‘☛☛ইল্মে শরীআত ও ‘ইল্মে মারিফতের বিভাজন

‘☛☛ইল্মে শরীআত ও ‘ইল্মে মারিফতের বিভাজন

মাওলানা কারামত আলী নিজ কিতাব যাখীরায়ে কারামতে হেচ্ছায় দুয়মের ২৫ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন- হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, হুজুর (ﷺ)ফরমান যে, আলেমগণ নাবীদের ওয়ারেছ এবং যারা আলেম তারা নাবীদের থেকে এলেমের অধিকারী হইয়াছেন। ‘আম্মিয়াহ্ (‘আঃ)-গণ দুনিয়াতে দু’ প্রকারে এলেম রেখে গিয়েছেন : ইলমে ফেকাহ ও এলমে তাছাউফ। এটা দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, যারা ভিতর উভয় প্রকার এলেম নেই, তিনি আলেম নহেন এবং এ ধরণের ব্যক্তিগণ নাবীগণের ওয়ারেছ হওয়া থেকে বঞ্চিত থাকবেন। তাদের নছীহতে লোকদের দেলে কোনই আছর পয়দা হবে না।

বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) ফরমিয়েছেন-
“নিজে আমল না করে অপরকে নছিহত করা বেকার বকবক করা ছাড়া আর কিছুই নয়।” আফসোস, আমাদের উপর যে, .....
অর্থাৎ- ইসলামের নীতি কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে এবং কামেল মুসলমান আজ কবরে। মারেফাত ছাড়া ওয়াজ ধার শূন্য দায়ের মতো। ঐটা দ্বারা কাটতে চেষ্টা করবে বটে, কিন্তু কাটবে না। উপরোক্ত কথার জন্য অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে যাতে কোনরূাপ সন্দেহ করার অবকাশ নেই (ভেদে মারেফাত- ১১-১২)।

মহান আল্লাহ তার নাবী (ﷺ)কে লক্ষ্য করে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন :
﴿ثُمَّ جَعَلْنَاكَ عَلٰى شَرِيْعَةٍ مِّنَ الْأَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ﴾
অর্থাৎ- “হে নাবী! এরপর আমি আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি শরিয়াত বিধানের উপর, সুতরাং আপনি সেটারই অনুসরণ করুন, (শরিয়াত ছেড়ে মারিফাতের নামে) অজ্ঞদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করবেন না।” (সূরাহ্ আল জা-সিয়াহ্ ৪৫ : ১৮)

সম্মানিত মুসলিম ভাই ও বোনেরা! ইলমে শরিআত ও ইলমে মারেফতের এ বিভাজন ইসলামী শরীআতে আমরা কোথাও খুঁজে পাই না। সাহাবায়ে ক্বিয়ামাতের যুগেও তাবেয়ীনদের যুগে আইমায়ে মুজতাহীদীনদের যুগেও এ জাতীয় বিভাজন আমরা কোথাও দেখিনি। এ মর্মে আমরা আপনাদের সম্মুখে পাক-ভারত উপমহাদেশের তাসাউফ বা ইলমে মারিফাতের গোড়া ও আকবারের ‘দ্বীনে ইলাহীর’ মুকাবিলায় যিনি প্রকৃত দ্বীন ইসলামকে জাগ্রত করেছিলেন। তার বক্তব্য তুলে ধরছি। কারণ তাসাউফ সম্পর্কে তার বক্তব্যের গুরুত্ব আপনি আমি বা অন্য কারো তুলনায় অনেক বেশি। শরীআত ও মারিফত পর্যায়ে তিনি তার ‘মাকতুবা’-এ লিখেছেন : কাল ক্বিয়ামাতের দিন শরীআত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জান্নাতে যাওয়া ও জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার (জন্য ১২৬ তরীকা নয় বরং) একমাত্র শরীআতের বিধান পালনের উপর নির্ভরশীল। নাবী-রসূলগণ যারা গোটা সৃষ্টি লোকের মধ্যে সর্বোত্তম তাঁরা শরীআত কবুল করারই দাওয়াত দিয়েছেন, পরকালীন নাযাতের জন্য শরীআতকেই একমাত্র উপায় বলে ঘোষণা করেছেন। নাবী রসূলদের দুনিয়ায় আগমনের উদ্দেশ্য হলো শরীআতের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা। সবচেয়ে বড় নেকীর কাজ হলো শরীআতকে চালু করা এবং এর আদেশসমূহের মধ্যে একটি হুকুমকে হলেও জিন্দা করার জন্যে চেষ্টা করা। বিশেষ করে এমন সময়, যখন ইসলামের নাম নিশানা মিটে গেছে, কোটি কোটি টাকা আল্লাহর পথে খরচ করাও শরীআতের কোন একটি মাসলাকে রেওয়াজ দেয়ার সমান সওয়াবের কাজ হতে পারে না। (সুন্নাত ও বিদ‘আত- ১৪৩ পৃঃ)

