হিজাব: মহান আল্লাহর নির্দেশ এবং নারীর মযার্দার প্রতীক


হিজাব: মহান আল্লাহর নির্দেশ এবং নারীর মযার্দার প্রতীক

ভূমিকা: ইসলামী শরীয়তে নারীর প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ শরীয়ত নারীর ইজ্জত-আবরু হেফাযতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। তার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বকে সমুন্নত ও সুউচ্চ করেছে। নারীর পোষাক এবং সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে যে সমস্ত শর্তারোপ করা হয়েছে তা শুধু তাকে সংরক্ষণ করার জন্যইসৌন্দর্যের প্রকাশের মাধ্যমে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হবে তার সকল পথ বন্ধ করার জন্য। এটা নারীর স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করা নয়বরং তাকে লোলুপ দৃষ্টির ছোবল থেকে রক্ষা করা এবং তার পবিত্রতা ও সৌন্দর্যের মানকে সংরক্ষিত করা।
ইসলামী পর্দার মর্যাদা:
হিজাব আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর আনুগত্য: পর্দা আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর আনুগত্য। কেননা তাঁদের আনুগত্য প্রতিটি নর-নারীর উপর ফরয করা হয়েছে। আল্লাহ্‌ বলেনআল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূল কোন আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করার কোন অধিকার নেই। যে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করবেসে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে। (সূরা আহযাব- ৩৬)
  • আল্লাহ্‌ তাআলা নারীদেরকে পর্দার নির্দেশ দিয়ে এরশাদ করেন: ঈমানদার নারীদেরকে বলুনতারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন সাধারণত: প্রকাশমান স্থান ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। (সূরা নূর- ৩১)
  • তিনি আরো বলেন: তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে- মূর্খতা যুগের অনুরূপ (বেপর্দা হয়ে) নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। (সূরা আহযাব- ৩৩)
  • আল্লাহ্‌ আরো বলেনতোমরা তাঁর পত্নীগণের নিকট থেকে কোন কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরা আহযাব- ৫৩)
  • আল্লাহ্‌ আরো বলেনহে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলুনতারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। (সূরা আহযাব- ৫৯)
  • রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেন: নারী গোপন বস্তু(তিরমিযী) অর্থাৎ তাকে ঢেকে রাখতে হবে।
হিজাব নারীর পবিত্রতা: আল্লাহ্‌ তাআলা বলেনহে নবী, আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলুনতারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। (সূরা আহযাব- ৫৯) নারী নিজেকে ঢেকে রাখবে। এতে সে পূত-পবিত্রা সংরক্ষিতা থাকবেআর তবেই তাকে কষ্ট দেয়া হবে নাফাসেক বা খারাপ লোকেরা তাকে উত্যক্ত করতে সুযোগ পাবে না। এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে যেনারীর সৌন্দর্য অপরের কাছে প্রকাশ হলেই তাকে কষ্টফিৎনা ও অকল্যাণের সম্মুখিন হতে হয়।
হিজাব নির্মলতা: আল্লাহ্‌ বলেনতোমরা তাঁর পত্নীগণের নিকট থেকে কোন কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরা আহযাব- ৫৩)
এ আয়াতে পর্দাকে মুমিন নারী-পুরুষের হৃদয়ের পবিত্রতার কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা চক্ষু যখন অবলকণ করেহৃদয় তখন কামনা করে। আর এজন্যই দৃষ্টিপাত না করাটা হৃদয়ের পরিশুদ্ধতার কারণ এবং ফিৎনা থেকে বেঁচে থাকার সুস্পষ্ট মাধ্যম। কেননা পর্দার মাধ্যমে দুর্বল অন্তরের মানুষদের কুপ্রবৃত্তিকে বিনষ্ট করে দেয়া হয়। আর নারী যেন পরপুরুষের সাথে নম্র ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা না বলে। এতে দুবর্ল হৃদয়ের লোকদের অন্তরে লালচ (কুবাসনা) সৃষ্টি হবে। (সূরা আহযাব- ৩২)
হিজাব নারীর আবরণ: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: নিশ্চয় আল্লাহ্‌ লজ্জাশীল গোপনকারী। তিনি লজ্জা ও গোপনীয়তা পসন্দ করেন। তিনি আরো বলেন: যে নারীই নিজ গৃহ ব্যতীত অন্যের গৃহে গিয়ে স্বীয় পোষক খুলবেআল্লাহ্‌ তার থেকে পর্দা ছিঁড়ে ফেলবেন।
পর্দা হল ঈমান: আল্লাহ্‌ তাআলা ঈমানদার নারী ব্যতীত কাউকে পর্দার নির্দেশ দেন নি। এজন্যই তিনি বলেছেন: আপনি মুমিন নারীদেরকে বলুন!…।
একদা বনী তামীম গোত্রের কতিপয় নারী উম্মুল মুমেনীন আয়েশা (রা:) এর নিকট আগমণ করেতাদের পরিধানে ছিল পাতলা পোষাক। তিনি বললেন,তোমরা যদি মুমেনা হয়ে থাকতবে এটা ঈমানদার নারীর পোষাক নয়। আর যদি ঈমানদার না হয়ে থাকতবে এপোষক দ্বারা উপকৃত হতে পারবে।
