✘ইলিয়াসি তাবলীগ জামাতের আখিরী মুনাজাত ও অন্যান্য দু‘আ✔

বিদাতে অংশগ্রহনের আগে চিন্তা করা উচিত নয় কি আসলে রাসূল সাঃ ধর্মে নামের এই রুপ করেছেন কি না ??
✘ইলিয়াসি তাবলীগ জামাতের আখিরী মুনাজাত ও অন্যান্য দু‘আ✔

আমাদের দেশে প্রতি বৎসর দু’টি স্থানে দু’টি বড় অনুষ্ঠান মহাসমারোহে পালিত হয়। একটি হল বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে আর একটি হল বিশ্ব ইজতেমায়। এক মঞ্জিলে বড় বড় বিত্তবান বা মালদার সওদাগর নিজেরা গরু, ছাগল, উট নিয়ে ওরস করতে যায়। অন্য মঞ্জিলে বড় ছোট সব ধরনের লোকেরা গাট্ঠি-বোচকা নিয়ে এজতেমা করতে যায়। এর একটায় করতে যায় জেকের আর একটায় করতে যায় ফেকের। একটায় করতে যায় আখিরী মুনাজাত আর একটায় করতে যান আখিরী মুলাকত। আমরা জানি আখিরী মানে শেষ কিন্তু তাদের আখিরী মুলাকাত ও মুনাজাত কবে শেষ হবে আল্লাহই ভাল জানেন। অন্যদিকে জাহিল লোকদের মুখে শুনা যায় টঙ্গীতে আখিরী মুনাজাতে অংশ নিলে নাকি তামাম জিন্দেগীর গুনাহ মাফ হয়ে যায় এবং তিনবার অংশগ্রহণ করলে নাকি হজ্জের সাওয়াব পাওয়া যায় (নাউযুবিল্লাহ)। এজন্য দেখা যায়, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও ঢাকার জনগণ সবাই অফিস আদালত বন্দ করে অখিরী মুনাজাতে শরীক হয়। যার ফলে এ বৎসর দেখলাম উত্তরার রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আখিরী মুনাজাতের হজ্জের সাওয়াব অর্জনে। জনশ্র“তি আছে বড় জামা‘আতে দু‘আ কবূল হয় এবং এত বড় ইজতেমায় কার দু‘আ কবূল হবে বলা যায় না। এর মধ্যে কারো উসিলায় আমাদের দু‘আও কবূল হয়ে যেতে পারে এই বকু ভরা আশা সবাই নিয়ে আসে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুধু করে বিরোধী দলের নেত্রী ও বামপন্থী আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণকারীরাও নাকি সেখানে হাজির হন। অথচ আমরা কুরআন-হাদীসে দেখি দু‘আ কবূল হওয়ার জন্য ৬০ লক্ষ ৭০ লক্ষের বিশ্ব ইজতেরমার দরকার হয় না। হালাল উপার্জনের মাধ্যমে হালাল খেয়ে দু‘আ করলে একজনের দু‘আও আল্লাহ শোনেন। নাবীগণ বিপদের মুহূর্তে একাই দু‘আ করেছেন, যেমন : ইবরাহীম, ইউনুস, যাকারিয়া ও অন্যান্য নাবী এবং শেষ নাবী মুহাম্মাদ (সাঃ) ও একা বদর প্রান্তে দু‘আ করেছিলেন, আল্লাহ তা শুনেছিলেন বলে কুরআন- হাদীস সাক্ষী।

যাই হোক আমরা এখন আলোচনা করব কুরআন হাদীসের দৃষ্টিতে তাবলীগী জামা‘আরেত আখেরী মুনাজাত ও অন্যান্য দু‘আ নিয়ে যা তারা করে থাকে তা কতটুকু শরী‘আত সম্মত। প্রচলিত সলাতের পর গাশতের জন্য বের হবার সময় তালীম শেষে, বয়ান শেষে ও বিশ্ব ইজতেমায় শেষ দিনের দু‘আকে এর সমর্থক কথিত আলিমগণ ও জাহিলরা মুনাজাত বলে থাকে। নামকরণের দিক থেকেও এ কাজটি বিদ‘আত। কারণ মুনাজাত বলা হয় দুই বা ততোধিক জনের এমন গোপন কথোপকথনকে যা অন্য আর কেউ শুনবে না ও জানবে না। আরবী সর্ববৃহৎ অভিধান ‘লিসানুল আরবে’مَا يَكُونُ مِن نَّجْوَى ثَلَاثَةٍ إِلاَّ هُوَ رَابِعُهُمْ ‘তিনজনের গোপন পরামর্শ (কথোপকথন) হলে সেখানে আল্লাহ চতুর্থজন থাকেন’।