অতঃপর জনাব পীর ইসহাক সাহেব ইলমে মারীফাত প্রমাণ করার জন্য শাইখ ‘আঃ কাদের জিলানীর বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। ----- জনাবের উদ্ধৃতি দ্বারা মনে হয় ইরাকের আরবী ভাষী শাইখ ‘আঃ কাদের জিলানীকে খালেস উর্দু ভাষী পাকিস্তানী বানিয়ে ছাড়িয়েছেন। কারণ জিলানী (রহঃ) ফরমাইয়াছেন বলে তিনি যের বক্তব্য তুলে ধরেছেন তা উর্দূ ভাষায়। জনাব ইসহাক সাহেব-এর লেখার স্টাইলে তাই মনে হয় কারণ তিনি উল্লেখিত বক্তব্যের কোন উদ্ধৃতি দেননি। যাই হোক শরীয়ত প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি ‘আঃ কাদের জিলানির যে বক্তব্য তুলে ধরেছেন তার জন্য তো আল্লাহর শরীআতই যথেষ্ট এ জাতীয় বক্তব্য আল কুরআন ও সহীহ হাদীসে একাধিক স্থানে মওযুদ আছে।

যেমন- সূরাহ্ আস্ সাফ্-এ মহান আল্লাহ বলেন :
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لِمَ تَقُوْلُوْنَ مَا لَا تَفْعَلُوْنَ ۝ كَبُرَ مَقْتًا عِندَ اللهِ أَنْ تَقُوْلُوْا مَا لَا تَفْعَلُوْنَ﴾
“হে মু’মিনগণ! তোমরা যা করো না তা তোমরা কেন বলো? তোমরা যা করো না তোমাদের তা বলা আল্লাহর নিকট অতিশয় অসন্তোষজনক” (সূরাহ্ আস্ সাফ্ ৬১ : ২-৩)।

তিনি আরো বলেন :
﴿أَتَأْمُرُوْنَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنسَوْنَ أَنْفُسَكُمْ وَأَنْتُمْ تَتْلُوْنَ الكِتَابَ أَفَلَا تَعْقِلُوْنَ﴾
“তবে কি তোমরা লোকদেরকে সৎ কার্যের আদেশ করছ এবং তোমাদের নিজেদের সম্বন্ধে বিস্মৃত হচ্ছ-অথচ তোমরা গ্রন্থ পাঠ করো; তবে কি তোমরা হৃদয়ঙ্গম করছ না?” (সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ৪৪)

পাঠক, উপর্যুক্ত আল কুরআনের দলীল দ্বারা বুঝা যায় এর জন্য জাহেরী ৩০ পারার শরীআতই যথেষ্ট বাতেনা ৬০ পারার ভ্রান্ত দলিলের কোন প্রয়োজন নেই। আমরা জানি আল্লাহর শরীয়াত পরিপূর্ণ এর মধ্যে যাই আছে তাই যথেষ্ট। মারিফতের নামে আর আঃ কাদের জিলানিকে উর্দু ভাষী বানানোর দরকার পড়ে না। পাঠক আপনারা অবাক হবে এ দেওবন্দী পীরেরা শুধু আঃ কাদের জিলানীকেই উর্দূভাষী বানান নেই বরং তারা রসূলে আরাবীকেও আযমী উর্দূভাষী বানাতে দ্বিধা করেনি। যেমন- আমাদের চরমোনাই পীরের দাদা পীর রশীদ আহ্মাদ গাঙ্গোহী আল-বারাহী আল ক্বাতিয়াহ’তে দেওবন্দ মাদ্রাসার শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে লিখেছেন, এক বুযূর্গ ব্যক্তির রসূলুল্লাহ (ﷺ) উর্দূতে কথা বলেছেন। বুজুর্গ ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, আপনি আরবদেশীয় লোক হয়ে উর্দূ ভাষা কি করে জানলেন? তিনি উত্তর দিলেন, যখন থেকে আমি দেওবন্দ মাদ্রাসার আলিমদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করি, তখন থেকে আমি উর্দূ ভাষা জানি। এ থেকেই আমরা এ মাদ্রাসার গুরুত্ব বুঝতে পারি। (আল বারাহী আল ক্বাতিয়া ৩০ পৃঃ গৃহীত তাবলীগী জামাআত ও দেওবন্দীগণ- ১৫২ পৃঃ)

সুপ্রিয় পাঠক এবার বুঝলেন তো এ কেমন বিদ্যাপীঠ স্বয়ং রসূল (ﷺ)কেও উর্দূ শিক্ষা দিয়ে ছেড়েছেন। সেখানে আমাদের ইসহাক সাহেব, আঃ কাদের জিলানীকে উর্দূ শিখানো তো আর কোন বড় ব্যাপার নয়!!! “অতঃপর জনাব ইসহাক সাহেব লিখেছেন উপরোক্ত কথার অর্থাৎ- মারিফাতে প্রমাণ করার জন্য অসংখ্য প্রমাণ রহিয়াছে। কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য তিনি এ কিতাবে একটি দলিলও দেখাতে পারেননি। সম্মানিত মুসলিম ভাই। আসল কথা হলো ইলমে শারীয়াত ও ইলমে মারিফাতের এ বিভাজন এর কোন দলীল কুরআন সুন্নাহ’তে কোথাও নেই। তিনি কোথা হতে দেখাবেন।
—