পর্দা আত্মসম্ভ্রম: আত্মসম্ভ্রমবোধ সম্পন্ন পুরুষের জন্যও পর্দা মানানসইযে পুরুষ নিজ স্ত্রী ও কন্যাদের প্রতি পরদৃষ্টির লোলুপতায় মর্যাদাবোধে আঘাত প্রাপ্ত হয়। জাহেলী যুগে এবং ইসলামের মধ্যেও অনেক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে নারীর মর্যাদা ও সম্ভ্রম রক্ষার জন্য। হযরত আলী (রা:) বলেনআমি শুনলাম তোমাদের নারীরা অনারব কাফের পুরুষদের সাথে বাজারে গিয়ে ভিড় জমায়তোমাদের মধ্যে আত্মসম্ভ্রম বোধ নেইযার মধ্যে আত্মসম্ভ্রম বোধ নেইতার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই।
পর্দাহীনতার বিপদ:
১) পর্দাহীনতা আল্লাহ্‌-রাসূলের নাফারমানী:
যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করবে সে তো নিজেরই ক্ষতি করবে। আল্লাহ্‌র কোনই ক্ষতি হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেন: আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে সে লোক নয় যে (জান্নাতে যেতে) অস্বীকার করে। তাঁরা প্রশ্ন করলেনকে অস্বীকার করেতিনি বললেনযে আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবেআর যে আমার নাফারমানী করবে সেই জান্নাতে যেতে অস্বীকার  করে। (বুখারী)
২) পর্দাহীনতা অভিশাপ:রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,“শেষ যুগে অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু নারী হবেযারা কাপড় পরেও উলঙ্গ থাকবে। তাদের মাথা হবে উটের চুঁড়ার ন্যায়। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ কর। কেননা তারা অভিশপ্ত।”
৩) বেপর্দা হওয়া জাহান্নামীদের কাজ: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেন“জাহান্নামবাসী দুটি দল রয়েছে। যাদেরকে আমি এখনও দেখিনি। একদল এমন লোক যাদের হাতে গরুর লেজের মত লাঠি থাকবে যা দিয়ে তারা লোকদেরকে প্রহার করবে। আর অন্য দল এমন নারী যারা পোষাক পরেও উলঙ্গ থাকে।” (মুসলিম)
৪) বেপর্দা ইবলীসের সুন্নাত:
আদমের সাথে ইবলীসের ঘটনাই আমাদের সামনে ইবলিসের ষড়যন্ত্র উম্মোচন করে দেয়সে কিরূপ আগ্রহী ছিল লজ্জাসস্থান প্রকাশ হওয়া ও পর্দা উম্মোচন করার জন্য। বেপর্দা হচ্ছে শয়তানের মূল লক্ষ্য। আল্লাহ্‌ বলেনহে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে না পারেযেমন সে তোমাদের পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে এমতাবসস্থায় যে তাদের থেকে তাদের পোষাক খুলিয়ে দিয়েছে। যাতে করে তাদের লজ্জাসস্থান প্রকাশ হয়ে পড়ে। (সূরা আরাফ- ২৭)
সুতরাং ইবলিসই হলবেপর্দা ও লজ্জাহীনতার আহ্বানকারী। আর সেই হল আধুনিক নারী মুক্তি নামে আন্দোলনের সবচেয়ে বড় নেতা।
৫) বেপর্দা ইহুদী নীতি: মুসলিম জাতির নৈতিকতা ধ্বংসের ব্যাপারে ইহুদীদের ষড়যন্ত্র কারো কাছে গোপন নয়। বিশেষ করে নারীর ফিৎনার মাধ্যমে। কেননা নারীর সাথে পুরুষের অবাধ মেলামেশা জাতির নৈতিকতা ধ্বংসের প্রধান অস্ত্র। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেনতোমরা দুনিয়া এবং নারী থেকে বেঁচে থাক। কেননা বণী ইসরাঈলের মধ্যে সর্বপ্রথম ফিৎনা ঘটেছিল নারী দ্বারা। (মুসলিম)
বেপর্দা ঘৃণিত জাহেলী রীতি: আল্লাহ্‌ বলেনতোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবসস্থান করবে- মূর্খতা যুগের অনুরূপ (বেপর্দা হয়ে) নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।(সূরা আহযাব- ৩৩)
এ আয়াতে বেপর্দাকে অন্ধকার যুগের বর্বরদের রীতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামজাহেলী যুগের সবধরণের রীতি-নীতিকে পদদলিত করেছেন। তিনি বলেন: মূর্খ যুগের সব বিষয় আমার দুপায়ের নীচে। (বুখারী)
৬) বেপর্দা চারিত্রিক পদস্খলনের অন্যতম মাধ্যম: কেননা এর মাধ্যমে নারী মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ফলে তাদের চরিত্র ধ্বংস হয়। বিশেষ করে যুব সমাজ। কেননা বেপর্দা তাদের ন্ত অন্তরে কুচিন্তার উদ্রেক করেফলে তারা ধাবিত হয় অশ্লীলতার দিকে।
বেপর্দার কারণে নারী হয় সস্তা সামগ্রী। যার বাস্তব প্রমাণ হল বর্তমান প্রচার মাধ্যম। ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য-সামগ্রী বাজারজাত করার ক্ষেত্রে নারীকেই ব্যবহার করে থাকে।
বেপর্দার কারণেই বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নানা ধরণের দূরারোগ্য ব্যাধির সৃষ্টি হয়েছে। যেমন্ত এইডস্‌…। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেন,কোন জাতির মধ্যে যখনই অশ্লীলতার প্রকাশ ঘটবেতখনই তাদের মধ্যে মহামারীদুর্ভিক্ষ.. প্রভৃতি ব্যাপক আকার ধারণ করবেযা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে ছিল না। (ইবনু মাজাহ)