এ আয়াতে نجوى শব্দের অর্থ লিখতে গিয়ে বলেছেন :
ناجى الرجل مناجاة ونجاء ساره وانتجى القوم وتناجوا تساروا
লোকটির সাথে মুনাজাত করছে অর্থৎ তার সাথে চুপিসারে কথা বলছে। এক সমষ্টি লোক মুনাজাত করছে অর্থাৎ তারা আপোসে চুপিসারে কথা বলছে।

মুনাজাত مناجاة শব্দের উৎপত্তি نجو নাজউন শব্দ থেকে-এর অর্থ উক্ত অভিধানে এসেছে انجو السر بين اثنين আন্নাজউন অর্থ দু’জনের মাঝে গোপনভেদ। (লিসানুল আরাব- ১৪ খণ্ড, ৬৪ পৃঃ; আল-ক্বামূসুল মুহীত্ব, ৪র্থ খণ্ড, ৩৯৬ পৃঃ; গৃহীত সংশয় ও বিভ্রান্তির বেড়াজালে মুনাজাত)

এ অর্থেই নাবী (সাঃ)’র হাদীসও এসেছে :
ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال إذا كانوا ثلاثة فلا يتناجى اثنان دون الثالث (متفق عليه)
রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘কোথাও তিনজন একসাথে থাকলে যেন একজনকে বাদ দিয়ে দু’জনে মুনাজাত (গোপনে কথোপকথন) না করে।’ (সহীহ বুখারী,সহীহ মুসলিম, রিয়াদুস সালিহীন, ৬০৫)

অতএব ইমাম মুক্তাদী মিলে সলাতের পর বা মাইয়্যাতের দাফনের পর বা বক্তা ও শ্রোতা মিলে বতৃতা শেষ হওয়ার পর বিশ্ব ইজতেমায় শেষের দিন উচ্চ শব্দে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা এটা নামকরণের দিক থেকে বিদ‘আত ও অজ্ঞতা। এ অজ্ঞতায় তাবলীগী মুরুব্বী ও আমাদের দেশের বড় ছোট অধিকাংশ আলিম ও বক্তা মুবাল্লিগ প্রায় সকলে নিমজ্জিত (লা হাওলা ওয়ালা কূওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ) এছাড়া যদি আমরা রসূলের আদর্শের দিকে একটু লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাই বিদায় হাজ্জের দিন আরাফার মাঠে লক্ষাধিক সহাবীর বিশ্ব ইজতেমায় বিশ্বনাবী তাঁর সহাবীদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে আখেরী ইজতেমায় আখেরী মুনাজাত করেছেন বলে কোন প্রমাণ পাওয়া পায় না। তাহলে তাবলীগ জামা‘আতের নাবীওয়ালা কাজ বলাটা কি মিথ্যা প্রমাণিত হয় না?

সম্মানিত মুসলিম ভ্রাতাগণ! এবার লক্ষ্য করুন তাবলীগীদের বয়ান ও তালীম এবং গাশতের শুরুতে মুনাজাত সম্পর্কে এক ব্যক্তি লিখিতভাবে প্রশ্ন করেছেন বিশ্ববরেণ্য আলিমে দ্বীন সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উসাইমীনের নিকট তিনি উত্তরে লিখেছেন, সম্মিলিতভাবে দু‘আ করা, নাসীহাতের পর অথবা মাসজিদ থেকে বের হবার সময় কিংবা দা‘ওয়াতে বের হবার সময়, এর কোন ভিত্তি বা দলীল নেই, এটি এক প্রকার বিদ‘আত। এজন্য উচিত হবে লোকজনকে এ কথা বলে বুঝনো যে, যারা এসব করছে তা শরী‘আত সম্মত নয়, তারা যেন শরী‘আত সম্মত কর্মকাণ্ডের দিকে ফিরে আসে। (বিশ্ববরেণ্য আলিমদের দৃষ্টিতে তাবলীগী জামা‘আত ৫৪ পৃঃ)

