✗✗রওজা পাক যিয়ারাত করার আদব ✗✗


শাইখ জাকারিয়া সাহেব তার ফাযায়েলে হজ্বের মধ্যে রওজা পাক যিয়ারাতের ৬১টি আদব লিখেছেন যার অধিকাংশই ভিত্তিহীন ও মনগড়া তন্মধ্যে ১৪ নং এ লিখেছেনঃ
“যখন বহু আকাক্সিক্ষত সেই ‘কোবায়ে খাজরা’ অর্থাৎ সবুজ গম্বজ নজরে পড়িবে, তখন হুজুরের আজমত এবং উঁচু শান ইত্যাদি মনের মধ্যে হাজির করিয়া এই কথা চিন্তা করিবে যে, সারা মাখলুকের সেরা মানব, আম্বিয়ায়ে কেরামের সর্দার ফেরেশতাদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ জাত এই কবরে শায়িত আছেন। আরও মনে করিবে, যেই জায়গা হুজুরে পাক (ছঃ)-এর শরীর মোবারকের সহিত মিলিত আছে, উহা আল্লাহ পাকের আরশ হইতেও শ্রেষ্ঠ, কা’বা হইতেও শ্রেষ্ঠ, কুরছী হইতেও শ্রেষ্ঠ, এমনকি আছমান জমিনের মধ্যে অবস্থিত যে কোন স্থান হইতেও শ্রেষ্ঠ। (তাবলীগী নিসাব ফাজায়েলে হজ্ব- ১৩৩ পৃঃ)

লক্ষ্য করুন ! এতবড় একটা দাবী বিনা দলীলে করা হয়েছে। একথা না আল-কুরআনের কোথাও বর্ণিত হয়েছে আর না কোন সহীহ হাদীসে পাওয়া যায়। তাহলে লেখক এটা কিভাবে জানলেন? দ্বীনের ক্ষেত্রে কি এই রকম বিভ্রান্তিকর কথা বলা যায়? কবরের স্থানটি কা’বা, আরশ ও কুরসীর চেয়ে উৎকৃষ্ট হওয়া খোলাখুলিভাবে বিতর্ক সৃষ্টি করা ও নিকৃষ্ট ধরনের ভুল। এ ধরনের কথা বলা থেকে বিতর থাকা উচিত নয় কি? এর মাধ্যমে আয়াতুল কুরসীর দ্বারা যে আক্বীদাহ মুসলিম হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত তা ভুলণ্ঠিত করে নাবীর মর্যাদাকে আল্লাহ চেয়ে বাড়িয়ে দেয়ার শামিল, যা সম্পূর্ণ তাওহীদ পরিপন্থী। এ বিশ্বাস কি কোন মুসলিম করতে পারে? তা ছাড়া এ জাতীয় আক্বীদাহ রসূলের নির্দেশেরও পরিপন্থী।

তিনি ((সাঃ)) বলেন :
لاَتَطْرُوْنِىْ كَمَا اَطْرَتِ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدٌ فَقُوْلُوْا عَبْدُ اللهِ وَرَسُوْلُهُ (متفق عليه)
“তোমরা আমাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি কর না, যেভাবে নাসারাগণ ঈসা (‘আ.) সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করেছ, (জেয়ারতে মদীনা) আমি তো একজন বান্দা বৈ আর কিছুই নই। তোমরা বল যে, আমি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল। (বুখারী, মুসলিম)

শাইখ তার তাবলীগী নিসাবে ফাজায়েলে হজ্বের অষ্টম পরিচ্ছেদে উল্লেখ করেন :
عن ابن عمر رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من زار قبرى وجبت له شفاعتى (درقطنى)
“হুজুর (ছঃ) এরশাদ করেন, যেই ব্যক্তি আমার জেয়ারত করিল তাহার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হইয়া গেল। (দারে কুরনীর উদ্ধৃতিতে ফাজায়েলে হজ্ব ১১৫ পৃঃ)

এই হাদীসটি সহীহ ইবনে খুযাইমা রিওয়ায়েত করেছেন এবং এটা যঈফ হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করেছেন।(কাশফুল খফা ২/২৪৪ পৃঃ)