৭) বেপর্দা চোখের ব্যভিচারের পথকে সুগম করে: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেনচোখের ব্যভিচার হচ্ছে দৃষ্টিপাত করা। নি:সন্দেহে দৃষ্টি অবনত রাখার আনুগত্যকে লংঘণ করার কারণেই পৃথিবীতে ফিৎনা-ফাসাদের সূত্রপাত হয়েছেযা আনুবিক বোমা ও ভূমিকম্পের চাইতে বেশী ক্ষতি করে থাকে মানুষের চরিত্রকে। আল্লাহ্‌ বলেনযখন আমি কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন তার অবস্থা সম্পন্ন লোকদেরকে উদ্বুদ্ধ করি,অত:পর তারা পাপাচারে মেতে উঠে। ফলে তাদের উপর দন্ড ন্যায়ত: অবধারিত হয়ে পড়ে এবং তখন আমি তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে থাকি। (সূরা বানী ইসরাঈল- ১৬)
শরীয়ত সম্মত পর্দার জন্য আবশ্যিক শর্ত সমূহ:
১)     নারী তার সমস্ত শরীর ঢেকে দেবে।
২)     পর্দার পোষাকটি যেন নিজেই সৌন্দর্য না হয়।
৩)     পর্দার কাপড় মোটা হবে পাতলা নয়।
৪)     প্রশস্ত ঢিলা-ঢালা হবেসংকীর্ণ হবে না।
৫)     আতর সুবাশ মিশ্রিত হবে না।
৬)     কাফের নারীদের পোষাকের সাথে সদৃশপূর্ণ হবে না।
৭)     পুরুষের পোষাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে না।
৮)     উক্ত পোষাক যেন মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধ হওয়ার উদ্দেশ্যে না হয়।  
শরীয়ত সম্মত পর্দার শর্ত সমূহের কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত .... 
১) নারী তার সমস্ত শরীর ঢেকে দেবে। আল্লাহ বলেন, “ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন সাধারণত: প্রকাশমান স্থান ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (সূরা নূর- ৩১) 
আল্লাহ আরো বলেন, “হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।” (সূরা আহযাব- ৫৯) 
২) পর্দার পোষাকটি যেন নিজেই সৌন্দর্যমন্ডিত না হয়। যাতে ঐ পোষাকের সৌন্দর্য ঢাকার জন্য আরেকটি পর্দার প্রয়োজন পড়ে। সুতরাং পর্দার উপর নকশা ও কারুকার্য খচিত থাকলে বা ঝলমলে পাথর বসানো ও রঙ্গিন হলে সে কাপড় পরিধান করবে না। 
পর্দার কাপড় মোটা হবে। এমন পাতলা যেন না হয় যাতে কাপড়ের অভ্যন্তর থেকেও দেহ বা দেহের কান্তি দৃশ্যমান হয়। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলে দিয়েছেন, “যে সব মেয়েলোক কাপড় পরেও ন্যাংটা, পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট এবং পুরুষদেরও নিজেদের প্রতি আকৃষ্টকারীনী, তারা জাহান্নামী। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না।” মুসলিম, অধ্যায়ঃ পোশাক ও সৌন্দর্য, হা/৩৯৭১। 
একটি বিয়ের কনে আয়েশা (রাঃ) এর কাছে উপস্থিত হল। তার পরিধানে ছিল খুবই স্বচ্ছ পাতলা কাপড়। তখন তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি এ ধরণের পোষাক পরিধান করে, সে সূরা আন-নূরে বিধৃত বিধানের প্রতি ঈমান আনেনি।’ 
৩) পর্দার পোষাক প্রশস্ত ঢিলা-ঢালা হবে। আঁটসাট বা সংকীর্ণ হবে না, যার দরুন দেহের উচ্চ-নীচ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সবই বাইরে দৃশ্যমান হয়ে উঠে, যদিও তা স্বচ্ছ বা পাতলা নয়। উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) বলেন, দেহ্ইয়া কালবী নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে একটি কিবতী (মিছরের তৈরী) মোটা কাপড় উপহার দিয়েছিল। তিনি উহা আমাকে পরিধান করার জন্য প্রদান করলেন। আমি বাড়িতে গিয়ে আমার স্ত্রীকে পরতে দিলাম। নবীজী আমাকে বললেন, কি ব্যাপার তুমি কিবতী কাপড়টি পরিধান কর না? আমি বললাম, আমার স্ত্রীকে উহা পরিয়ে দিয়েছি। তখন রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, তাকে আদেশ কর সে যেন ওটার নীচে অন্য একটি কাপড় পরিধান করে নেয়। কেননা আমার আশংকা হচ্ছে ঐ কাপড়ে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রকাশ হয়ে পড়বে।” (আহমাদ, আলবানী হাদীছটিকে হাসান বলেন।) 
৪) আতর সুবাশ মিশ্রিত হবে না। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, 
أَيُّمَا امْرَأَةٍ اسْتَعْطَرَتْ فَمَرَّتْ عَلَى قَوْمٍ لِيَجِدُوا مِنْ رِيحِهَا فَهِيَ زَانِيَةٌ 
“যে নারী সুগন্ধি মেখে ঘর থেকে বের হয়, অতঃপর মানুষের সম্মুখ দিয়ে হেঁটে চলে- যাতে করে তারা তার সুবাশ অনুভব করে, তবে সেই নারী ব্যভিচারী।” তিরমিযী, নাসাঈ, আবু দাউদ, ছহীহুল জামে হা/২৭০১। 

