শ্রেষ্ঠ দাতা কে? তাবলীগী-নিসাবের ফাযায়েলে সদাকাতের ২৪নং শিরোনামে জনাব যাকারীয়া লিখেছেন :

শ্রেষ্ঠ দাতা কে?

তাবলীগী-নিসাবের ফাযায়েলে সদাকাতের ২৪নং শিরোনামে জনাব যাকারীয়া লিখেছেন :

“মিশরে একজন নেক বখত লোক ছিলেন। অভাব গ্রস্থ হইয়া কোন লোক তাহার নিকট আসিলে তিনি চাঁদা উসুল করিয়া তাহাকে দিয়া দিতেন। একদা জনৈক ফকীর আসিয়া বলিল আমার একটা ছেলে হইয়াছে। তাহার এছলাহের ব্যবস্থার জন্য আমার নিকট কিছুই নাই। এই ব্যক্তি উঠিল ও ফকীরকে অনেক লোকের নিকট লইয়া গিয়াও ব্যর্থ হইয়া ফিরিল। অবশেষে নৈরাশ হইয়া একজন দানবীর ব্যক্তির কবরের নিকট গিয়া সমস্ত কথা তাহাকে শুনাইল। অতঃপর সেখান হইতে ফিরিয়া নিজের পকেট হইতে একটা দীনার বাহির করিয়া উহাকে ভাঙ্গাইয়া অর্ধেক নিজে রাখিল ও বাকী অর্ধেক ফকীরকে কর্জ দিয়া বলিল ইহা দ্বারা প্রয়োজন মিটাও। আবার তোমার হাতে পয়সা আসিলে আমার পয়সা আমাকে দিয়া দিও। রাত্রি বেলায় সেই লোকটি কবরওয়াকে স্বপ্নে দেখিল যে সে বলিতেছে আমি তোমার যাবতীয় অভিযোগ শুনিয়াছি কিন্তু বলিবার অনুমতি দেওয়া হয় নাই। তুমি আমার ঘরে গিয়া পরিবারস্থ লোকদিগকে বল ঘরের অমুক অংশে যেখানে চুলা রহিয়াছে, উহার নীচ একটা চীনা বরতনে পাঁচ শত আশরাফী রহিয়াছে তাহারা যেন উহা উঠাইয়া সেই ফকীরকে দিয়া দেয়। ভোর বেলায় সেই কবরওয়ালার বাড়ীতে গেল ও তাহাদিগকে তাহার স্বপ্নের কথা শুনাইল। তাহারা বাস্তবিকই সেখান হইতে পাঁচশত আশরাফী উঠাইয়া ফকীরকে দিয়া দিল। লোকটি বলিল ইহা একটি স্বপ্ন মাত্র। শরীয়ত মতে ইহাতে আমল জরুরী নয়। তোমরা ওয়ারিশ হিসাবে ইহা তোমাদের হক্ব। তারা বলিল, বড়ই লজ্জার ব্যাপার, তিনি মৃত হইয়া দান করিতেছেন আর আমরা জীবিত হইয়াও দান করিব না? অতএব সে টাকা লইয়া ফকীরকে দিয়া দিল ফকীর সেখান হইতে একটা দীনারের অর্ধেক নিজে রাখিল ও অর্ধেক তাহার ঋণ পরিশোধ করিল, তারপর বলিল আমার জন্য একদীনারই যথেষ্ট বাকীগুলি দিয়া আমি কি করিব? সে ঐ গুলি ফকীরদের মধ্যে বণ্টন করিয়া দিল। ছাহেবে এতহাফ্ বলেন, এখানে চিন্তা করিবার বিষয় এই যে সবচেয়ে বড় দাতা হইল কে? কবর ওয়ালা না তার ওয়ারিশান? না ফকীর? আমাদের নিকটতো ফকীরই সবচেয়ে বড় দাতা, সে যেহেতু নিজে ভীষন অভাব গ্রস্থ হওয়া সত্ত্বেও অর্ধেক দীনারের বেশী নিল না।” (ফাজায়েলে সাদাকাত ২য় খণ্ড-৩৯৩ পৃঃ)

