✘আলোচ্য বই ভেদে মারেফাতের তাহ্ক্বীক্ব✘

✘আলোচ্য বই ভেদে মারেফাতের তাহ্ক্বীক্ব✘

‘ভেদ’ শব্দের অর্থ রহস্য। ভিতরের কথা প্রকাশ বা গুপ্ত কথা গোপন তথ্য (ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, বাংলা একাডেমী ৯৭৭ পৃঃ)। ‘মারফাতুন’ অর্থ পরিচিত, পরিচিত বস্তুÑ (আল কাওসার মাওঃ মহিউদ্দিন খান ৫৩২ পৃঃ)। উল্লিখিত শব্দদ্বয়ের প্রথম শব্দ ‘ভেদ’ শব্দটি আরবী নয় বরং ফারসী, হিন্দি, উর্দূ, বাংলা, সব ভাষায় ব্যবহৃত হয়। আর ‘মারফাত’ শব্দটি আরবী। যার অর্থ দাড়ায় পরিচিত বস্তুর প্রকাশ বা রহস্য। বুঝা গেল শব্দদ্বয় এককভাবে আরবী অর্থাৎ- কুরআন হাদীসের পরিভাষা নয় অতএব তা শারী‘আত হওয়ার কথা নয়।

তাহলে মারফাতের গোপন রহস্য বা গোপন কথা বা ভিতরের কথা বলে বিশ্বাস করার মতো কোন কিছু নেই। ইসলামের সকল বিধান প্রকাশ্য। গোপন বা গুপ্ত জ্ঞানের কোন কথা আছে বলে বিশ্বাস করা ইসলাম পরিপন্থী যা বিশ্বাস করলে ঈমান হারা হতে হবে। যা বলে থাকেন মারেফাতের নামে তাসাউফপন্থী ভণ্ড সূফি ও পীর-পুরোহীতরা। তারা বলে থাকে ও দাবী করে কিছু গুপ্ত (মারেফতী) জ্ঞান সিনা বা সিনা অর্থাৎ- সিনায় সিনায় গোপনভাবে রসূল (ﷺ) হয়ে ‘আলী (রাযিঃ)-এর মাধ্যমে শী‘আ ইমাম ও প্রচলিত তাসাউফ পন্থি-সুফি পীরদের নিকট এসেছেÑ নাওযুবিল্লাহ। হাজা বুহতাতুন আজীম!

অথচ আল্লাহ তা‘আলা আল কুরআনে তার নাবী (ﷺ) কে লক্ষ্য করে বলেন,
﴿يَا اَيُّهَا الرَّسُوْلُ بَلِّغْ مَا اُنزِلَ اِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الكَافِرِيْنَ﴾

“হে রসূল! আপনি (তাবলীগ) প্রচার করুন, যা কিছু আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছে আপনি যদি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর রিসালাত পৌঁছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে সুপথ প্রদর্শন করেন না।” (সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫ : ৬৭)

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফিয ইমাদুদ্দীন ইবনু কাসির (রহঃ) বলেন, মহান আল্লাহ এখানে স্বীয় নাবী-কে ‘রসূল’ এ প্রিয় শব্দ দ্বারা সম্বোধন করে বলেছেন, “তুমি মানুষের কাছে আমার সমস্ত আহকাম (গুপ্ত না করে) পৌঁছিয়ে দাও।” রসূলুল্লাহ (ﷺ) করলেনও তাই। সহীহ বুখারীতে রয়েছে, ‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি তোমাকে বলে যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর নাযিলকৃত কোন কিছু গোপন করেছেন, (গুপ্ত জ্ঞান দিয়েছেন) সে মিথ্যা বলেছে।” অন্য বর্ণনায় ‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) হতেই বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, “যদি মুহাম্মাদ (ﷺ) কুরআনের কোন অংশ গোপন করতেন তবে তিনি অবশ্যই ----- এ আয়াতটি গোপন করতেন। ইবনু আবি হাতিম (রাযিঃ) বর্ণনা করেছেন যে, একটি লোক ইবনু ‘আব্বাস (রাযিঃ)-কে বলে, লোকদের মধ্যে এ আলোচনা চলছে যে, আপনাদেরকে রসূল (ﷺ) এমন কতগুলো কথা বলেছেন যা তিনি অন্য লোকদের নিকট প্রকাশ করেননি? (সিনায় সিনায় গুপ্তভাবে এসেছে) তখন তিনি এ আয়াতটি পাঠ করে বলেন : “আল্লাহর শপথ রসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদেরকে (ভেদে মারেফতের নামে) এ রূপ কোন বিশিষ্ট জিনিষের উত্তরাধিকারী করেননি।” এ হাদীসের ইসনাদ খুবই উত্তম। সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, একটি লোক ‘আলী (রাযিঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন, “আপনাদের কাছে কি কুরআন ছাড়া (সেনায় সেনায় মারেফতি) অন্য ওয়াহীও আছে? তিনি উত্তরে বলেন : “যে আল্লাহ শস্য উৎপন্ন করেছেন এবং জীবজন্তু সৃষ্টি করেছেন তার শপথ! না, শুধু এ বুদ্ধি ও বিবেক, যা তিনি কোন লোককে কুরআনের ব্যাপারে দিয়েছেন এবং যা কিছু এ সহীফায় রয়েছে এছাড়া আর কিছুই নেই।” সহীহ বুখারীতে যুহরী (রাযিঃ)-এর উক্তি রয়েছে, তিনি বলেন : “আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে হচ্ছে রিসালাত, অর্থাৎ- অভ্রান্ত ওয়াহী (মারফতের গুপ্তজ্ঞান নয়)। রসূলুল্লাহ (ﷺ)এর দায়িত্ব হচ্ছে প্রচার করা এবং আমাদের কর্তব্য হচ্ছে মেনে নেয়া।” বিদায় হাজ্জের সবচেয়ে বড় সম্মেলনে খুৎবায় সমস্ত উম্মাত অর্থাৎ- সাহাবীগণ এ কথা স্বীকার করেছেন এবং আল্লাহর বাণী (গোপন না করে) সকলের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। (তাফসীর ইবনু কাসীর- ৭ম খণ্ড, ৮৭২-৮৭৩ পৃঃ)

উল্লেখিত তাফসীর দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, ‘আলী (রাযিঃ)-এর মাধ্যমে সিনায় সিনায় যে ইলমের দাবী করা হয় মারেফতের ভেদ নামে তাহা ডাহা মিথ্যা কথা। এতে বিশ্বাস করলে রাসূলের আমানাতদারী প্রশ্ন বিদ্ধ হয় যা প্রকৃত মুসলমান হওয়ার জন্য কখনো কাম্য নয়।