৫) কাফের নারীদের পোষাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে না। ইসলাম কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য করতে নিষেধ করেছে। ইসলামের নির্দেশ হচ্ছে কাফেরদের বিরোধিতা করা। রাসূলে কারীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ“যে লোক অপর জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত গণ্য হবে।” (আবু দাউদ) 
৬) পুরুষের জন্য নির্দিষ্ট পোষাক মেয়েরা পরবে না। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, 
لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ 
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিশাপ করেছেন এমন পুরুষকে যে নারীর সাথে সাদৃশ্য সৃষ্টিকারী পোষাক পরিধান করে, এবং অভিশাপ করেছেন সেই নারীকে যে পুরুষের সাথে সাদৃশ্য সৃষ্টিকারী পোষাক পরিধান করে। (বুখারী) 
৭) উক্ত পোষাক যেন মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধ হওয়ার উদ্দেশ্যে না হয়। দুনিয়ার সৌন্দর্যে মানুষের মাঝে গর্ব করার উদ্দেশ্যে অতি উচ্চ মূল্যের পোষাক পরিধান করাই হচ্ছে প্রসিদ্ধির পোষাক। রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, 
مَنْ لَبِسَ ثَوْبَ شُهْرَةٍ أَلْبَسَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثَوْبًا ثُمَّ تُلَهَّبُ فِيهِ النَّارُ 
“যে ব্যক্তি প্রসিদ্ধ হওয়ার জন্য বিশেষ কোন পোষাক পরিধান করবে, ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাকে অনুরূপ পোষাক পরিধান করাবেন, অতঃপর তাতে জাহান্নামের আগুন প্রজ্জলিত করা হবে।” আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ্, ছহীহুল জামে হা/ ২৫২৬  