আল্লাহ ইবনে তাইমিয়া বলেন, “রসূল ((সাঃ))-এর কবর যিয়ারাত সম্পর্কে সকল হাদীসই যঈফ। দ্বীনের ব্যাপারে সেগুলোর কোনটাতেও বিশ্বাস করা যায় না। এজন্য সহীহ সুনান হাদীসের সঙ্কলকগণ ঐগুলোর মধ্যে কোনটাই উদ্ধৃত করেন নি। ঐগুলোকে যঈফ হাদীস বর্ণনাকারীরাই বর্ণনা করেছেন। যেমন দারাকুতনী, বাযযার প্রভৃতি। (মাজুমুয়ায়ে ফাতওয়া ইবনে তাইমিয়া ১/২৩৪ পৃঃ)

আল্লাহ নাসিরুদ্দীন আলবানী তো ঐ হাদীসকে মওজু (মনগড়া জাল) বলে ঘোষণা করেছেন। (যাঈফুল জামিউস সগীর ৫/২০ পৃঃ আল-আহদীসুয যাঈফা- ১/৬৪ পৃষ্ঠা, গৃহীত মওযু ও যঈফ হাদীসের প্রচলন পৃষ্ঠা- ২৩)

এখন প্রশ্ন হল যে, যদি এটা রসূলের বাণী হত তাহলে এত গুরুত্বপূর্ণ বাণী নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের নিকট কিভাবে অজ্ঞাত রইল? এমন একটি হাদীস যার সমর্থন না আল-কুরআনে আর না সহীহ হাদসি থেকে পাওয়া যায়, তা যঈফ রাবীরা কিভাবে পেল? প্রকৃত অবস্থা হল যে, শাফা‘আত লাভের ব্যাপারে কুরআন অত্যন্ত কঠিন শর্তারোপ করেছে, কিন্তু যঈফ হাদীসগুলো সেটাকে হালকা করে দিয়েছে। বুঝা যায় যে, আক্বীদাহ ‘আমালের পরওয়া না করে শুধু রওযা যিয়ারাত করলেই নাবীর শাফায়াত প্রাপ্ত হবে এবং জান্নাত লাভ করবে। তাছাড়া শাইখ সাহেব উক্ত ফাজায়েলে হজ্বের অষ্টম পরিচ্ছেদের শুরুতেই চার মাযহাবের ওলামায়ে কিরামের ঐকমত্য বর্ণনা করেছেন। তাঁরা নাকি রসূলের কবর যিয়ারাত করা ওয়াজিব লিখেছেন।(প্রগুক্ত- ১১৫)

কোথায় পেয়েছেন তার উদ্ধৃতি তিনি উল্লেখ করেন নাই। হাজ্জের ৫টি ওয়াজিব লিখেছেন (ফিকহু সুন্নায়) তার মধ্যে আমরা রওযা যিয়ারাত পাই নি রবং হকপন্থী উলামায়ে কিরাম রসূলের রওজা যিয়ারাতকে হাজ্জের কোন আরকানের মধ্যে গণ্য করেননি। এটাকে ঐচ্ছিক ব্যাপারে গণ্য করেছেন।

তাছাড়া খোদ ফাজায়েলে হজ্বের অনুবাদক মোঃ শাখাওয়াত উল্লাহ মোমতাজুল মোহাদ্দেসীন, রিসার্চ স্কলার সাহেব হাজ্জের ৬টি ওয়াজিব বর্ণনা করেছেন পাঠকদের জ্ঞাতার্থে আমরা তুলে ধরলাম তার মধ্যেও মাদীনাহ যিয়ারাত ওয়াজিব বলেননি। অথচ শাইখ সাহেব এটা কোথায় পেলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।

১. মুজদালিফার ময়দানে অবস্থান, ২. সাফা মারওয়া পর্বত দ্বয়ের মধ্যে দৌঁড়ানো, ৩. শায়তানকে কঙ্কর মারা, ৪. বিদেশীদের জন্য বিদায়ী তাওয়াফ করা, ৫. মাথা মুড়ানো অথবা চুল ছাঁটা স্ত্রীলোকের চুল হইতে কিছু কর্তণ করা, ৬। কাফ্ফারা বা হজ্জে ত্র“টি কার্যসমূহে বিচ্যুতির জন্য দম বা কুরবারী করা।

উপরোল্লিখিত ফরযও ওয়াজিব কার্যবলী ব্যতীত অন্যান্য সকল আমাল ছুন্নাত ও মোস্তাহাব।(ফাজায়েলে হজ্ব বাংলা ২১৬ পৃঃ)
—