মানুষের উপর জিনের আছর তার প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায় ৮


মানুষের উপর জিনের আছর তার প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায় 


|•|•| জিনের অধিকার রক্ষায় আমাদের করণীয় |•|•|

হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিনদের ব্যাপারে তোমাদের ভাই শব্দ ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ মুসলিম জিনেরা হল আমাদের ভাই। তাদের অধিকার রক্ষায় যত্নবান হতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আল
াইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন।

যেমন হাদীসে এসেছে -
قال علقمة : أنا سألت ابن مسعود . فقلت : هل شهد أحد منكم مع رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة الجن ؟ قال : لا، ولكنا كنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم ذات ليلة. ففقدناه، فالتمسناه في الأودية والشعاب . فقلنا : استطير أو اغتيل، قال فبتنا بشر ليلة بات بها قوم . فلما أصبحنا إذا هو جاء من قبل حراء. قال فقلنا : يا رسول الله ! فقدناك فطلبناك فلم نجدك فبتنا بشر ليلة بات بها قوم . فقال " أتاني داعي الجن . فذهبت معه . فقرأت عليهم القرآن " قال فانطلق بنا فأرانا آثارهم وآثار نيرانهم . وسألوه الزاد . فقال " لكم كل عظم ذكر اسم الله عليه يقع في أيديكم ، أوفر ما يكون لحما . وكل بعرة علف لدوابكم " . فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم " فلا تستنجوا بهما فإنهما طعام إخوانكم". رواه مسلم

আলকামা বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. কে জিজ্ঞেস করলাম, জিনের রাতে আপনাদের মধ্যে কি কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে ছিলেন? তিনি বললেন, না। কিন্তু ঘটনা হল, আমরা এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে ছিলাম। তাকে আমরা পেলাম না। আমরা তাকে বিভিন্ন ঘাটি ও পাহাড়ে খোঁজ করতে থাকলাম। আমরা বলতে লাগলাম তিনি উধাও হয়ে গেছেন অথবা কেউ তাকে অপহরণ করেছে। আসলে সে রাতটি আমরা অত্যন্ত খারাপভাবে কাটিয়েছি। যখন সকাল হল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম হেরা পর্বতের দিক দিয়ে আমাদের কাছে হাজির হলেন। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনাকে হারিয়েছিলাম। অনেক খোঁজা-খোঁজি করেছি। আপনাকে না পেয়ে আমরা খুব দু:চিন্তায় (খুব খারাপ) রাত কাটিয়েছি। তিনি বললেন, জিনদের মধ্য থেকে একজন আহবানকারী এসেছিল আমার কাছে। আমি তার সাথে গেলাম। আমি তাদের কুরআন পাঠ করে শুনালাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নিয়ে সে স্থানের দিকে চললেন। তিনি আমাদের তাদের পদচিহ্নগুলো দেখালেন। তাদের আগুনের আলামতগুলোও দেখালেন। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে তাদের খাদ্য-খাবার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিল। তিনি তাদের বললেন, তোমাদের খাবার হল সে সকল জন্তু জানোয়ারে হাড্ডি যা আল্লাহর নাম নিয়ে জবেহ করা হয়েছে। এর মধ্যে যা তোমাদের নাগালে আসে তা তোমরা খাবে। এটা তোমাদের জন্য গোশ্‌ত বলে গণ্য হবে। আর তোমাদের পালিত জানোয়ারের গোবরও তোমাদের খাদ্য।

এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের বললেন, তোমরা এগুলো দিয়ে কখনো ইসতেনজা (শৌচ কর্মে ব্যবহার) করবে না। কেননা এটা তোমাদের ভাইদের (জিনদের) খাদ্য।

▬♦▬♦▬ হাদীস থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম ▬♦▬♦▬

১- জিনদের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন। হাদীসে বর্ণিত ঘটনার সমর্থনে নিম্নোক্ত আয়াত আমরা উল্লেখ করতে পারি।

وَإِذْ صَرَفْنَا إِلَيْكَ نَفَرًا مِنَ الْجِنِّ يَسْتَمِعُونَ الْقُرْآَنَ فَلَمَّا حَضَرُوهُ قَالُوا أَنْصِتُوا فَلَمَّا قُضِيَ وَلَّوْا إِلَى قَوْمِهِمْ مُنْذِرِينَ . سورة الأحقاف، 29

আর যখন আমি জিনদের একটি দলকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। তারা কুরআন পাঠ শুনছিল। যখন তারা তার কাছে উপস্থিত হল, তখন তারা বলল, চুপ করে শোন। তারপর যখন পাঠ শেষ হল, তখন তারা তাদের কওমের কাছে সতর্ককারী হিসেবে ফিরে গেল। (সূরা আল আহকাফ, আয়াত ২৯)

২- সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে কত ভালোবাসতেন। তাদের মন্তব্য দ্বারাই বুঝা যায় যে, তাকে না পেয়ে সে দিন তারা জীবনের সবচেয়ে খারাপ রাত অতিবাহিত করেছে।

৩- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম রা. কে শিক্ষা দিতে বা তথ্য জানাতে কোন ধরনের কার্পণ্য বা শিথিলতা করেননি। তাঁর বক্তব্যই তাদের জন্য যথেষ্ঠ ছিল। তা সত্বেও তিনি তাদের ঘটনাস্থলে নিয়ে গেছেন। তাদের আলামতগুলো দেখিয়েছেন।