লেখক আব্দুল্লাহিল হাদী,  ও আবদুল্লাহ আল কাফী . 

 রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمُ امْرَأَةً فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَّنْظُرَ إِلَيْهَا إِذَا كَانَ إِنَّمَا يَنْظُرُ إِلَيْهَا لِخِطْبَتِهِ وَإِنْ كَانَتْ لاَ تَعْلَمُ- 
‘যখন তোমাদের কেউ কোন মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিবে, তখন তাকে দেখাতে কোন গুনাহ হবে না। তবে কেবল বিয়ে করার উদ্দেশ্যেই দেখতে হবে, যদিও মেয়ে জানতে না পারে’ [মুসনাদ আহমাদ হা/২৩৬৫০-৫১; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৯৭।] 

অত্র হাদীছে দলীল গ্রহণের দিক হ’ল নবী করীম (ছাঃ) বিশেষভাবে বিয়ের প্রস্তাব দানকারীর জন্য প্রস্তাবিত মেয়ের প্রতি তাকানোকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করেননি। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বিয়ের প্রস্তাবকারী ব্যতীত অন্য কেউ কোন অপরিচিতার দিকে তাকালে সর্বাবস্থায় পাপী হবে। অনুরূপভাবে প্রস্তাবকারী বিয়ের প্রস্তাব ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে তাকালে যেমন আনন্দ ও মজা পাওয়া বা অনুরূপ কোন কারণে তাকালে পাপী হিসাবে গণ্য হবে। যদি কেউ বলে কোন্ অঙ্গের প্রতি তাকাবে এটা তো হাদীছে বর্ণিত হয়নি। সুতরাং এর দ্বারা মেয়ের গ্রীবা ও বক্ষদেশের প্রতি তাকানো অর্থ হ’তে পারে? উত্তরে বলব, এ কথা সকলে জানে যে প্রস্তাবকারীর মূল উদ্দেশ্য মেয়ের সৌন্দর্য দেখা। আর সেটা হ’ল চেহারার সৌন্দর্য। এছাড়া তার অনুগামী অন্যান্য অঙ্গগুলির প্রতি অধিকাংশ সময় লক্ষ্য করা হয় না। প্রস্তাবকারী কেবল চেহারার দিকে তাকায়; কারণ সৌন্দর্য পিয়াসীর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সন্দেহাতীতভাবে সেটাই। (অতএব মুখমন্ডল পর্দার অন্তর্গত)।

২য় দলীল :
عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ قَالَتْ أَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ نُخْرِجَهُنَّ فِىْ يَوْمِ الْفِطْرِ وَالنَّحْرِ. قَالَ قَالَتْ أُمُّ عَطِيَّةَ فَقُلْنَا أَرَأَيْتَ إِحْدَاهُنَّ لاَ يَكُوْنُ لَهَا جِلْبَابٌ قَالَ فَلْتُلْبِسْهَا أُخْتُهَا مِنْ جِلْبَابِهَا- 
উম্মে আতিয়া (রাঃ) বলেন, যখন নবী করীম (ছাঃ) নারীদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার ছালাতে বের হওয়ার নির্দেশ দিলেন। উম্মু সালমা বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! যদি আমাদের মধ্যে কারো চাদর না থাকে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তার বোন তাকে চাদর পরাবে’ [মুসলিম হা/৮৯০; ইবনু মাজাহ হা/১৩০৭।]

অত্র হাদীছ প্রমাণ বহন করে যে, মহিলা ছাহাবীদের অভ্যাস ছিল যে, তাঁরা বড় চাদর না পরে বাইরে বের হ’তেন না। চাদর না থাকলে বের হওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভবও হ’ত না। আর এজন্য তাঁরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট তাঁদের প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করলেন, যখন তাদের ঈদের ছালাতে বের হ’তে বলা হ’ল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অন্য মুসলিম বোনের চাদর পরে ঈদগাহে গমন করতে বলে এ প্রশ্নের সমাধান দিলেন। কিন্তু তাঁদেরকে চাদর ছাড়া বের হওয়ার অনুমতি দেননি, যদিও ঈদগাহে ছালাত আদায়ের জন্য বের হওয়া নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য শরী‘আত সম্মত।
অতএব যখন নারীদের চাদর পরিধান ব্যতীত শরী‘আত সম্মত স্থানে যাবার অনুমতি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দিলেন না, তখন চাদর পরিধান ছাড়া শরী‘আত অননুমোদিত স্থানে যাওয়ার অনুমতি তিনি কি করে দিতে পারেন, যেখানে যেতে তারা বাধ্য নয়? বরং তা হ’ল কেবল বাজারে ঘুরা-ফিরা, পুরুষদের সাথে মিলা-মিশা ও সৌন্দর্য প্রদর্শন করা, যাতে কোন উপকারিতা নেই। আর চাদর পরার নির্দেশই মুখমন্ডল পর্দা করার প্রমাণ বহন করে। আল্লাহই অধিক অবগত। 

৩য় দলীল :
عَائِشَةَ قَالَتْ لَقَدْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّى الْفَجْرَ، فَيَشْهَدُ مَعَهُ نِسَاءٌ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ مُتَلَفِّعَاتٍ فِىْ مُرُوْطِهِنَّ ثُمَّ يَرْجِعْنَ إِلَى بُيُوْتِهِنَّ مَا يَعْرِفُهُنَّ أَحَدٌ- 
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ফজরের ছালাত পড়াতেন। আর মুমিন মহিলাগণ সর্বাঙ্গ চাদরে ঢেকে নবী করীম (ছাঃ)-এর সাথে ফজরের ছালাতে উপস্থিত হ’তেন। অতঃপর ছালাত শেষ করে তারা যার যার বাড়িতে ফিরে যেতেন, আধারের কারণে তাদেরকে চেনা যেত না।[বুখারী হা/৩৭২] 

আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমরা এখন নারীদের যে অবস্থায় দেখছি, যদি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ অবস্থায় তাদের দেখতেন, তাহ’লে তাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করতেন, যেভাবে বনু ইসরাঈলের নারীদের নিষেধ করা হয়েছিল।[মুসলিম হা/৪৪৫; আহমাদ হা/২৪৬৪৬] 

ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকেও এরূপ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীছ দ্বারা দু’ভাবে দলীল গ্রহণ করা যায়-
(ক) পর্দা করা মহিলা ছাহাবীদের অভ্যাস ছিল, যাঁরা ছিলেন উত্তম যুগের, আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানী, শিষ্টাচারী, সৎচরিত্রবান, পূর্ণ ঈমানদার ও সৎআমলকারিণী। তাঁরা সৎ ও শ্রেষ্ঠ ছিলেন, যাঁদের প্রতি ও তাঁদের উত্তম অনুসারীদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন। যেমন আল্লাহ বলেন,
وَالسَّابِقُوْنَ الأَوَّلُوْنَ مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ وَالأَنصَارِ وَالَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُمْ بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُواْ عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ تَحْتَهَا الأَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا أَبَداً ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ- 
‘মুহাজির ও আনছারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারাও তাতে সন্তুষ্ট এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্ত্তত করেছেন জান্নাত, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, যেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে, এটা মহা সাফল্য’ (তওবাহ ১০০)।

মহিলা ছাহাবীদের পথ চলা যদি এমনটি হয়, তাহ’লে আমাদের জন্য কী করে সমীচীন হবে উক্ত পথ থেকে বিচ্যুত হওয়া? যে পথের পথিক ও তাদের একনিষ্ঠ অনুসারীদের জন্য আল্লাহর সন্তোষ রয়েছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمَنْ يُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيْلِ الْمُؤْمِنِيْنَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيْراً- ‘কারো নিকট সৎ পথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যে দিকে সে ফিরে যায় সে দিকেই তাকে ফিরিয়ে দিব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব, আর তা কত মন্দ আবাস’ (নিসা ১১৫)।

(খ) উম্মুল মুমিনীন আয়েশা ও আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) যাঁরা ইলম ও ফিক্বহে ছিলেন দক্ষ, ধর্মীয় জ্ঞানে ছিলেন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এবং আল্লাহর বান্দাদের ব্যাপারে ছিলেন নছীহতকারী। তাঁরা বলছেন যে, বর্তমান নারীদের অবস্থা দেখলে রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে মসজিদে ছালাত আদায় করতে যেতে অবশ্যই নিষেধ করতেন।[মুসলিম হা/৪৪৫; আহমাদ হা/২৪৬৪৬] 

অথচ সেটা ছিল উত্তম যুগ, সে যুগেও নবী করীম (ছাঃ)-এর যামানায় যে অবস্থা ছিল তা পরিবর্তিত হয়ে মাহিলাদের মসজিদে গমন নিষিদ্ধের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। তাহ’লে ১৩ শতাব্দী পরে এসে আমাদের যুগের অবস্থা কেমন হয়েছে? এযুগে সবকিছুর ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, লজ্জাশীলতা কমে গেছে এবং অধিকাংশ মানুষের অন্তরে ধর্মীয় অনুভূতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। আর আয়েশা ও ইবনে মাসঊদ (রাঃ) উভয়ে শরী‘আতের দলীল যে বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছে তা পূর্ণাঙ্গরূপে বুঝেছিলেন যে, প্রত্যেক কাজ যা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে তা নিষিদ্ধ। 

৪র্থ দলীল :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلاَءَ لَمْ يَنْظُرِ اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ. فَقَالَتْ أُمُّ سَلَمَةَ فَكَيْفَ يَصْنَعْنَ النِّسَاءُ بِذُيُوْلِهِنَّ قَالَ يُرْخِيْنَ شِبْرًا. فَقَالَتْ إِذًا تَنْكَشِفَ أَقْدَامُهُنَّ. قَالَ فَيُرْخِيْنَهُ ذِرَاعًا لاَ يَزِدْنَ عَلَيْهِ- 
ইবনে ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গর্বভরে তার কাপড় হেঁচড়িয়ে চলে ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তার দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না’, উম্মে সালমা বললেন, তাহ’লে মহিলারা তাদের অাঁচল কী করবে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘এক বিঘত ঝুলিয়ে পরবে’, উম্মে সালমা বললেন, তবে তো তাদের পা প্রকাশ হয়ে পড়বে। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, ‘এক হাত ঝুলিয়ে দিবে, তার থেকে বেশি করবে না’।[তিরমিযী হা/১৮৩৫; নাসাঈ হা/৫৩৩৬]

