“ইল্‌মে গায়িব বা অদৃশ্যের জ্ঞান”

“ইল্‌মে গায়িব বা অদৃশ্যের জ্ঞান”

“শায়েখ আবু ইয়াকুব ছনুছী (রহঃ) বলেন, আমার একজন মুরীদ আমার নিকট আসিয়া বলিল আমি আগামী কাল জোহরের সময় মরিয়া যাইব। তাহার কথা মত অপর দিন জোহরের সময় সে হারাম শরীফে আসিল ও তওয়াফ করিল এবং কিছু দূরে গিয়া মরিয়া গেল। আমি তাহকে গোছল দিলাম ও দাফন করিলাম। যখন তাহাকে কবরে রাখিলাম তখন সে চোখ খুলিল। আমি বলিলাম মউতের পরেও কি জীবিত থাকা যায় না কি? সে বললি আমি জীবিত আছি এবং আল্লাহর প্রতিটি প্রেমিকই জীবিত থাকেন।” [রওজ] ফাজায়েলে সাদাকাত বাংলা ২য় খণ্ড-৩৩১পৃঃ]

“জনৈক বুজুর্গ বলেন, আমি একজন মুর্দাকে গোছল দিতে ছিলাম। সে আমার বৃদ্ধাঙ্গুলি ধরিয়া ফেলিল, আমি বলিলাম ছাড়িয়া দাও। আমি জানি যে তুমি মর নাই। সে ছাড়িয়া দিল। বিখ্যাত বুজুর্গ এবনুল জালা (রহঃ) বলেন, আমার পিতার যখন এন্তেকাল হয় তাঁহাকে গোছল দিবার জন্য তখতির উপর রাখিতেই তিনি হাসিয়া উঠেন। ইহা দেখিয়া আর কাহাও গোছল দিতে সাহস হইল না। অতঃপর তাঁহার জনৈক বুজুর্গ বন্ধু আসিয়া তাঁহাকে গোছল দিলেন। মৃতুর পরও আনন্দ করার এইরূপ অনেক ঘটনা ছাহেবুর রওজ বর্ণনা করিয়াছেন।” (ফাজায়েলে সাদাকাত বাংলা ২য় খণ্ড-৩৩২ পৃঃ)

দ্বিতীয় আর একটি ঘটনা যা এর সাথে হুবহু মিল আছে :
“আবূ আলী রোদবারী (রহঃ) বলেন, ঈদের দিন একজন ফকির আসিয়া আমাকে বলিল এখানে এমন কোন পরিস্কার জায়গা আছে কি? যেখানে কোন ফকির মরিতে পারে। আমি তাহাকে বাজে কথা মনে করিয়া বলিলাম আস ভিতরে আসিয়া যেখানে ইচ্ছা সেখানে মর। সে ভিতরে আসিয়া অজু করিয়া কয়েক রাকাত নামাজ পড়িল ও মরিয়া গেল। আমি তাহার কাফন দাফনের ব্যবস্থা করি। দাফনের পর আমার খেয়াল হইল দেখতে হবে কাফন হটাইয়া তাহার মুখ খুলিতেই সে চোখ খুলিয়া ফেলিল। আমি বলিলাম মৃত্যুর পরেও জীবন? সে বলিল আমি জীবিত ও আল্লাহর প্রত্যেক আশেকই জীবিত থাকেন। আমি কাল ক্বেয়ামতে স্বীয় প্রতিপত্তিতে তোমার সাহায্য করিব। (ফাজায়েলে সাদাকাত ২য় খণ্ড- ৩৪২ পৃঃ)

পাঠকবৃন্দ! চিন্তা করে দেখুন যে, এ কিস্সাদ্বয় দ্বারা কিভাবে কুরআন হাকীমের ইনকার অস্বীকার অত্যাবশ্যকীয় বা অপরিহার্য হয় বা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন :
{إِنَّ اللهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الأَ<رْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَداً وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ}
“নিশ্চয়ই আল্লাহ্র কাছেই ক্বিয়ামাতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে তিনি তা জানেন। কেউ জানে না আগামীকল্য সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন জায়গায় সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।” (সূরা লুক্বমান ৩৪)

সহীহ বুখারীতে আছে যে, রসূলুল্লাহ (সাঃ) উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করে তার ব্যাখ্যায় বলেন :
{لاَ يَعْلَمُهُنَّ اِلاَّ الله}
“এসব গায়িবের কথা, এগুলো আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। কিন্তু তাবলীগী নিসাবের উপরোক্ত ঘটনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, একজন মুরিদ এই কথা বলল আগামী দিন যুহরের সময় মরে যাব, আর হলও তাই। সে মুরিদ দ্বিতীয় দিন যুহরের সময় মারা গেল। যেন আগামীদিনের ‘ইল্ম বা জ্ঞান ঐ মুরিদের ছিল। দ্বিতীয় ঘটনায় বর্ণনা করা হয়েছে যে, একজন ফকীরের মৃত্যু জ্ঞান পূর্ব থেকেই ছিল। সে তার নিজের মৃত্যুর জন্য নিজেই জায়গা নির্ধারণ করে নিল এবং যথাস্থানে মরল।

