আবু হানিফা কোন মাজহাবের ??


বর্তমানে যারা কোরআন এবং সাহীহ হাদীস এর অনুসরণ করে থাকেন এবং কার অন্ধ অনুসরন করেন না তাদের কে এক ধরনের মানুষরা ‘লা-মাযহাবি’ বলে গালি দিয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেখা দরকার যে কারা নতুন করে ফিতনা ছড়াচ্ছে, এ ব্যাপারে মুহাদ্দিস দেহলভি শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ(র) বলেছেনঃ “হিজরি ৪০০ বছর পর থেকে মাযহাবের অন্ধ অনুসরণ শুরু হয়”
মুহাদ্দিসের এই মন্তব্য হতে আমরা জানতে পারছি, যারা মাযহাব মাযহাব বলে লাফাচ্ছে তাদের জন্ম হিজ
রি ৪০০ বছর এর পরে, কিন্তু জাকে নিয়ে লাফাচ্ছে ইমাম আবু হানিফা(র) তার জন্ম ৮০ হিজরিতে। তাহলে চিন্তা করুন মাযহাবিদের মাথা ঠিক আছে কিনা?
এই মাযহাবের অন্ধ অনুসরন হল মুসলিমদের মধ্যে বিভক্তির অন্যতম কারন। অনেক আগে থেকেই হানাফি আর শাফি মাযহাবের অনুসারিদের মধ্যে মারামারি হয়ে আসছে, তাহলে চিন্তা করুন এই মাযহাবের অন্ধ অনুসরন মুসলিমদের কতইনা ক্ষতি করেছে এবং করছে।
বর্তমানে কোরআন এবং সাহীহ হাদীস এর অনুসরনকারীদের ‘আহলে হাদীস’ বলে হাসি-তামসা করে থাকে কিন্তু দেখুন ‘আহলে হাদীস’ সম্পর্কে ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) বলেছেন, أن الطائفة المنصورة التي يرفع الخذلان عنهم إلى قيام الساعة هم أصحاب الحديث- ‘ক্বিয়ামত পর্যন্ত বিজয়ী বা সাহায্যপ্রাপ্ত দল যাদের থেকে অপমান, লাঞ্ছনা তুলে নেয়া হয়েছে, তারা হচ্ছে আহলেহাদীছ’ (খাছাইছু আহলিল হাদীছ, পৃ. ৫৫)।
তারা বলে থাকে লা-মাযহাবিরা(আহলে হাদীস) পথভ্রষ্ট, কিন্তু এই ব্যাপারে হাফিয ইবনু কাছীর (রহঃ) উল্লেখ করেন যে, هذا شرف لأصحاب الحديث لأن إمامهم النبي صلى الله عليه وسلم- ‘এটি আহলেহাদীছদের সবচেয়ে বড় সম্মান-মর্যাদার বিষয়। কেননা তাদের ইমাম হচ্ছেন নবী করীম (ছাঃ)’ (তাফসীর ইবনে কাছীর, ৩/৭৩পৃ.) চিন্তা করুন, চিন্তা করতে টাকা লাগে না, যেখানে বিশ্ববিখ্যাত মুফাসসির ইবনু কাছীর(র) বলছেনঃ ‘এটি আহলেহাদীছদের সবচেয়ে বড় সম্মান-মর্যাদার বিষয়। কেননা তাদের ইমাম হচ্ছেন নবী করীম (ছাঃ)’ সেখানে এই গোঁড়াপন্থী মাযহাবীরা কি বলছে......।।
এখন আসুন ইমাম আবু হানিফা(র) কে দেখি,যে তিনি কি ছিলেন- মাযহাবীরা বলে থাকে ইমাম আবু হানিফা(র) কেন মাযহাব মানবেন? তিনি তো মুজতাহিদ ছিলেন।
আমার জবাবঃ হ্যাঁ। তিনি মুজতাহিদ ছিলেন।
আমার প্রশ্নঃ তিনি কি জন্মের পর থেকেই মুজতাহিদ ছিলেন?
