গণতন্ত্র না খেলাফত ?

গণতন্ত্র

নূহ আলাইহে ওয়া সাল্লাম থেকে শুরু করে মুহাম্মাদ ছল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত কোন নাবী - রাসূল গণতান্ত্রিক পন্থায় ইসলাম কায়েম করেন নাই। তাঁরা ইসলাম কায়েম করেছেন তাওহীদের দাওয়াত ও ইসলামের জ্ঞান শিক্ষা দান ও আখেরাতের প্রতিফলের খালেছ বিশ্বাসের দাওয়াত প্রচারের মাধেমে একটি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী মুত্তাক্বী ও সুন্নাতের অনুসারী জামাত তৈরী করে শিরকের বিরূদ্ধে জিহাদ করে শেরক উৎখাত করে নিরাপদ ও নির্ভেজাল ইসলামী রাষ্ট্র ক্বায়েম করেছেন। পক্ষান্তরে গণতন্ত্র হল ইসলাম ও কুফর বলতে কিছু নাই জনগণ যা চায় তাই করতে হবে। ইসলাম বিরোধী হোক বা না হোক তাতে যায় - আসে না।

গণতন্ত্রের অর্থ কি ?

গণতন্ত্র হল, জনসাধারণের প্রতিনিধির দ্বারা রাষ্ট্রশাসন। দ্রষ্টব্য : সংসদ বাংলা অভিধান, ১৮৯ পৃষ্ঠা।

ইসলাম জনগণের তন্ত্রকে পরিবর্তন করে ইসলামীক জীবন ব্যাবস্থা শিক্ষা দেবার জন্যে এসেছে। ইসলামের নিদের্শ হল, পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা রাষ্ট্রশাসন করা। গণতান্ত্রীক নীতিতে ইসলামী - অনৈসলামী সমস্ত দল নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবে সেখানে ইসলামী দল পরাজয় বরণ করলে অনৈসলামী দলকেই রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসাতে হবে। গণতান্ত্রীক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কাওকে ইসলামী বিধান পালনে বাধ্য করাতে জনগণ সেটাকে মানব স্বাধীনতা ও মানবাধিকার পরিপন্থি বলে বিরোধীতা করবে। পবিত্র কুরআন ও হাদীছে বা ফিকহের কিতাব সমূহে কোন আইম্মায়ে মুজতাহেদীনগণ গণতন্ত্রকে জায়েয বলেন নাই। জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা সাইয়েদ আবুল আল মওদুদী (রঃ) তিনি তার গ্রন্থ “রাসায়েল ও মাসায়েল” গ্রন্থের (প্রথম খন্ড) ২৯০ পৃষ্ঠায় বলেন যে 

১। গনতন্ত্র রুপে গৃহীত বর্তমান যুগের সংসদ হারাম 
২। গনতন্ত্র রুপে গৃহীত বর্তমান যুগের সংসদে সদস্য হওয়া হারাম 
৩।এবং গনতন্ত্রে ভোট দেয়া হারাম !!! মানুষের নাজাতের জন্যে আল্লাহ ইসলামীক বিধান অবতীর্ণ করেছেন, ইহার বহির্ভূত কোন মতবাদ আল্লাহ গ্রহণ করবেন না

({وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِيناً فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ }آل عمران৮৫ )

যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম (মতবাদ ) গ্রহণ করবে তার থেকে উহা গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখেরাতে ক্ষতি গ্রস্তদের অন্তভুক্ত "। সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৮৫।

গণতন্ত্র যেহেতু মানুষের তৈরি মতবাদ। এটাকে পরিবর্তন করতে পারে জনগণ তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী। কিন্তু ইসলাম কোন অবস্থায় পরিবর্তনশীল নয়। এটা শ্বাসত চিরন্তন অপরিবর্তিত জীবন বিধান। ইসলামী বিধানে কোন পরিবর্তন অগ্রহণ যোগ্য। অতএব, ইসলাম কায়েম হবে তাওহীদী বিশ্বাস স্বীকৃতি এবং আল্লাহর দাসত্ব কবুল ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের আনুগত্যের দ্বারা জীবন পরিচালিত করা। গণতান্ত্রিক অথবা শেরকী ও বিদআতী পন্থায় নয়। গণতন্ত্রে বিরোধী দলের অস্তিত্ব অপিরহার্য কিন্তু ইসলামে বিরোধী দলের কোন অস্তিত্ব নাই।

যেহেতু আল্লাহ বলেছেন :

{وَاعْتَصِمُواْ بِحَبْلِ اللّهِ جَمِيعاً وَلاَ تَفَرَّقُواْ }آل عمران১০৩ )

অর্থ : তোমরা সমবেত ভাবে আল্লাহর কুরআনকে আঁকড়ে ধর এবং দলে দলে বিচ্ছিন্ন হয়োনা "। এবং ইসলামে একটি ঐক্যবদ্ধ জামাত প্রতিষ্ঠা হয়ে গেলে তার বিরোধীতা কারীর জন্যে কঠিন শাস্তি ঘোষণা করা হয়েছে।

যেমন রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন : "فمن أراد أن يفرق أمر هذه الأمة وهي جميع فاضربوه بالسيف كائنا من كان) صحيح مسلم [ جزء ৩ - صفحة ১৪৭৯ ] অর্থ : " যে ব্যক্তি এ উম্মতের ঐক্য বিনষ্ট করতে চায় অথচ তারা ঐক্য বদ্ধ রয়েছে তাকে তলোয়ার দ্বারা হত্যা কর সে যে কেও হোকনা কেন ? "। মুসলিম, হাদীছ নং : ১৮৫২।

পক্ষান্তরে গণতন্ত্র মতবাদে স্বীকৃত বিরোধী দল থাকবে। বিরোধী দলের অবস্থান অপরিহার্য। বরং বিরোধী দল ব্যতীত কোন নির্বাচন গ্রহণ যোগ্য হবেনা। খেলাফাতে রাশেদার যুগে স্বীকৃত কোন বিরোধী দল ছিলনা। আবূ বকর রযি আল্লাহু আনহুর খিলাফতের সময়ে বিরোধী কোন স্বীকৃত দল ছিলনা তবে যারা ছিল ওরা মুনাফেক। গণতান্ত্রিক রীতিতে মিথ্যুক, জুয়াড়ী, দাগাবাজ, নেশাখোড়, যেনা খোড়, সূদ খোড়, গাঁজাখোর, চোর, ডাকাত, ফাসেক্ব পুরুষ ও নারী সবাই নেতা হতে পারবে। সাক্ষ্য দেওয়ার অধিকার রাখে,পক্ষান্তরে ইসলামে এদের সাক্ষের কোন মূল্য নাই।

তার প্রমাণ আল্লাহর বাণী :

" وَأَشْهِدُوا ذَوَيْ عَدْلٍ مِّنكُمْ وَأَقِيمُوا الشَّهَادَةَ لِلَّهِ }الطلاق২

তোমাদের মধ্য থেকে দুইজন নির্ভরযোগ্য লোককে সাক্ষী রাখবে, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাক্ষ্য দিবে সূরা আত ত্বালাক্ব, আয়াত : ২।

শরীয়তের দৃষ্টিতে সর্ব বিষয়ে যারা নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি তারাই সাক্ষ্য দেওয়ার অধিকার রাখে। কেননা উল্ল্যেখিত ফাসেক্ব ও মিথ্যুক লোকদের সাক্ষ্য অগ্রহণ যোগ্য তার প্রমাণে আল্লাহ বলেন :

{وَالَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاء فَاجْلِدُوهُمْ ثَمَانِينَ جَلْدَةً وَلَا تَقْبَلُوا لَهُمْ شَهَادَةً أَبَداً وَأُوْلَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ }النور৪

অর্থ : " যারা সতী - সাধবী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে অতঃপর স্বপক্ষে চারজন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করে না তাদেরকে আশিটি [ ৮০ ] বেত্রাঘাত করবে এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য কবুল করবেনা, এরাই নাফরমান "। সূরা নূর, আয়াত : ৪।

আল্লাহর বাণী থেকে এটা স্পষ্ট প্রমাণ হয় যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে নির্ভরযোগ্য লোকেদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য, আর মিথ্যাবাদীর সাক্ষ্য বিনা কথায় অগ্রহণযোগ্য। অথচ গণতন্ত্রে সবার সাক্ষ্য গ্রহণ্যযোগ্য, এ রীতিতে মুমেন ও মুনাফেক এবং মুত্তাক্বী ও ফাসেকের কোন প্রার্থক্য নাই।

আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ 
وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنْكُمْ وَعَمِلُواْ الصَّـٰلِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِى الاَْرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِى ارْتَضَىٰ لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُمْ مِّن بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْناً يَعْبُدُونَنِى لاَ يُشْرِكُونَ بِى شَيْئاً وَمَن كَفَرَ بَعْدَ ذٰلِكَ فَأُوْلَـٰئِكَ هُمُ الْفَـٰسِقُونَ. 
অর্থ: “তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছো এবং সৎকর্ম করেছো তাদের সাথে মহান আল্লাহ তাআলা ওয়াদা করছেন যে, তিনি তাদেরকে অবশ্যই আবারও খিলাফত দান করবেন, যেমনটি তিনি পূর্ববর্তীদেরকে দিয়েছিলেন। তিনি তোমাদের জন্য তাঁর পছন্দনীয় জীবন বিধানকে সুনিশ্চিত করে দিবেন এবং তোমাদের ভীতিকর পরিস্থিতিকে নিরাপত্তার দ্বারা বদলে দেবেন। (শর্ত হলো) তারা (জীবনের সকল ক্ষেত্রে) কেবল আমারই ইবাদত করবে, আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। তবে এরপরও যারা কুফরী করবে, তারা হলো ফাসিক।” (সূরা নূর, আয়াত ৫৫)

এই আয়াতে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে খিলাফত তাদেরকেই দেয়া হবে যারা সত্যিকারভাবে ঈমান আনয়ন পূর্বক আমালে সালিহ বা সৎকর্ম করবে। 
বর্তমান সময়ে গোটা মুসলিম উম্মাহ এক ভয়াবহ শংকা ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছে। আর এই আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি আমাদের নিরাপত্তা প্রদান করবেন। তিনি এই উম্মতকে খিলাফত ও নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন; এবং এ দুনিয়াতে চূড়ান্তভাবে তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করে দেয়ার ওয়াদা দিচ্ছেন। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণীতে উম্মাহর কাল পরিক্রমা ও খিলাফাহর প্রত্যাবর্তন : 
একটি হাদীস রয়েছে যে হাদীসটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে মুসলিম জাতির কাল পরিক্রমা কেমন হবে তার উপর বিস্তারিত ও সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন। আমাদের প্রত্যেকের উচিত হাদীসটি সতর্কতা ও মনোযোগের সাথে পাঠ করা। হাদীসটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 
‏تَكُونُ النُّبُوَّةَ فِيكُمْ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ تَكُونَ، ثُمَّ يَرْفَعُهَا إِذَا شَاءَ أَنْ يَرْفَعَهَا، ثُمَّ تَكُونُ خِلَافَةً عَلَى مِنْهَاجِ النُّبُوَّةِ، فَتَكُونُ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ تَكُونَ، ثُمَّ يَرْفَعُهَا إِذَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَرْفَعَهَا، ثُمَّ تَكُونُ مُلْكًا ‏عَاضًّا،‏ ‏فَيَكُونُ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَكُونَ، ثُمَّ يَرْفَعُهَا إِذَا شَاءَ أَنْ يَرْفَعَهَا، ثُمَّ تَكُونُ مُلْكًا ‏جَبْرِيَّةً،‏ ‏فَتَكُونُ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ تَكُونَ، ثُمَّ يَرْفَعُهَا إِذَا شَاءَ أَنْ يَرْفَعَهَا، ثُمَّ تَكُونُ خِلَافَةً عَلَى مِنْهَاجِ النُّبُوَّةِ، ثُمَّ سَكَتَ. 
অর্থ: “তোমাদের মধ্যে নবুয়্যত থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন, অতঃপর তিনি তা তুলে নিবেন যখন তা তুলে নেবার ইচ্ছা করবেন। তারপর আসবে নবুয়্যতের আদলের খিলাফত। তা তোমাদের মধ্যে থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ্ ইচ্ছা করবেন, অতঃপর আল্লাহ তা তুলে নিবেন যখন তা তুলে নেবার ইচ্ছা করবেন। তারপর আসবে বংশীয় শাসন, তা থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ্ ইচ্ছা করবেন। অতঃপর তিনি তা তুলে নিবেন যখন তা তুলে নেবার ইচ্ছা করবেন। তারপর আসবে জুলুমের শাসন এবং তা তোমাদের ওপর থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ্ ইচ্ছা করবেন। অতঃপর তিনি তা তুলে নিবেন যখন তা তুলে নেবার ইচ্ছা করবেন। তারপর ফিরে আসবে নবুয়্যতের আদলের খিলাফত।’ এরপর তিনি সা. নীরব থাকলেন। (মুসনাদে আহমদ