এছাড়া দু’টি ঘটনায় এটাও আছে যে, মৃত্যুর পরেও চক্ষু খুলল, কথা বলল এবং বলল, আমি জীবিত এবং আল্লাহ্র প্রত্যেক বান্দা জীবিত থাকে। শুধু কি তাই শাইখুল হাদীস লিখেছেন, “জনৈক বুযুর্গ বলেন, আমি একজন মুর্দাকে গোসল দিচ্ছিলাম, সে আমার বৃদ্ধাঙ্গুলি ধরে ফেলিল, আমি বলিলাম, ছাড়িয়া দাও। আমি জানি যে তুমি মর নাই এটা এক ঘর থেকে অন্য ঘরে স্থানান্তর। সে ছেড়ে দিল।” (ফাজায়েলে সাদাকাত ৩৩১)

পাঠকবৃন্দ! লক্ষ্য করুন, দ্বীন ইসলামে রিওয়ায়াত বর্ণনা করার পদ্ধতি কি এমন? যে জনৈক বুযুর্গ বলেছেন’ অথচ তার নাম নিশানা পর্যন্ত নেই। শেষ পর্যন্ত রিওয়ায়াত বা বর্ণনা করার জন্য কোন উসূল বা মূলনীতি থাকা দরকার। পরবর্তীতে আরও লিখেছেন :

“বিখ্যাত বুযুর্গ ইবনুল জালা (রহ.) বলেন, আমার পিতার যখন এন্তেকাল হয় তাঁহাকে গোছল দিবার জন্য তখতির উপর রাখিতেই তিনি হাসিয়া উঠেন। ইহা দেখিয়া আর কাহারও গোছল দিতে সাহস হইল না। অতঃপর তাঁহার জনৈক বুজুর্গ বন্ধু আসিয়া তাঁহাকে গোছল দিলেন। মৃত্যুর পরও আনন্দ করার এইরূপ অনেক ঘটনা ছাহেবুর রওজ বর্ণনা করিয়াছেন।” (ফাজায়েলে সাদাকাত ২য় খণ্ড- ৩৩১

এ ঘটনা তাবলীগী নিসাবে স্পষ্টত উল্লেখ করা হয়েছে। এর সত্যায়নকারী শাইখুল হাদীস যাকারিয়া। বড়ই আফসোস ও পরিতাপের বিষয় এই ঘটনাগুলির প্রমাণাদিও যদি কুরআন হাদীস থেকে দিত! পাঠক এই ঘটনাগুলি মান্য করলে কুরআনুল কারীমকে সরাসরি অস্বীকার করার মত দৃষ্টতা প্রদর্শন নয় কি?

মালিকুল মুল্ক (রাজাধিরাজ) মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
{إِنَّكَ لا تُسْمِعُ الْمَوْتَى وَلا تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَاءَ إِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِينَ}
“হে নাবী! আপনি আহ্বান (কথা) শুনাতে পারবেন না মৃতদেরকে।” (সূরা আল-নামল ৮০)

অর্থাৎ যারা কবরস্থ হয়ে গেছে, তাদেরকে আপনি শুনাতে পারবেন না। আল্লাহ্‌র নাবী (সাঃ) মুর্দাদের শুনাতে পারেন না। কিন্তু বর্তমানে কোন কোন বুযুর্গ মুর্দাদের শুধু শুনাচ্ছে না, উপরন্তু তাদের সাথে কথোপকথন হচ্ছে এবং মুর্দাও খুব অদ্ভুত মুর্দা সে জিন্দার সঙ্গে কৌতুকও করে এবং হাসি-তামাশাও করে। আর আঙ্গুলও ধরে তারপর যখন এ কথা শুনে যে, ‘তুমি মর নাই’ তখন আঙ্গুল ছেড়ে দেয়।

মহান আল্লাহ বলেন,
{وَمَا يَسْتَوِي الأَ<حْيَاء وَلاَ الأَ<مْوَاتُ}
“আর সমান নয় জীবিত ও মৃত।” (সূরা আল-ফাতির ২২)
কিন্তু এখানে জীবিতও কথা বলে এবং মৃতও কথা বলে। জিন্দাও জীবিত এবং মুর্দাও জীবিত অর্থাৎ উভয়েই সমান।

পাঠক আপনারা বিবেকের কষ্টি পাথরে বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখুন, এরূপ আক্বীদাহ কি উপরোক্ত আয়াতে রাব্বানীর বিরুদ্ধে নয়? আর কুরআন বিরোধী আক্বীদাহ কি র্শিক নয়? জেনে শুনে র্শিকে বিশ্বাসীরা কি মুশরিক নয়? আর যারা উক্ত নিসাবের দা‘ওয়াত দেয়, তারা কি র্শিকের দিকে আহ্বানকারী নয়? যে র্শিক সমূলে উৎপাটিত করার জন্য প্রথম নাবী আদম (আঃ) থেকে শুরু করে শেষ নাবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ (সাঃ) পর্যন্ত সকলকেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের মাঝে প্রেরণ করেছেন, আমাদের র্শিকমুক্ত জীবন পরিচালনা করার জন্য।

অথচ আমরা দেখতে পাচ্ছি সেই র্শিকের দিক নিদের্শনাপূর্ণ বিষয়। এটাই শেষ নয়, শাইখুল হাদীস (রহ.) এরকম আরো অনেক ঘটানা লিখেছেন।আস্তে আস্তে সব প্রকাশ করা হবে ইনশাল্লাহ।



[সংগ্রহ ও সংযুক্তঃ মুরাদ বিন আমাজাদের সহীহ আক্বীদার মানদণ্ডে তাবলীগী নিসাব পৃঃ ২২-২৬]
—