘আমালনামা বন্ধ হয়ে যায় তিনটি ক্ষেত্র ব্যতীতঃ

(১) সদাকায়ে জারিয়া।
(২) ‘ইল্ম, যার দ্বারা অন্যের উপকার হয় এবং
(৩) নেক সন্তান যে, তার জন্য দু‘আ করে।”(সহীহ মুসলিম)

মোটকথা ‘আমালের সিলসিলা যখন বন্ধ হয়ে গেছে, এমতাবস্থায় উক্ত মুর্দা কিভাবে উট যবহ করে এবং কিভাবে মেহমানদারী করে? বলা হয়েছে, এটা আলমে আরওয়াহ অর্থাৎ রূহের জগতের ব্যাপার।

কিন্তু পাঠকগণ, একটু ভেবে দেখুন এটা কোথাকার ঘটনা? আরবের ঐ জামা‘আত কি আলমে আরওয়াতে গিয়েছিল? আর উটের গোশ্ত তারা আলমে আরওয়ায় বসে খেয়েছে কি? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর কি এটাই যে, কথাটা শাইখুল হাদীস লিখেছে। সুতরাং সহীহ হবে (?) পাঠক বলুন, এই উত্তর কি ঠিক ??



[সংগ্রহকৃত ও সংযুক্তঃ মুরাদ বিন আমাজাদের সহীহ আক্বীদার মানদণ্ডে তাবলীগী নিসাব পৃঃ ২৬-২৮]
— with Selina Binte Shiraji and 41 others.