এ হাদীছ মহিলাদের পা ঢেকে রাখা ওয়াজিব হওয়ার দলীল। আর এটা মহিলা ছাহাবীদের নিকট খুবই পরিচিত ও জানা ছিল। নিঃসন্দেহে দু’পায়ের গোড়ালী খোলা রাখার ফিতনা, মুখমন্ডল ও দু’কব্জি খোলা রাখার তুলনায় নগণ্যতর। সুতরাং নগণ্য ফিতনার ক্ষেত্রে হুঁশিয়ার করার মাধ্যমে বড় ফিতনা ও হুকুমের দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠতর বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। আর শরী‘আতের হেকমত হচ্ছে ছোট বা হালকা ফিতনায় বিধান হালকা করা এবং গুরুতর ফিতনার ক্ষেত্রে কঠিন করা। এর বিপরীত করলে সেটি হবে আল্লাহর হেকমত ও শরী‘আতের মধ্যে দন্দ্ব সৃষ্টি করা। 

৫ম দলীল :
قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا كَانَ لإِحْدَاكُنَّ مُكَاتَبٌ وَكَانَ عِنْدَهُ مَا يُؤَدِّى فَلْتَحْتَجِبْ مِنْهُ- 
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যদি কোন নারীর নিকট চুক্তিবদ্ধ দাস থাকে আর তার চুক্তিকৃত অর্থ পরিশোধের সামর্থ্য থাকে, তাহ’লে সে নারী তার থেকে পর্দা করবে’ [ইবনু মাজাহ হা/২৬১৬; আবু দাউদ হা/৩৯২৮] 

এ হাদীছ থেকে দলীল গ্রহণের দিক হ’ল, মনিব নারী তার দাসের সামনে ততক্ষণ মুখ খোলা রাখতে পারবে, যতক্ষণ সে তার মালিকানাধীন থাকবে। যখন তার মালিকানার বাইরে চলে যাবে, তখন তার থেকে পর্দা করা ওয়াজিব হবে। কারণ সে তখন পরপুরুষে পরিণত হয়ে গেল। অতএব পরপুরুষ থেকে নারীর পর্দা করা আবশ্যক সাবস্ত হ’ল।

৬ষ্ঠ দলীল :
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ الرُّكْبَانُ يَمُرُّوْنَ بِنَا وَنَحْنُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُحْرِمَاتٌ فَإِذَا حَاذَوْا بِنَا سَدَلَتْ إِحْدَانَا جِلْبَابَهَا مِنْ رَأْسِهَا عَلَى وَجْهِهَا فَإِذَا جَاوَزُوْنَا كَشَفْنَاهُ-
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের নিয়ে আরোহী অতিক্রম করছিল, আর আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে মুহরিম ছিলাম। যখন আরোহী আমাদের বরাবর হ’ত, তখন আমাদের প্রত্যেকে স্ব স্ব চাদর মাথার দিক দিয়ে চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিত। অতঃপর যখন তারা আমাদের অতিক্রম করত, তখন আমরা চাদর সরিয়ে ফেলতাম।[আবু দাঊদ হা/১৫৬২; মিশকাত হা/২৬৯০]

আয়েশা (রাঃ)-এর উক্তি ‘আরোহীরা যখন আমাদের বরাবর হ’ত তখন আমাদের প্রত্যেকে মুখমন্ডলের উপর তার চাদর ঝুলিয়ে দিত’, এটি চেহারা ঢাকা আবশ্যক হওয়ার বড় দলীল। কেননা ইহরাম অবস্থায় চেহারা খুলে রাখা শরী‘আত সম্মত। যদি মুখ খুলে রাখার ব্যাপারে শক্তিশালী নিষেধাজ্ঞা না থাকত, তাহ’লে চেহারা খুলে রাখা ওয়াজিব হ’ত আরোহীদের সামনেও।
উপরোক্ত আলোচনা সুস্পষ্ট। অধিকাংশ আলেমের নিকটে ইহরাম অবস্থায় নারীর চেহারা খুলে রাখা ওয়াজিব। আর ওয়াজিব বিষয়ই কেবল অন্য ওয়াজিব বিষয়ের মুকাবেলা করতে পারে। সুতরাং যদি পরপুরুষের নিকট নারীর পর্দা করা ও চেহারা ঢাকা ওয়াজিব না হ’ত, তাহ’লে ইহরাম অবস্থায় মুখমন্ডল খোলার মতো ওয়াজিব কাজ ত্যাগ করার অনুমোদন দেওয়া হ’ত না।
বুখারী ও মুসলিম সহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে আছে, إِنَّ الْمَرْأَةَ المُحْرِمَةَ تُنْهَى عَنْ النِّقَاب وَالْقُفَّازَيْنِ ‘মুহরিম নারীগণকে হাতমোযা ও নিকাব পরা থেকে নিষেধ করা হয়েছে’, শায়খুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া (রহঃ) বলেন, এটা প্রমাণ করে যে, নিকাব ও হাতমোযার ব্যবহার মহিলাদের মধ্যে খুবই প্রসিদ্ধ ছিল, যারা মুহরিম ছিলেন না। এর দ্বারা তাদের চেহারা ও হাতসমূহ ঢেকে রাখার যৌক্তিকতা প্রমাণ করে।[বুখারী ৪/৪২, নাসাঈ ২/৯-১০, বায়হাক্বী ৫/৪৬-৪৭, আহমাদ ৬০০৩] 