পাঠকবৃন্দ! চিন্তা করে দেখুন, এ ঘটনাটা কি এই শিক্ষা দেয় না যে, যখন জীবিতদের থেকে নিরাশ হয়ে যাবে আর কোথাও কিছু না পাবে, তখন কোন দানশীলের ক্ববরের নিকট গিয়ে সমস্ত পেরেশানির কথা বর্ণনা কর। কারণ দানশীল ব্যক্তি মৃত্যুর পরেও শুনতে পায় এবং আহ্বানেও সাড়া দিতে পারে। অথচ এটা সম্পূর্ণরূপে কুরআন হাদীস পরিপন্থী বিশ্বাস এবং যা র্শিকে আকবর।

মহান আল্লাহ বলেন :
{إِنَّكَ لاَ تُسْمِعُ الْمَوْتٰى}
“(হে নাবী!) আপনি মুর্দাদের কথা শুনাতে পারবেন না।” (সূরা নাম্ল ৮০)

সম্মানিত পাঠক! সমস্ত সংকীর্ণতা দূর করে হৃদয়কে উদার করে স্বীয় জ্ঞান দ্বারা বিবেককে প্রশ্ন করুন, দেখবেন উপরোক্ত ঘটনাগুলো দ্বারা মাযার পূজার সবক শিখানো হয়েছে, যা প্রকাশ্য র্শিক। যাকে বলে زيارة الاستعانة বা ক্ববরবাসীর নিকট সাহায্য কামনার্থে যিয়ারাত। যেমন যুদ্ধ জয়, নির্বাচনে বিজয়লাভ, কোনরূপ সম্পদ লাভ কিংবা বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য তাদের নিকট সাহায্য কামনা করা র্শিক। শায়খ হাম্মাদ ইবনু ইয়াহ্ইয়া আন্ নাজমী বলেন, র্শিকযুক্ত ক্ববর যিয়ারাত হচ্ছে এমন যিয়ারাত যাতে ক্ববরস্থ ব্যক্তিকে ডাকা হয়। তার কাছে প্রয়োজন পূরণ, বিপদ দূর করা ও সমস্যা সমাধান করার প্রার্থনা করা হয়। এই ধরনের যিয়ারাতকারীই ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত। (তাওহীদ জিজ্ঞাসার জবাব ৬৪ পৃঃ)

এছাড়া এটা زيارة لدعاء الأموات বা সরাসরি ক্ববরবাসীর নিকট কিছু প্রার্থনা করার নিমিত্তে যিয়ারাত বুঝায় অথচ প্রার্থনাও ‘ইবাদাত।

যেমন রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : الدعاء هو العبادة দু‘আ-ই হচ্ছে ‘ইবাদাত। (সহীহ আবূ দাউদ ১৩২৯)

যা শুধু আল্লাহ্র জন্য নিবেদন করতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য তাবলীগী নিসাবের তালিম দ্বারা অনেক মুসলিম এমন ভ্রান্ত বিশ্বাস করে থাকে যে, তথাকথিত জীবিত বা মৃত গাউস-কুতুব, আবদাল ও মৃত সাধারণ ওলী-আউলিয়াদের বিরাট ক্ষমতা রয়েছে। তারা বিপদ-আপদে হস্তক্ষেপ করতে পারে। এজন্য এদের ক্ববরে বা মাযারে গিয়ে সরাসরি প্রার্থনা জানায়। এটা সরাসরি র্শিকে আকবার।

মহান আল্লাহ বলেন :
{وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّن يَدْعُوا مِن دُونِ اللهِ مَن لاَّ يَسْتَجِيبُ لَه” إِلَى يَومِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَن دُعَآائِهِمْ غَافِلُونَ}
অর্থাৎ “ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত কে যে আল্লাহ্র পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে যা ক্বিয়ামাত দিবস পর্যন্তও তার ডাকে সাড়া দিতে পারবে না? এবং এগুলো তাদের প্রার্থনা সম্বন্ধে অবহিতও নয়।” (সূরা আহকাফ ৫)