এবার লক্ষ্য করুন! যে, নিসাব গ্রন্থ নিয়ে আমাদের এই লেখা সেই তাবলীগী নিসাবেই শাইখুল হাদীস সাহেব লিখেছেন, শেষ বয়সে হুজুর আকরাম (সাঃ) এর এই অভ্যাস ছিল যে, যখন তিনি কোন মজলিস হইতে উঠিতেন, তখনই এই দু‘আ পড়িতেন :

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ
কোন ব্যক্তি আরজ করিল, হে রসূলুল্লাহ! আজকাল আপনি এমন একটি দু‘আ পড়ছেন যা ইতোপূর্বে কখনও পড়তেন না। রসূল (সাঃ) এরশাদ করলেন, এটা হল মজলিসের কাফফারা স্বরূপ। অন্য রিওয়ায়াতে আছে, জিবরীল (আ.) আমাকে বলেছে যে, এটা মজলিসের কাফফারা স্বরূপ। (নাসাঈ)

আম্মাজান ‘আয়িশাহ রসূল ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা’ এ দু‘আ খুব বেশি কেন পড়ে থাকেন? রসূল (সাঃ) বলেন, এটা পড়লে মজলিসের মধ্যে আজে বাজে কথার দরূণ যে,সব ভুল হয়েছে ঐ সব মাফ হয়ে যায়। (তাবলীগী নিসাব ফাজায়েলে জিকির ৪৪৭-৪৪৮ পৃঃ)

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তাবলীগী মুরুব্বীরা তাদের নিসাবের এ বিধানটিও মানে না। তা আমি নিজে তাবলীগ জামা‘আতের সাথে থেকে অনেকবার প্রত্যক্ষ করেছি। এছাড়াও আমার পরচিতি আরেক ভাই আছেন যিনি আলেম ও ইলয়িাসি তাবলীগ জামাতে এ থাকা কালিন ১ সাল চিল্লাহ্‌ দিয়েছিলেন।

তার একটি ঘটনা অবগত যিনি নিজে তাবলীগী জামা‘আতের সাথে থাকাকালীন প্রায়ই খুলনা মারকাযে তার বয়ান অথবা রাতে এশার পরে হিকায়েতে সহাবার তালীম করার দায়িত্ব থাকত। একদিন তার এক তাবলীগের সাথী বন্ধুবর জনাব তাফসীর তালীম শেষে উক্ত দু‘আ পড়ে মজলিস শেষ করলেন। তাতে মারকাজ মাসজিদে সমালোচনার ঝড় উঠল।

তার আরো একটি ঘটনা এখানে উল্লেখ না করে পারছি না, তা হল একদিন কার্য উপলক্ষে খুলনায় আল-আরাফাহ ব্যাংকে যোহর সলাত হ’ল। সলাত শেষে তিনি দেখেন তালীম হচ্ছে তাবলীগী নিসাবের, তাই বসে পড়লনে। তালীম করছিলেন ব্যাংকের একজন কর্মচারী, তিনি খুলনা দরুল উলুম মাদরাসা থেকে দাওরা পাশ আলিম। তালীম করছিলেন ফাজায়েলে জিকির থেকে। এক পর্যায় ঠিক উল্লিখিত হাদীস খানা তিনি পড়লেন এবং তালীম শেষে হাত তুলে মুনাজাত শরু করলেন। তিনি তখন আর ঠিক থাকতে পারলনে না। জিজ্ঞেস করালাম এতক্ষণ যা তালীম করলেন, শেষ কাজটি তো তার বিপরীত করলেন। ঐ তালিমদাতা তাকে উত্তর দিলেন হাদীস তো আর একটা নয়, অনেক হাদীস আছে।সেই ভাই তখন বললনে, দলীল বলে দিলে আমি দেখে নেব। কিন্তু ঐ তালমিদাতা আলেম তাকে সন্তোষজনক কোন উত্তর দিলেন না। বরং উত্তেজিত হলেন।

এ হল, ইলয়িাসি তাবলীগ জামা‘আতের নাবীওয়ালা কাজ। আল্লাহ আমাদের হক্বকে হক্ব জেনে তার উপর ‘আমাল করার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!