হাদীছের উল্লিখিত এ ছয়টি দলীল মহিলাদের পর্দা করা ও পরপুরুষ থেকে মুখমন্ডল ঢাকা ওয়াজিব হওয়ার প্রমাণ। এর সাথে আমি কুরআনের চারটি দলীল সংযুক্ত করেছি। যাতে কিতাব ও সুন্নাতের দশটি দলীল হ’ল।

[এতদসঙ্গে হাদীছ থেকে আরো কিছু দলীল অনুবাদক কর্তৃক সংযোজিত হ’ল]

(1) عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ أَبِيْ بَكْرٍ الصِّدِّيْقِ قَالَتْ كُنَّا نُغَطِّيْ وُجُوْهَنَا مِنَ الرِّجَالِ، وَكُنَّا نَمْتَشِطُ قَبْلَ ذَلِكَ فِي الاِحْرَامِ- 
(১) আসমা বিনতে আবুবকর (রাঃ) বলেন, আমরা পুরুষদের হ’তে আমাদের চেহারা ঢেকে রাখতাম এবং ইহরামের পূর্বে চিরুনী করতাম।[হাকিম ১/৪৫৪; ইরওয়া হা/১০২৩; ছহীহ ইবনু খুযাইমা হা/২৬৯০]

(২) عَنْ صَفِيَّةَ بِنْتِ شَيْبَةَ قَالَتْ رَأَيْتُ عَائِشَةَ طَافَتْ بِالْبَيْتِ وَهِيَ مُنْتِقَبَةٌ-
(২) ছাফিয়্যাহ বিনতে শায়বাহ বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে নিকাব পরিহিত অবস্থায় কা‘বা ঘর তওয়াফ করতে দেখেছি।[ইবনু সা‘দ ৮/৪৯]

(3) عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ لَمَّا اجْتَلَى النَّبِيُ صلى الله عليه وسلم صَفِيَّةَ رَأَى عَائِشَةَ مُنْتَقِبَةً وَسْطَ النَّاسِ فَعَرَفَهَا- 
(৩) ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন নবী করীম (ছাঃ) ছাফিয়্যাহকে পর্যবেক্ষণ করছিলেন, তখন তিনি আয়েশা (রাঃ)-কে মানুষের মাঝে নিকাব পরিহিত দেখে চিনতে পারলেন।[ইবনে সা‘দ ৮/৯০, ইবনে আসাকির]

(4) عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها زَوْجِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَتْ .... فَبَيْنَا أَنَا جَالِسَةٌ فِىْ مَنْزِلِىْ غَلَبَتْنِىْ عَيْنِىْ فَنِمْتُ، وَكَانَ صَفْوَانُ بْنُ الْمُعَطَّلِ السُّلَمِىُّ ثُمَّ الذَّكْوَانِىُّ مِنْ وَرَاءِ الْجَيْشِ، فَأَدْلَجَ فَأَصْبَحَ عِنْدَ مَنْزِلِىْ، فَرَأَى سَوَادَ إِنْسَانٍ نَائِمٍ، فَأَتَانِىْ فَعَرَفَنِىْ حِيْنَ رَآنِىْ، وَكَانَ يَرَانِىْ قَبْلَ الْحِجَابِ، فَاسْتَيْقَظْتُ بِاسْتِرْجَاعِهِ حِيْنَ عَرَفَنِىْ فَخَمَّرْتُ وَجْهِىْ بِجِلْبَابِىْ 

(৪) আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি আমার তাবুতে ছিলাম, আমার চক্ষু আমার উপর প্রভাবিত হ’ল, আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। ছাফওয়ান বিন মু‘আত্তাল আস-সুলামী সৈন্যদের পিছনে লক্ষ্য রাখছিল। সৈন্যরা রাত্রের প্রথম প্রহরে চলে আসল। তিনি আমার তাবুর নিকট সকাল করলে দেখতে পেলেন ঘুমন্ত কালো একজন মানুষ। অতঃপর তিনি আমার নিকট আসলেন এবং আমাকে দেখে চিনতে পারলেন। তিনি আমাকে পর্দার বিধানের পূর্বে দেখেছিলেন। তিনি আমাকে চিনতে পেরে ‘ইন্নালিল্লাহ’ পড়লে আমি জাগ্রত হই। আমি (তাকে দেখে) আমার চাদর দ্বারা মুখমন্ডল আবৃত করলাম। অন্য বর্ণনায় আছে, পর্দা করলাম (দীর্ঘ হাদীছের অংশ)।[বুখারী হা/৪৭৫০; মুসলিম হা/২৭৭০; ইবনে সাদ ১৮/৬২-৬৬, আহমাদ ৬/১৯৪-১৯৭]