৪- এ হাদীস থেকে জিনদের দুটো খাদ্যের বিষয় জানতে পারলাম। একটি হল হাড্ডি অন্যটি হল গোবর।

৫- তাদের খাদ্য সংরক্ষণ করার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দুটো বস্তুকে শৌচকর্মে ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছেন। এটা জিনদের অধিকার রক্ষার একটি বিষয় হিসাবে গণ্য হলো।

৬- জিনদেরকে আমাদের ভাই বলে তাদের অধিকারের প্রতি লক্ষ্য রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাজেই জিন মানেই আমাদের শত্রু নয়। তাদের মধ্যে যারা মানুষকে কষ্ট দেয় বা বিভ্রান্ত করে তারাই মানুষের শত্রু ।

►ইন-শা-আল্লাহ্ আগামী পোষ্ট এর বিষয় হলো...
•কয়লা কি জিনদের খাদ্য ?

|•|•|কয়লা কি জিনদের খাদ্য ?|•|•|

অনেক ফিকাহের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কয়লা দিয়ে ইস্তেন্জা (শৌচ কর্ম) করা যাবে না। কারণ কয়লা হল জিনদের খাদ্য।

এ প্রসঙ্গে অবশ্য একটি হাদীস এসেছে। হাদীসটি হল :
قدم وفد الجن على رسول الله صلى الله عليه وسلم فق

الوا يا محمد انه أمتك أن يستنجوا بعظم أو روثة أو حممة فإن الله تعالى جعل لنا فيها رزقا قال : فنهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن ذلك.
الراوي: عبدالله بن مسعود المحدث: أبو داود - المصدر: سنن أبي داود - الصفحة أو الرقم: 39
خلاصة الدرجة: سكت عنه [وقد قال في رسالته لأهل مكة كل ما سكت عنه فهو صالح]

জিনদের একটি প্রতিনিধ দল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আসল। তারা বলল, হে মুহাম্মাদ! আপনার উম্মত হাড্ডি, গোবর ও কয়লা দ্বারা ইসতেন্‌জা করে থাকে। অথচ আল্লাহ তাআলা এ গুলোকে আমাদের জন্য খাদ্য হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। হাদীসের বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে এ সকল বস্তু দিয়ে ইসতেন্‌জা করতে নিষেধ করেছেন। (বর্ণনায় : আবু দাউদ)

সনদ সূত্রের দিকে দিয়ে হাদীসের মান হল :
قال الإمام النووي في شرح هذا الحديث في المجموع شرح المهذب :
رواه أبو داود والدارقطني والبيهقي ولم يضعفه أبو داود ، وضعفه الدارقطني والبيهقي
والحممة بضم الحاء وفتح الميمين مخففتين وهي الفحم ، كذا قاله أصحابنا في كتب الفقه ، وكذا قاله أهل اللغة . وقال الخطابي : الحمم الفحم وما أحرق من الخشب والعظام ونحوهما ، قال : والاستنجاء به منهي عنه لأنه جعل رزقا للجن فلا يجوز إفساده علي .

ইমাম নববী রহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় আল মাজমু শারহুল মুহাজ্জাব গ্রন্থে লিখেন, এ হাদীসটি আবু দাউদ, দারে কুতনী ও বায়হাকী বর্ণনা করেছেন। আবু দাউদ হাদীসটিকে যয়ীফ (দুর্বল সুত্র) বলেননি। কিন্তু দারে কুতনী ও বায়হাকী হাদীসটি দুর্বল সুত্রের বলে অভিমত দিয়েছেন।

হাদীসে বর্ণিত হামামা শব্দের অর্থ হল কয়লা। আমাদের সাথীরা ফিকাহ শাস্ত্রে এ রকম লিখেছেন। আর অভিধানবিদরাও এ অর্থ করেছেন।

ইমাম আল খাত্তাবী রহ. বলেন, আল হামাম শব্দের অর্থ আল ফাহাম বা কয়লা। যা সৃষ্টি হয় কাঠ, হাড্ডি ইত্যাদি পোড়ালে। এ দিয়ে ইস্তেনজা করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ এটাকে জিনদের খাদ্য হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই এটা অপবিত্র করা জায়েজ নয়।

জিন যেমন মুসলমান আছে তেমনি আছে কাফের। এ ব্যাপারে জিনদের বক্তব্য আল্লাহ উল্লেখ করেছেন এভাবে :
وَأَنَّا مِنَّا الْمُسْلِمُونَ وَمِنَّا الْقَاسِطُونَ فَمَنْ أَسْلَمَ فَأُولَئِكَ تَحَرَّوْا رَشَدًا
আর নিশ্চয় আমাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক আছে মুসলিম এবং আমাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক সীমালংঘনকারী। কাজেই যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে, তারাই সঠিক পথ বেছে নিয়েছে। (সূরা আল জিন, আয়াত ১৪)

কাজেই মুসলিম জিনেরা সে সকল অধিকার পাবে যা একজন মুসলিম মানুষ ইসলামের কারণে পেয়ে থাকে ।

►ইন-শা-আল্লাহ্ আগামী পোষ্ট এর বিষয় হলো...
•জিনদের কুরআন তেলাওয়াত শোনা ও তার উত্তর প্রদান [ শেষ পর্ব ]