মাযহাবীর জবাবঃ জন্মের পর থেকে কিভাবে মুজতাহিদ হবেন? বয়স হওয়ার পর জ্ঞান অর্জন করার পর মুজতাহিদ হয়েছেন।
আমার প্রশ্নঃ তার মানে মুজতাহিদ হতে তার কমপক্ষে ২৫-৩০ বছর বয়স হতে হয়েছে, তাই না?
মাযহাবীর জবাবঃ হ্যাঁ।
আমার প্রশ্নঃ তাহলে তার(ইমাম আবু হানিফার) ২৫-৩০ বছর বয়স হওয়ার আগে তিনি মুজতাহিদ ছিলেন না, তাহলে কার মুকাল্লিদ ছিলেন? অর্থাৎ, কার মাযহাব মানতেন?
মাযহাবীর জবাবঃ না, তিনি কারো মুকাল্লিদ ছিলেন না, কোনও মাযহাব মানতেন না, লা-মাযহাবী ছিলেন, গায়েরেমুকাল্লিদ ছিলেন।
আমার প্রশ্নঃ তার মানে তখন ইমাম আবু হানিফা(র) পথভ্রষ্ট ছিলেন?
মাযহাবীর জবাবঃ নাউযুবিল্লাহ, একি কি বলছেন?
আমার প্রশ্নঃ কেন? যারা মাযহাব মানে না, কারো মুকাল্লিদ না তাদেরকে আপনারা পথভ্রষ্ট বলে থাকেন। তাহলে যখন ইমাম আবু হানিফা(র) মুজতাহিদ ছিলেন না, ইমাম ছিলেন না, বরং লা-মাযহাবি ছিলেন, তখন কেন তিনি পথভ্রষ্ট ছিলেন না? কারন আপনারাই তো বলেন যে- লা-মাযহাবীরা পথভ্রষ্ট।
উপোরক্ত আলচোনায়ে দেখা যাচ্ছে ইমাম আবু হানিফা(র) যখন মুজতাহিদ ছিলেন না,ইমাম ছিলেন না তখনও কারো মুকাল্লিদ ছিলেন না বরং লা-মাযহাবী ছিলেন। কিন্তু তখনও তিনি ছিলেন হক পথে,তাহলে আজ কেন আমাদের গালি দেওয়া হচ্ছে শুধু এ কারনে যে-আমরা কারো মুকাল্লিদ না, এবং আমরা লা-মাযহাবি।
যদি আমরা পথভ্রষ্ট হয়ে থাকি তাহলে ইমাম আবু হানিফা(র)ও মুজতাহিদ হওয়ার আগে পথভ্রষ্ট ছিলেন(নাউযুবিল্লাহ), আর যদি তখনও ইমাম আবু হানিফা(র) হক পন্থী হয়ে থাকেন তাহলে আজকের লা-মাযহাবি,আহলে হাদীস,সালাফীরাও হক পন্থী।
এবার আহলে হাদীসদের সম্পর্কে কিছু কথাঃ
১.হাফিয ইবনু কাছীর (রহঃ) উল্লেখ করেন যে, هذا شرف لأصحاب الحديث لأن إمامهم النبي صلى الله عليه وسلم- ‘এটি আহলেহাদীছদের সবচেয়ে বড় সম্মান-মর্যাদার বিষয়। কেননা তাদের ইমাম হচ্ছেন নবী করীম (ছাঃ)’ (তাফসীর ইবনে কাছীর, ৩/৭৩পৃ.)।
২.ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈনে ইযামের যুগে সবাই আহলেহাদীছ ছিলেন। সে যুগে মাযহাবী ফির্কাবন্দী বা দলীয় বিভক্তি ছিল না। ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক বিদ্বান একথা অবগত যে, ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন ও তাবে‘ তাবেঈনদের কেউ কারো মুকাল্লিদ বা অন্ধ অনুসারী ছিলেন না’ (আল-কাওলুল মুফীদ, পৃ. ১৫)।
৩.মুসলমানদের মধ্যে ফিরকাবন্দী বা দলগত ভিন্ন ভিন্ন গন্ডি কায়েম হওয়ার আগে আহলেহাদীছ ও মুসলমান উভয় শব্দের তাৎপর্য এক ও অভিন্ন ছিল। যারা মুসলমান ছিলেন তারা সকলেই ছিলেন আহলেহাদীছ। নিম্নোক্ত হাদীছ এ বিষয়ের প্রোজ্জ্বল প্রমাণ। عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدُرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ كَانَ إِذَا رَأَى الشَّبَابَ قَالَ مَرْحَبًا بِوَصِيَّةِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ! أَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نُوَسِّعَ لَكُمْ فِيْ الْمَجْلِسِ وَأَنْ نُفَهِّمَكُمُ الْحَدِيْثَ، فَإِنَّكُمْ خُلُوْفُنَا وَأَهْلُ الْحَدِيْثِ بَعْدَنَا- প্রখ্যাত ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) কোন মুসলিম যুবককে দেখলে বলতেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অছিয়ত অনুযায়ী আমি তোমাকে সাদর সম্ভাষণ জানাচ্ছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে তোমাদের জন্য মজলিস প্রশস্ত করে দেওয়ার এবং তোমাদেরকে হাদীছ বুঝানোর নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা তোমরা আমাদের স্থলাভিষিক্ত ও পরবর্তী আহলেহাদীছ (মুস্তাদরাকে হাকিম, ১/৮৮পৃ.; শারফু আছহাবিল হাদীছ, পৃ. ২১)।
৪.রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِيْ مَنْصُوْرِيْنَ لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّي تَقُوْمَ السَّاعَةَ- ‘আমরা উম্মতের একটি দল সর্বদা বিজয়ী থাকবে। বিরুদ্ধবাদীরা ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না’ (তাদের অপদস্ত করতে পারবে না) (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী), । উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিছকুল শিরোমণি ইমাম আলী ইবনুল মাদীনী (রহঃ) বলেন, هم أهل الحديث ‘ঐ দলটি হল আহলেহাদীছ’ (তিরমিযী)। ইমাম বুখারীও অনুরূপ বলেছেন। প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ ইয়াযীদ ইবনু হারূণ ও ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) বলেন, إن لم تكن هذه الطائفة المنصورة أصحاب الحديث فلا أدري من هم؟ ‘ঐ বিজয়ী দলটি যদি আহলেহাদীছ না হয় তাহলে আমি জানি না তারা কারা’? (ফাতহুল বারী)।
৫.ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) আরো বলেন, أن الطائفة المنصورة التي يرفع الخذلان عنهم إلى قيام الساعة هم أصحاب الحديث- ‘ক্বিয়ামত পর্যন্ত বিজয়ী বা সাহায্যপ্রাপ্ত দল যাদের থেকে অপমান, লাঞ্ছনা তুলে নেয়া হয়েছে, তারা হচ্ছে আহলেহাদীছ’ (খাছাইছু আহলিল হাদীছ, পৃ. ৫৫)।
মাযহাবী ভাই ও বোনদের বলছি- ‘দয়া করে আমার সাথে রাগ করবেন না’, আপনাদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে ক্ষমা করবেন, আমার উদ্দেশ্য শুধু মাত্র হক কে প্রচার করা।

'বড় পীর' খ্যাত শাইখ আব্দুল কাদির জিলানী আল বাগদাদি (৪৭০-৫৬১) "নাজি" দল হিসাবে আহলে সুন্নাতওয়াল জামাত- এর বর্ণনা দেওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে বিদআতিদের ক্রোধ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন , জেনে রেখো যে বিদআতিদের কিছু নিদর্শন রয়েছে যা দেখে তাদের চেনা যায়। বিদাতিদের লক্ষন হল আহলেহাদিসদের গালি দেওয়া ও বিভিন্ন বাজে নামে তাদেরকে সম্বোধন করা। এগুলো সুন্নাতপন্থিদের বিরুদ্ধে তাদের দলিয় গোরামি ও অন্তরজালার বহিঃপ্রকাশ ভিন্ন কিছুই নয়।কেননা আহলে সুন্নাতওয়াল জামাতের ভিন্ন কোন নাম নেই, একটি ব্যাতিত, আর সেটি হল আহলুল হাদিস (আব্দুল কাদির জিলানী,কিতাবুল গুনিয়াতুত্তালেব িন ১/৯০ পৃ)