এজন্য আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের বাতিল উপাস্যদের লক্ষ্য করে বলেন :
{إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِ اللهِ عِبَادٌ أَمْثَالُكُمْ}
“আল্লাহ্কে বাদ দিয়ে তোমরা যাদেরকে ডাকো, তারা সবাই তোমাদের মত বান্দা।”(সূরা আল-আ‘রফ ১৯৪)

আল্লাহ আরো বলেন :
{أَمْوَاتٌ غَيْرُ أَحْيَآءٍ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ}
“তারা মৃত প্রাণহীন এবং কবে পুনরুত্থিত হবে জানে না।” (সূরা নাহাল ২১)

মুশরিকরা যে আউলিয়াদের ডাকে তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন :
{وَإِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُوا لَهُمْ أَعْدَاء وَكَانُوا بِعِبَادَتِهِمْ كَافِرِينَ}
“ক্বিয়ামাতের দিন যখন মানুষকে একত্রিত করা হবে তখন তারা যাদেরকে ডাকত (ওদের যারা ডাকত তাদের) শত্র“তে পরিণত করা হবে।” (সূরা আহকাফ ৬)

পাঠক! এখন প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে তাবলীগী নিসাবের প্রতি বিশ্বাসী এত কোটি কোটি লোক সবাই কি মুশরিক?

তার জবাব আল্লাহর ভাষায় শুনুনঃ {وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللهِ إِلاَّ وَهُم مُّشْرِكُونَ}

“অনেক মানুষ আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে কিন্তু সাথে সাথে র্শিকও করে।"(সূরা ইউসুফ ১০৬)

এরপরেও প্রশ্ন থেকে যায়, এত বড় শাইখুল হাদীস, এত বড় বুযুর্গদের অনুসরণ করছি আমরা এরা কি সব ভ্রান্ত? মনে রাখা দরকার বুযুর্গদের অনুসরণ করছি, মানুষের এসব ওজর ক্বিয়ামাতে মাঠে গ্রহণযোগ্য হবে না।

মহান আল্লাহ বলেন :
{وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِنْ بَنِي آدَمَ مِنْ ظُهُورِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَى أَنْفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوا بَلَى شَهِدْنَا أَنْ تَقُولُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَذَا غَافِلِينَ، أَوْ تَقُولُوا إِنَّمَا أَشْرَكَ آبَاؤُنَا مِنْ قَبْلُ وَكُنَّا ذُرِّيَّةً مِنْ بَعْدِهِمْ أَفَتُهْلِكُنَا بِمَا فَعَلَ الْمُبْطِلُونَ}

“স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক আদম সন্তানদের পৃষ্ঠ হতে তাদের বংশধরদের বের করলেন আর তাদেরকেই সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই?’ তারা বলল, ‘হ্যাঁ; এ ব্যাপারে আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি।’ (এটা এজন্য করা হয়েছিল) যাতে তোমরা ক্বিয়ামাতের দিন না বল যে, ‘এ সম্পর্কে আমরা একেবারেই বে-খবর ছিলাম’। অথবা তোমরা এ কথা না বল যে, ‘পূর্বে আমাদের পূর্ব-পুরুষরাই শিরক্ করেছে আর তাদের পরে আমরা তাদেরই সন্তানাদি (অতএব বুযুর্গদের যা করতে দেখেছি তাই করছি) তাহলে ভ্রান্ত পথের অনুসারীরা যা করেছে তার জন্য কি আপনি আমাদেরকে ধ্বংস করবেন?”
(সূরা আ’রাফ ১৭২-১৭৩)

এই সূত্র থেকে বুঝা গেল যে, গাফিল এবং বুযুর্গ তথা বাপদাদার অনুসরণ করার ওযর ক্বিয়ামাতের মাঠে গ্রহণ করা হবে না।



[সংগ্রহ ও সংযুক্তঃ মুরাদ বিন আমাজাদের সহীহ আক্বীদার মানদণ্ডে তাবলীগী নিসাব পৃঃ ২৮-৩২]
— with Nazrul Islam Jony and 44 others.